মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

নওগাঁর রাণীনগরে তৈরি হচ্ছে সেই অনন্যা স্বাদের কুমড়া বড়ি

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৪৫৭ বার পড়া হয়েছে

সুদাম, নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে চলছে এখন
মাসকালাই ডালের তৈরি সুস্বাদু কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম। প্রায়
সারা বছর কুমড়া বড়ি তৈরির আমেজ থাকলেও হেমন্ত-শীতকালে
উপজেলার বেশকিছু গ্রামের নারী-পুরুষ কিশোর-কিশোরীরা কুমড়া
বড়ি তৈরি করে তাদের সংসারে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে। দামে কম
মানে ভাল হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায়
সরবারহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, ঠাকুরগাঁ,
দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ের পাইকাররা এসে রাণীনগর থেকে কুমড়া বড়ি
কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা ভাল হওয়ায় কুমড়া বড়ি তৈরির সাথে
জরিতরা বেশ খুস মেজাজে রয়েছে। কার্তিক মাসে ঘন কুয়াশায়
শীতের আগমন টের পেয়ে ও শ্রমজীবিদের অন্যান্য কাজ-কাম কম
থাকার কারণে নারী-পুরুষ মিলে ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত কুমড়া
বড়ি তৈরিতে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায়
কুমড়া বড়ি’র ব্যবসা প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে
নীরবে রেখে যাচ্ছে অবদান। সরকারী উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্বল্প
আয়ের গ্রামের এই মানুষ গুলো ব্যবসার আরো প্রসার ঘটিয়ে
অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে। জানা গেছে, উপজেলার
খট্টেশ্বর, কুজাইল, কাশিমপুর, বেতগাড়ী, এনায়েতপুর, ত্রিমোহনী ও
করজগ্রাম সহ বিভিন্ন গ্রামের স্বল্প আয়ের প্রায় শতাধিক পরিবার
দীর্ঘদিন ধরে জীবন-জীবিকার প্রধান কর্ম হিসেবে প্রায় সারা
বছরই তারা কুমড়া বড়ি তৈরি ও ব্যবসা করে আসছে। শীতকালে এই
ব্যবসার পুরো মওসুম হওয়ায় বাড়ি বাড়ি চলছে এখন সুস্বাদু
খাবার কুমড়া বড়ি তৈরির ব্যস্ত সময়। রাণীনগর উপজেলা তথা

নওগাঁ জেলা এবং আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে
ব্যাপক হারে পাওয়া যায় এই সুস্বাদু খাবার কুমড়া বড়ি। কুমড়া
বড়ি তৈরির মূল উপকরণ হলো মাসকালাই ও খেসারি ডাল।
মাসকালাই প্রথমে রোদে শুকিয়ে যাতায় ভেঙে পরিষ্কার করে তিন
থেকে চার ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর ভোর রাত থেকে
পরিবারের ছোট বড় সবাই মিলে শিল-পাটায় ডাল মিহি করে গুঁড়ো
করার পর তা দিয়ে কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়। কুমড়া বড়ি তৈরির পর
থেকে এক টানা ভাল রোদ হলে দুই দিনের মধ্যেই শুকিয়ে খাবার
উপযোগী হলে হাট-বাজারে খুচরা ও পাইকারী বিক্রয় করা হয়। নানান
জাতের তরকারির সাথে কুমড়া বড়ি রান্না করলে খাবারে এনে দেয়
ভিন্ন রকমের স্বাদ। প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ কুমড়া বড়ির তরকারিতে
আকৃষ্ট। তবে এর নাম করণ নিয়ে রয়েছে এলাকা ভেদে নানান কথা।
কথিত আছে যে, এক সময় দেশের অভিজাত হিন্দু সম্প্রদায়ের
লোকেরা কুমড়া এবং ডালের মিশ্রণে এটি তৈরি করত বলে এর নাম
কুমড়া বড়ি। এক কালের শখের খাবার থেকে উৎপত্তি হওয়া কুমড়া বড়ি
এখন শত শত মানুষের কর্মসংস্থান ও প্রান্তিক পর্যায়ের
অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। একজন নারী কিংম্বা পুরুষ প্রতিদিন
তিন-চার কেজি মাসকালাই ডালের কুমড়া বড়ি তৈরি করতে পারে।
বিশেষ করে গ্রামের নারীরা মওসুমি খাদ্য হিসেবে এবং সংসারের
বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়া বড়ি তৈরিতে বেশি সময় কাটান।
উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের শ্রী বলাইরাম (৫৫) , আরতি রাণী (৪২),
করজগ্রামের শ্রী যোগেশ্বর (৬০) ,অষ্ট্রমি রাণী (৩৫)
জানান,মাসকালাই থেকে তৈরি আসল কুমড়া বড়ি প্রতি কেজি
১৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সারা বছর এই ব্যবসা
চললেও শীতকালে বড়ির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বেশি পরিমাণ বড়ি
তৈরি করি। উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের শ্রী বলাইরাম ও আরতি রাণী
জানান, আমাদের গ্রাম থেকে বিভিন্ন মানের প্রায় ১৫ থেকে ২০
মণ কুমড়া বড়ি তৈরি হয়। অল্প পুঁজির কারণে কুমড়া বড়ি তৈরির

উপকরণ গুলো আমরা মজুত করতে না পাড়াই দিনে আনা দিনে বিক্রয়
করার কারণে লাভ খুব বেশি হয় না। তারপরও পারিবারিক ভাবে আমাদের
পাড়াই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা মাঠে ঘাটে কাজ করার চেয়ে
কুমড়া বড়ির ব্যবসা করতেই বেশি পছন্দ করে। আবহাওয়া ভাল থাকলে
কুমড়া বড়ি তৈরিতে আমাদের ব্যাস্ততা বেড়ে যায় এবং ব্যবসাও ভাল
হয়। রাণীনগর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছনিয়া
ইসলাম বলেন, সদর ইউপির খট্টেশ্বর গ্রামসহ উপজেলার বেশকিছু
গ্রামে মওসুমি তরকারি হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা
কুমড়া বড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে এদেরকে
উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরকারি পর্যায় থেকে আর্থিক সুযোগ-
সুবিধা দেওয়া হলে তারা আরো নিজেদের উন্নয়ন ঘটাতে পারবে
এবং তারা গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।#

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451