একসময় দেখা যেতো মা-বোনরা চিরনি দিয়ে মাথা আঁচড়াতো। একে অপরের চুল আঁচড়িয়ে দিতো। বিকালবেলা বাড়ির উঠোনে বা ঘরের বারান্দায় চলতো, চুল আঁচড়ানোর প্রতিযোগিতা। আঁচড়ানের সময় চিরনিতে কিছু ছেঁড়া চুল লেগে থাকতো। সেগুলো মুড়িয়ে থুতু দিয়ে ফেলে দিতো। সব মায়েরা ছেঁড়া চুলে থুতু দিয়ে ফেলতো কিনা তা জানা নেই।
তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মা-বোনরাই, ছেঁড়া চুল থুতু দিয়ে বেশি ফেলতো। ছেঁড়া চুলে থুতু না দিয়ে ফেললে নাকি, মাথার চুল ঝরে পড়ে যায়। এটা ছিল আগেকার বুড়ো বুড়িদের একটা কুসংস্কার রটানো কথা। আর পুরুষ মানুষের মাথার চুল কেটে সাধারণত ফেলেই দেওয়া হতো। পুরুষের কাটা চুল ফেলার কোনও নিয়মকানুন ছিল না, এখনো নেই। এখন নারীপুরুষের কারোর চুলই ফেলনা নয়। এগুলো এখন খুবই মূল্যবান জিনিস। সময়সময় দেখা যায়, শহরের চুল কাটার দোকান (সেলুন)-এর নিচ থেকে পরিত্যক্ত চুল অনেককে কুড়িয়ে নিতে। আবার গৃহিণী মা-বোনেরা তাদের মাথার পরিত্যক্ত চুল মুড়িয়ে রেখে দেয়, ঘরের কোণে বা কোনও পটের ভেতর। সময়মত এগুলো দিয়ে রাখা হয় নানারকম জিনিসপত্র সহ শিশুদের হরেকরকমের খেলনা।
কিন্তু আগেকার সময় কেউ ভাবেনি যে, এই ফেলে দেওয়া চুল একদিন বিদেশে রফতানি হবে। যা দিয়ে আমাদের দেশ আয় করবে বৈদেশিক মুদ্রা। এখন প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যেসব প্রকার পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে, তার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ফেলে দেওয়া এই চুল। জানা যায় চুল রফতানি করেই প্রতিবছর দেশের আয় হচ্ছে, কোটি কোটি টাকারও বেশি। আবার এরমধ্যে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকা। দূর হচ্ছে বেকারত্বের অভিশাপ, স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেক মানুষ। মানুষের মাথার পরিত্যক্ত চুল এখন একরকম বিশেষ ধরনের রপ্তানি যোগ্য পণ্য।সাপটিবাড়ি এলাকায় ২০২০ সালে মহসিন ক্ষুদ্র পরিসরে এই প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। বর্তমানে এখানে ৮০ জন নারী পরিত্যাক্ত চুল পুনরায় স্থাপনের মাধ্যমে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। সাপটিবাড়ি বাজার সংলগ্ন টাওয়ার পাড়া এলাকায় জিহাদ ক্যাপ ট্রেডাস নামে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠান। সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমি মনে করি।