এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে
: সুন্দরবনে মধু ও মোম আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে।
এ নিয়ে উপকূল এলাকায় মৌয়ালদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা
দেখা দিয়েছে। ১লা এপ্রিল থেকে ১৫ই জুন পর্যন্ত বনে
মধু আহরণ চলবে। আড়াই মাসব্যাপী মৌয়ালরা সুন্দরবনে
মধু আহরণ করবে। তবে এখন সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ
করায় মধুর পরিমাণ কমছে; ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বন। মশাল
দিয়ে ধোয়া দেওয়ার সময় অনেক মৌমাছি আগুনে পুড়ে
মারা যায়। আবার অনেক সময় না বুঝে পুরো মৌচাক
কেঁটে ফেলেন মৌয়ালরা। এসব কারনে সুন্দরবনের মধু
সম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে। বনবিভাগ সূত্রে
জানাগেছে, মৌয়ালরা বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট
(বিএলসি) এবং পাস পারমিট নিতে শুরু করেছে। ১লা
এপ্রিল থেকে শুরু করে ১৫ই জুন পর্যন্ত মধু ও মোম
আরহণ চলবে। গত বছর একবার পাস নিয়ে এক মাস বনে
থাকতে পারতো মৌয়ালরা। এ বছর থাকতে পারবে ২ সপ্তাহ।
এরপর আবারও ২ সপ্তাহ পাস নিয়ে বনে ঢুকতে হবে।
সুন্দরবন বনবিভাগ থেকে জানাগেছে, সুন্দরবন পশ্চিম ও
পূর্ব বিভাগে এবছর মধু আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩
হাজার ১৬০ কুইন্টাল এবং মোম ৭৯৩ কুইন্টাল। এরমধ্যে
পশ্চিম বনবিভাগে ২ হাজার ২৫০ কুইন্টাল ও মোম ৫৬৫
কুইন্টাল। এরমধ্যে খুলনা রেঞ্জে ৭৫০ কুইন্টাল ও সাতক্ষীরা
রেঞ্জে ১৫’শ কুইন্টাল মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
প্রতি কুইন্টাল মধু আহরণের জন্য ৭৫০ টাকা এবং
মোমের জন্য ১ হাজার টাকা রাজস্ব দিতে হবে
বনবিভাগকে। সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য মৌয়ালদের
মাথাপিছু ৮ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে।
সুন্দরবন থেকে সুন্দরী, খলিসা, গরাণ, গেওয়া, বাইন ও
কেওড়া গাছের মধু আহরণ করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের
কারণে বনের জীববৈচিত্রের উপর প্রভার পড়েছে। এর
পাশাপাশি এখনো সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ করায়
মধুর পরিমাণ কমছে। বনবিভাগ সূত্রে জানাগেছে,
২০১৪-১৫ অর্থবছরে মধু আহরণ হয়েছিল ২ হাজার ২৩১
কুইন্টাল ও মোম ৫৩১ কুইন্টাল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা
কমে দাড়ায় ১ হাজার ৯২০ কুইন্টাল ও মোম ৪৮৭ কুইন্টাল।
মৌয়ালদের কাছ থেকে জানাগেছে, এখনো তারা সনাতন
পদ্ধতিতে মধু আহরণ করছেন। মৌচাক থেকে মৌমাছি
তাড়াতে খড়-কুটো বা বনের লতা-পাতা দিয়ে মশাল তৈরী
করেন। মৌচাক কাটার সময় মশাল জ্বালিয়ে ধোয়া তৈরী
করে মৌচাকে ধোয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়ানো হয়। এ
সময় মৌয়ালদের মাথায় টুপি, হাতে ও মুখে কাপড়
পেটিয়ে মৌচাক কাঁটতে হয়। তাড়াহুড়োর কারণে
অনেক মৌচাক আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। এর কারনে অনেক
মৌমাছি মারা যায়। এছাড়া না বুঝে পুরো চাক
কেঁটে ফেলে তারা। এতে মৌমাছির বাচ্চা ও ডিম নষ্ট
হয়ে যায়। এসব কারনে আগের তুলনায় মৌচাক
কমেগেছে। মৌয়ালরা জানান, আগুন না জ্বালিয়ে
মেশিনের সাহায্যে ধোয়া দিয়ে মৌচাক কাটা যায়
কিন্তু মেশিন ও মুখের মাক্সের দাম বেশি হওয়ার কারনে তারা
মেশিন কিনতে পারে না। তাছাড়া মহাজনের অধিনে
যেসব মৌয়ালরা মধু আহরণ করতে যায় তাদেরকেও মেশিন
বা মাক্স না দেয়ায় সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ করতে
হচ্ছে। এছাড়া অসর্তকতার কারনে মশালের আগুনে পুড়ে বা
মশাল বনের মধ্যে ফেলে দেওয়ায় ইতোপূর্বে একাধিক বার
বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন
কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী জানান, মৌয়ালরা কেউ
যাতে মৌমাছি না পোড়ায়, পুরোচাক না কেঁটে
ফেলেন এবং ব্যবহৃত মশাল যেন বনের মধ্যে ফেলে না দেয়
সেজন্য প্রতিবছর কিছু সংখ্যাক মৌয়ালকে প্রশিক্ষক
দেওয়া হয়। তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারনে সব মৌয়ালকে
এখনো প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাঘের হামলা
এড়াতে সতর্ক ও দলবদ্ধভাবে মৌয়ালদের চলাফেরা করার
পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি মধু আহরণ
মৌসুমে মৌয়ালদের নির্বিঘেœ মধু আহরনে
বনদস্যুদের তৎপরতা রোধে টহল জোরদার করা হয়েছে।