আমিনুল ইসলাম ঝালকাঠি সংবাদদাতাঃ-ঝালকাঠির রাজাপুরের
বাইপাস এলাকায় এসে নিজের পরিচয় গোপন রেখে প্রতারনার
আশ্রয় নিয়ে বাবা-মাকে খোঁজার অভিনয়কারী প্রতারক মোঃ
বেল্লাল হোসেনের নিখোঁজ নাটক ফাঁস হয়ে গেছে। তার
বাড়ি রাজাপুরে নয়। দৈনিক পূর্বকোন পত্রিকার খাগড়াছড়ি
প্রতিনিধি শাহজাহান হোসেন সাজুর পুলিশকে দেয়া তথ্য
অনুয়ায়ী এই বেল্লাল হোসেন পানছড়ি উপজেলা আ’লীগের
সভাপতি বাহার মিয়ার সাথে প্রতারনা করে অর্থ হাতিয়ে পালিয়ে
যায়। সে তথ্য অনুযায়ী সোমবার পুলিশের ঘণ্টাব্যাপি ব্যাপক
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বেল্লাল হোসেন হিন্দি ও বাংলায় কথা
বলতে পারে বলে জানায়। এর আগে রাজাপুরে এসে শুধু হিন্দিতে
কথা বলতে পারে বলে জানালেও পরে সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সব
বাংলায় বলে। পুলিশের কাছে বেল্লালের দেয়া চট্রগ্রাম সিটি
কর্পোরেশনের জাতীয়তা সনদপত্র অনুযায়ী তার স্থায়ী ঠিকানা
মৌলভিবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বনগাঁও গ্রামের মোঃ
জসিম উদ্দিনের ছেলে এবং তাতে বর্তমান ঠিকানায় উল্লেখ করা
হয়েছে, চট্রগ্রামের পাঁচলাইশ উপজেলার চকবাজার গ্রামের
শুলকবহর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের আব্দুল হামিদ সড়কের সিদ্দিকুর
আহম্মেদের বাড়ি এবং ৫ নভেম্বর ২০১২ইং সালে করা জন্মসনদে তার
স্থানীয় ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, চট্রগ্রামের পাঁচলাইশ
উপজেলার চকবাজার গ্রামের শুলকবহর এলাকার আব্দুল হামিদ সড়কের
সিদ্দিকুর আহম্মেদের বাড়ি এবং বর্তমান ঠিকানা মৌলভিবাজার
জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বনগাঁও গ্রাম। জন্মস্থান দেয়া হয়েছে
মৌলভিবাজার। জন্ম তারিখ দেয়া হয়েছে ১৩ মার্চ ১৯৯৩। সে
অনুযায়ী বেল্লালের বর্তমান বয়স ২৩ বছর। বেল্লালের বাবা মোঃ
জসিম উদ্দিন বায়েজিদপুর থানার টেক্সটাইল এলাকার গ্যালন ফ্যাশন
নামে একটি গার্মেন্টসের সুপার ভাইজার পদে চাকুরী করে এবং
একই গার্মেন্টসে তার মা সেলিনা আক্তারও চাকুরী করে বলে
জানায় বেল্লাল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিলেও বেল্লালের
রাজাপুরে আসার মূল টার্গেট সম্পর্কে মুখ খোলেনি সে।
জিজ্ঞাসাবাদে বেল্লাল আরও জানায়, বাবা-মায়ের সাথে রাগ করে
সাড়ে ৭ বছর বয়সে ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখানে দীর্ঘদিন বন্দি
থাকার পর সেখান থেকে ২০১২ সালে পালিয়ে এসে পুনরায় বাড়িতে
যায়। মা-বাবা মায়ের সঠিক ভালবাসা না পেয়ে বাড়ি থেকে চলে
গিয়ে দীর্ঘদিন গার্মেন্টসে কাজ করে। দৈনিক পূর্বকোন
পত্রিকার খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি শাহজাহান হোসেন সাজু
জানান, পানছড়িতে রাজাপুরের মত একইভাবে প্রতারনা করে
উপজেলা আ’লীগের সভাপতি বাহার মিয়ার বাসায় আশ্রয় নিয়ে
২৫ দিনের মত থেকে ১৪/১৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
এভাবে নোয়াখালিসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতারনা করেছে বেল্লাল
হোসেন। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজাপুরের বাইপাস এলাকার
আশ্রায়দানকারী সবজি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পুলিশ থানায় এনে
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটক করে। তবে বেল্লাল কোন জঙ্গী
সংগঠনের সদস্য কিনা অথবা তার দলে অন্য কোন সদস্য আছে
কিনা বা রাজাপুরে আসার মূল টার্গেট কি এসব বিষয়ে মুখ
খোলেনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেল্লাল। এ ঘটনার পর বেল্লালকে
আশ্রয়দাতা বাইপাস এলাকার সবজি বিক্রেতা খসরু হোসেন
জানান, বেল্লালের প্রতারনার হাত থেকে আল্লাহ রহমত করেছে। নইলে
বড় ধরনের ক্ষতির সম্মূখিন হতে হতো। রাজাপুর থানার ওসি শেখ
মুনীর উল গীয়াস জানান, বেল্লালের রাজাপুরের নাটকীয় ঘটনার
ছবিসহ খবর গণমাধ্যমে দেখে খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
শাহজাহান হোসেন সাজু ফোনে জানালে যে, বেল্লাল প্রতারক
সে পানছড়ি উপজেলা আ’লীগের সভাপতি বাহার মিয়ার সাথে
প্রতারনা করে অর্থ হাতিয়ে পালিয়ে যায়। ওসি জানান, বেল্লালকে
আটক করা হয়েছে। তার দেয়া ঠিকানা অনুয়ায়ী ওই খোজখবর
নেয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে প্রতারনার মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এরআগে গত শুক্রবার রাতে ঝালকাঠির রাজাপুরের বাইপাস এলাকায়
আসে বেল্লাল। তখন সে প্রতারনা করে নাটক সাজিয়ে বলে, ৫ বছর
বয়সে বাইপাস এলাকা থেকে তাকে অপহরন করে বাংলাদেশের
পাচারকারীরা ভারতীয় সীমান্তেরর পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে
দেয়া হয়েছিল। পরে ভারতে নিয়ে আসামের গৌহাটিতে পাহাড়ি
এলাকায় একটি মদের কারখানায় এক যুগ বন্দি করে কাজ করানো
হয় তাকে দিয়ে। কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে ফেনীর পরশুরাম
সীমান্ত দিয়ে দালালদের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে আসে
শিশু থেকে বেড়ে ওঠা বর্তমানে সতেরো বছর বয়সী কিশোর
বেল্লাল। বেলাল এখন শুধু তার নাম বেলাল হোসেন, বাড়ি ঝালকাঠির
বাইপাস এলাকায়, বাবা জসিম উদ্দিন, মায়ের নাম সেলিনা
এতটুকুই বলেছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা
বেল্লালের ছবিসহ দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ অনলাইন সহ
বিভিন্ন গনমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করে এবং উপজেলার বিভিন্ন
এলাকায় মাইকিং করা হয়েছিল।