গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : দীর্ঘ দিন ধরে মরে যাওয়া
কুমার নদ আবারো প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। খর¯্রােতা না হলেও
থাকবে সারা বছর প্রবাহমান। নদীতে চলবে নৌকা, পাওয়া
যাবে সারা বছর মাছ। নদীর পানিতে সেচ সুবিধা পাওয়ায়
দু’পারের শত শত একর জমির বাড়বে উর্বরতা। সুজলা সুফলা
শস্য শ্যামলা হয়ে উঠবে কুমার নদের দু’পাড়ের বিস্তীর্ণ
অঞ্চল। আসছে বৈশাখের মধ্যেই এলাকাবাসী কুমার নদ
থেকে এ সকল সুবিধা পেতে থাকবে। এ জন্য শুরু হয়েছে
কর্মযজ্ঞ। আর ভাদ্র মাসে থাকবে ভরা যৌবনের কুমার।
বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পানি সম্পদ
মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এই
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২৮ কিলোমিটার কুমার নদের
শুরু হচ্ছে বনগ্রাম বানেশ্বরদী হাড়ভাঙ্গা পয়েন্ট থেকে।
নারায়ণপুর-পৈলান পট্টি, নারায়ণপুর-চাঁদহাট, কমলাপুর-
বল্বভদী, টেংরাখোলা-দক্ষিণ চন্ডিবরদী- উত্তর চন্ডিবরদী,
লখাইরচর-বাউশখালি, কৃষ্ণাদিয়া-কামারদিয়া, পাচুড়িয়া-
জয়বাংলা-যদুনন্দী,বলুগা- তেতুলিয়া রূপাপাত পয়েন্টে
পর্যন্ত ২৮ দশমিক ২০ কিলোমিটার খননে মোট ৫ জন
ঠিকাদার কার্যা দেশ পেয়েছেন। ১শ’ ২৫টি এক্সক্লেভেটর
(ভেকু মেশিন) দিনরাত কাজ করে ৪৫ দিন পরে এটা আবার
নৌ-চলাচলসহ পানি প্রবাহের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী
প্রকৌশলী মো: মাঈনুদ্দীন জানান, পদ্মা নদী থেকে
উৎপন্ন হওয়া এর ১শ ২ কিলোমিটারের বেশী কুমার নদের
গোপালগঞ্জ জেলার ২৮ কিলোমিটার অংশে সংস্কার কাজ শুরু
হচ্ছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ইতোমধ্যে
সার্ভে রিপোর্ট জমা হয়েছে, টাক্সফোর্স প্রকল্প
কার্যক্রম চেক করার পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে গোপালগঞ্জ ১
আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি
উদ্বোধন করেছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার আমিনুল ইসলাম
জানিয়েছেন, আগের মত খর¯্রােতা না হলেও নদীর পানি
প্রবাহ সারা বছর রাখা এবং নাব্যতা রক্ষার জন্য স্থান ভেদে ৮
থেকে ১১ ফুট গভীর হবে এবং নিচের তল চওড়া হবে কমপক্ষে
৬৫ থেকে ৭৫ ফুট এবং উপরের চওড়া হবে ১২৫ থেকে ১৩৫
ফুট।
কমলাপুর গ্রামের কৃষক শেখ ছরোয়ার জানান, আগে
কুমার নদে পানি না থাকাতে শ্যালো টিউবওয়েল দিয়ে
চাষাবাদ করায় জমির উর্বরতা কমে গিয়েছিল। জমির উপরি
ভাগে পানির আয়রন-রাসায়নিক আস্তরণ পড়ে জমি লাল হওয়া
থেকে শুরু করে জমির উর্বরতা ব্যাপক ভাবে হ্রাস
পেয়েছিল। কুমার নদ প্রাণ ফিরে পেলে আমরা নদীতে সেচ
মেশিন বসিয়ে পানি সেচ দিলে প্রাকৃতিক পানিতে
জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
গোপীনাথপুরের মৎস্যজীবী রবিন মালো বলেন, আমারদের
বিশাল জলাধার কুমার নদ শুকিয়ে যাওয়ায় আমরা আমাদের
পৈত্রিক পেশা ছেড়ে ভ্যান চালানো শুরু করেছিলাম। ঘরে
জাল-দড়ি সব থাকার পরও পানি না থাকায় পেশা বদল করতে
হচ্ছিল। এখন আবার আমাদের সুখের দিন ফিরে আসবে।
টেংরাখোলা গ্রামের মিয়াজন জানান, কুমার নদের পাশে
কমলাপুর খাল থেকে এত মাছ ধরা পড়ত যে, কমলাপুর,
গোপিনাথপুর, চন্ডিবরদীর মানুষ ওই মাছ না খেতে পেরে
শুটকি খোলা দিত। সেই শুটকি খোলায় বেশি থাকতো
পুটি-টেংরা মাছ। সেই থেকেই এই জনপদের নাম হয়
টেংরাখোলা। কুমার নদ মরার সাথে সাথে সেই মাছও উধাও
হয়েছে। দখল-বেদখলে নদী গেছে মরে। নেই সেই
টেংরাখোলাও। যদি কুমার নদ প্রাণ ফিরে পায় তাহলে অন্তত
কিছু মিঠা পানির মাছ পাওয়া যাবে।
নারায়ণপুর গ্রামের শফিউদ্দীন মাতুব্বর এ প্রসঙ্গে
জানান, আগে লঞ্চ, গয়না চলাচল করেছে। ফরিদপুর, ভাঙ্গা,
খুলনাসহ দেশের নানান যায়গায় নৌকা, লঞ্চে গিয়েছি।
আত্মীয়তাও করেছি যত দূরেই হোক নদীর পাড়ে। এখন আর
তা নেই। ৭/৮ বছর আগে এই নদীতে হয়েছে ঘোড়দৌড়।
মনে নানান অশান্তি ছিল। এখন নদ খনন শুরু হওয়ায় আবার
আগের দিন ফিরে আসবে।