ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ঃ “ও বউ ধান ভনে রে
ঢেঁকিতে পার দিয়া, ঢেঁকি নাচে বউ নাচে, হেলিয়া
দুলিয়া…”। ঢেঁকি আর পল্লী বধূদেরকে নিয়ে এক সময় গানে
গানে মুখরিত হতো বাংলার জনপদ। এক সময় গ্রামের প্রতিটি
বাড়িতে ঢেঁকির প্রচলন থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় বিলুপ্তির
পথে। মাঝে মধ্যে পাওয়া গেলেও তা বড়ই দুষ্কর। ঢেঁকিতে গ্রামের
নারীরা ধান, গম, চিড়া, চালের গুড়ো, মশলাসহ নিত্য দিনের
প্রয়োজনীয় নানান সামগ্রী তৈরি করতেন। কিন্তু কালের
বিবর্তনে যন্ত্র নির্ভর সভ্যতার যুগে তা প্রায় হারিয়ে যেতে
বসেছে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার গ্রামাঞ্চলে এখন আর তেমন ঢেঁকি
দেখা যায়না। নতুন প্রজন্মের অনেক ছেলে মেয়ে এই মানটির
সঙ্গেও পরিচিত নন। স্কুলের কোমলমতি অনেক শিক্ষার্থীই তাদের
বইয়ে ঢেঁকি শব্দ পড়ে চোখ কপালে তোলে শিক্ষকে উল্টো প্রশ্ন
করেন জানতে চায় ঢেঁকি আবার কি! শহর ছাড়িয়ে উপজেলার
গ্রামাঞ্চলের কোন কোন বাড়ীতে ঢেঁকি থাকলেও দেখা যায় পাড়ার
নারীরা পিঠাপুলি ও চালের গুড়ো করতে কয়েক দিন পূর্বেই
সিরিয়াল দিয়ে থাকে। এ প্রতিবেদকের সাথে গ্রামের বয়স্ক
নারীদের কথা হলে তাহারা জানান, ঘরে ঘরে এক সময় ঢেঁকি
থাকলেও এখন আর তেমনটা নেই, এখন সারা গ্রাম খোঁজ নিলে
দু’একটি বাড়িতে ঢেঁকি পাওয়া যায়। এখন আর আগের মতো
ঢেঁকির ব্যবহারও হয় না। তাই ঐতিহ্যের এই ঢেঁকি হারিয়ে
যাচ্ছে। সব বাড়িতে ঢেঁকি না থাকায় চাল নিয়ে এক ঢেঁকিতে
সিরিয়াল দিয়ে অনেকে চালেল গুড়ো করে নিচ্ছেন। একই দিনে
সকলের গুড়ো করা সম্ভব হবে না। আগে নারীরা মন মন ধান ভানতো ও
মরিচ, হলুদ, জিরা ইত্যাদি মশলাও করতেন ঢেঁকিতে।
৬০ বছর বয়সী এক নারী আমেনা খাতুন খোলা কাগজ
প্রতিবেদককে বলেন, রাইচমিল হওয়ায় নারীদের এই কষ্ট এখন দূর
হয়েছে। দিন বেধে ঢেঁকিতে কাজ করতে হয় না। এখন নারীরা
ঢেঁকিতে শুধু পিঠেপুলির জন্য চালের গুড়োই তৈরি করেন তাও
আবার সকলে নয়। অনেকেই এখন মিল থেকে চালের গুড়োও করিয়ে
আনেন। ঢেঁকির তেমন প্রয়োজন না হওয়ায় সারা বছর এটি পড়ে
থাকে অবহেলা আর অযতেœ।