মহিউদ্দীন আহমেদ, কলকাতা।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন, কলকাতায় ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় কলকাতার শ্রী অরবিন্দ ভবনে এক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সম্মানিত অতিথিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে এপার বাংলার কিছু মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। বহু মানুষ এই আলোচনাসভাতে অংশ নিয়ে আলোচনা শুনে সমৃদ্ধ হয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। এর আগে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ১০ই এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় তার অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি করা হয়। ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। ওই দিন ঘোষিত ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। এ ছাড়া জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং মেজর জেনারেল এম এ রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। পরের দিন দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে ১৭ই এপ্রিল শপথগ্রহণের এই সংবাদ ফলাও করে ছাপা হয়। অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ কে স্বাগত জানিয়ে অন্যান্য বছরের মত এবারও পহেলা বৈশাখ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ (১৪ এপ্রিল ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ) শনিবার, বিকেল ৪ টের সময় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন, কলকাতা কতৃক “মঙ্গল শোভাযাত্রা”র আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র, ৩ সোহারওয়ার্দী এভিনিউ হতে বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন পর্যন্ত এই শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিল। কবিতাপাঠ, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত পরিবেশন ও সমবেত নৃত্য দিয়ে অনুষ্ঠান জমে ওঠে। বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনার তৌফিক হাসান প্রথমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন তিনি। এই অনুষ্ঠানটি সফল করতে বহু সপরিবার ও সবান্ধব অতিথির আগমন ঘটে। বিভিন্ন আবৃত্তি শিল্পীরা অপূর্ব আবৃত্তি পরিবেশন করেন যা সকলকেই মুগ্ধ করে। কচিকাঁচাদের নৃত্য পরিবেশনও সকল দর্শকমহলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয়। এই অভিনব সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আনন্দঘন পরিবেশ ছিল বড় মায়াবী। বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের আন্তরিক ব্যবহার সকল অতিথিদেরকেও মুগ্ধ করল।