তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার তালায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ৭৮ টি স্কুলে এডুকেশন
ইকুইটি ফর আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন প্রজেক্টে চলছে হরিলুট। ঝরে পড়া শিশুর
শিক্ষার পরিবর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানুষিক বিকাশ
বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। নামে মাত্র স্কুল আর শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বই, খাতা, ছাত্র
ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে স্কুলগুলি। দাতা সংস্থা ইউনিসেফ এর
অর্থায়নে এ প্রকল্পে ঝরে পড়া শিশু, স্কুল থেকে দূরে থাকা শিশুদের শিক্ষার
আলোয় আলোকিত করা মহতী উদ্যোগের অর্থ আত্মসাৎ করতে প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের পড়–য়া শিশুদের দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে স্কুলগুলি। তথ্যানুসন্ধানে
স্কুলগুলি ২০১৬ সালের পহেলা জুন হতে কার্যক্রম শুরু করলেও ক্লাস রুম আর ছাত্র
সংগ্রহ শেষে এপ্রিল মাস হতে স্কুল পরিচালনা শুরু করে। জাগরণী চক্রের
সহযোগীতায় ইউনিসেফ এর অর্থায়নে এবিএল স্কুল তালা উপজেলার
২২৯টি গ্রামের মধ্যে ৭৮ টি কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। প্রত্যেক কেন্দ্রেই ২৮-
৩২ জন ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা দিয়ে মূল ¯্রতোধারায় ফিরিয়ে আনাই এ
প্রকল্পের লক্ষ্য। কিন্তু কতিপয় এনজিও ও দাতা সংস্থার কর্মকর্তাদের
যোগসাজসে নামে মাত্র স্কুল গড়ে তুলে ঝরে পড়া শিশুর স্থানে ঐ এলাকার
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ভর্তি করিয়ে প্রকল্পের টাকা হরিলুট করছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে গত ১২ জুলাই ১৬ মঙ্গলবার সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে
তালা উপজেলার যুগিপুকুরিয়া এবিএল স্কুলে গিয়ে দেখা যায় বই, খাতা
আর ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াই শিক্ষিকা প্রিয়াংকা ঘোষ ছোট্ট একটি শিশুকে
নিয়ে খেলছে। এসময় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী কোথায় জানতে চাইলে শিক্ষিকা
সাংবাদিকদের জানান ঝরে পড়া শিশুরা অভাবের তাড়নায় বিভিন্ন খেত খামারে
কাজ করতে গিয়েছে। এসময় তাদের নামের তালিকা ও ঐ শিক্ষিকাকে সাথে
নিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতের জন্য যাওয়া হয় যুগিপুকুরিয়া সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মুন্নি এবিএল
স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী স্কুলে উপস্থিত রয়েছে। একই শ্রেণির ছাত্রী
ফতেমাকেও স্কুলের ক্লাসে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। অপরদিকে ঐ স্কুলের
দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী শারমিন ও ওবায়দুল্লাকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ক্লাস করতে দেখা যায়। এছাড়া ঐ কেন্দ্রের ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ২৫ জনই
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। বাকি কয়েকজন শারীরিক
প্রতিবন্ধী ও ১৮ বছর বয়সী শিশু। এসময় শিক্ষিকা প্রিয়ংকা
কিংবর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সাংবাদিকদের জানায় তার স্কুলে তো কিছু ছাত্র-
ছাত্রী আছে, অন্যান্য স্কুলে তো মোটেই নেই। পরবর্তীতে ১২ টা ৩০
মিনিটে তৈলকুপী এবিএল স্কুলের কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ক্লাসরুমে
তালা। শিক্ষিকা পার্শ্ববর্তী তৈলকূপী দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছে। তৈলকূপী কেন্দ্র এবিএল স্কুলের ছাত্র
দক্ষিণপাড়া প্রাইমারী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আব্দুর রহিম ছাড়াও ৩০
জন ছাত্র-ছাত্রী তৈলকূপী দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র-
ছাত্রী। তাদের দিয়েই চলছে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষায়
আলোকিত করার কার্যক্রম। এদিকে জানা গেছে, তালা উপজেলার ৭৮টি
স্কুলের ২৩ শ ছাত্র ছাত্রী বর্তমান এবিএল স্কুলের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে
তালা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রাজমনি জানান, তালা
উপজেলার শতভাগ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। কোন ঝরে পড়া
শিশু নেই। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের
এডুকেশন ইকুইটি ফর আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন প্রজেক্টি ২০১২ সালে
দাতাসংস্থা ইউনিসেফ এর ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প শ্যামনগর ও আশাশুনী
উপজেলার শেষ পর্যায়ে এবার তালা উপজেলার ৭৮টি ও সাতক্ষীরা সদরের ৯২ টি
এবিএল স্কুল খুলে ঝরে পড়া শিশুদের পরিবর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের
দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জানা গেছে, প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের শিশুরা এনজিও স্কুলের উপবৃত্তির টাকার লোভে সকাল ৯ টা হতে
বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শিক্ষা নিয়ে আবারো
ফিরে আসে এবিএল স্কুলে। ফলে ঝরে পড়া শিশুদের মূল ¯্রােতে ফিরিয়ে আনার
পরিবর্তে একের পর এক স্কুলে পড়ায় মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
এবিএল স্কুলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সকাল ৯ টা হতে বিকাল ৫ টা
পর্যন্ত দুই শিফটে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু সকাল ৯ টা হতে
বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ঐ স্কুলে কোন ছাত্র-ছাত্রী থাকে না। এ বিষয়ে কথা হয়
দাতা সংস্থা ইউনিসেফ এর দায়িত্বে থাকা তানভিরুল ইসলামের সাথে।
তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এমনটি হওয়ার কথা না। তবে সরেজমিন
সাংবাদিকদের নিয়ে তদন্তপূর্বক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে
বিষয়টির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবিষয়ে প্রজেক্ট ডিরেক্টর মোঃ ফিরোজ রহমান
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রজেক্ট আসার পূর্বে সাতক্ষীরায় ঝরে
পড়া শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের শিশুদের ঝরে পড়া শিশু উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করলে স্থানীয়
পত্রিকায় ৩ শত টাকা ও জাতীয় পত্রিকায় ৫ শত টাকা দেবেন বলে জানান। এ
বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দীন ও তালা
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন এর নিকট মুঠোফোনে
যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে ঐ প্রকল্পের তালা উপজেলা
কো-অর্ডিনেটর আব্দুল কাইয়ুম সাংবাদিককে ম্যানেজ করার জন্য
মুঠোফোনে যোগাযোগ করে।