অনলাইন ডেস্কঃ
লেক টাউনের বাসিন্দা স্মিতা আগরওয়াল ৷ চার মাসের একটি ফুটফুটে মেয়ে রয়েছে তাঁর ৷ দুপুরে ছোট্ট মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে নিজে একটু বিছানায় গা এলিয়েছেন সবে ৷ হঠাৎ মেয়ের দিকে চোখ যেতেই লক্ষ করলেন অস্বাভিক আচরণ করছে ছোট্ট মিঠি৷ কেমন যেন স্থির হয়ে গেছে মিঠির চোখ দুটি ৷ রয়েছে গোঙানি ৷ কী হল মেয়ের? কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোঙানি বন্ধ হয়ে যায়, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে মিঠি ৷
এরপরই মিঠিকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে ৷ রাস্তায় আবার মিঠির শরীর নীল হয়ে আসছিল ৷ আতঙ্কিত মা-বাবা উদ্বেগের সঙ্গে চিকিৎসককে জানান পুরো বিষয় ৷ বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার পর হাসাপতালে ভরতি করে নেওয়া হয় মিঠিকে ৷
কিন্তু হঠাৎ কী হল? এমন অস্বাভাবিক আচরণই বা কেন? চিকিৎসক জানান, ফিবরাইল কনভালশনের কারণেই এই অস্বাভাবিক আচরণ ৷ যা খিঁচুনি বা তড়কা নামেও পরিচিত ৷
এমন খিঁচুনি হয় কেন? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কনভালশন দুই প্রকার ৷ সিম্পল ফিবরাইল কনভালশন আর অ্যাটিপিকাল ফিবরাইল কনভালশন৷
১. (সিম্পল ফিবরাইল কনভালশন) হেড
জ্বর থাকতেই হবে ৷ জ্বর ছাড়া খিঁচুনি আসবে না ৷ জ্বরের প্রথম দিনেই হয়, দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে হঠাৎ খিঁচুনি আসার কোনও আশঙ্কা নেই
জ্বর থাকতেই হবে, মিনিমাম ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট
একবার জ্বরে একবারই খিঁচুনি আসবে ৷ একাধিকবার খিঁচুনি কখনই আসবে না
১৫ মিনিটের কম সময় এই খিঁচুনি হবে, তার বেশি সময় হবে না ৷
২. (অ্যাটিপিকাল ফিবরাইল কনভালশন)
২৪ ঘণ্টার মধ্যে একাধিকবার খিঁচুনি আসবে
১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে খিঁচুনি থাকবে
মৃগিতেও কনভালশন হয়
কেন হয় খিঁচুনি?
আরজি করের চিকিৎসক ডাক্তার নীলাঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হেরিডিটি থেকে আসতে পারে ৷ আবার জন্মগত ব্রেনের সমস্যা থেকেও খিঁচুনি আসে ৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, টিকাকরণের পরেও খিঁচুনি আসে ৷ তবে সব টিকাকরণ নয় ৷ কিছু বিশেষ টিকাকরণের ফলে অনেক সময় খিঁচুনি আসতে পারে ৷ যেমন ডিপিটি ৷ যা পি কমপোনেন্ট বা হুপিং কাশির টীকা নামে পরিচিত ৷
সব বয়সেই খিঁচুনি হয় না ৷ ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সেই নির্দিষ্ট করে এই রোগটি দেখা যায় ৷ তবে অ্যাটিপিকাল ফিবরাইল কনভালশনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বছরের বেশি বাচ্চাদেরও এই সমস্যা হতে পারে ৷ সেক্ষেত্রে খিঁচুনি হলে মেনিনজাইটিস পরীক্ষা অনিবার্য ৷ কিওর হয়ে যাওয়ার দু সপ্তাহের মাথায় ইইজি করতে বলা হয় ৷ মস্তিষ্কের অ্যাবনরমালিটি পরীক্ষার জন্য ৷
কিন্তু সব কনভালশনেই ভয়ের কারণ থাকে না ৷ বিখ্যাত শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, সাধারণ জ্বরের ফলে যে কনভালশন তাতে ভয়ের কারণ নেই৷ কিন্তু যেসব তড়কায় খিঁচুনি ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে হয়, কিংবা বিনা জ্বরে খিঁচুনি কিংবা খিঁচুনির ফলে জ্ঞান আসতে সময় লাগছে সেক্ষেত্রে যথেষ্ট ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় ৷ তার চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন ৷