শরিফুল ইসলাম নড়াইল প্রতিনিধি ঃ
নড়াইল জেলার রতডাংগা গ্রামের চিত্র ব্যতিক্রম। এ গ্রামের কুমাররা এখন ব্যস্ত
সময় পার করছেন হরেক রকম মাটির জিনিস তৈরির কাজে। আর পুরুষের পাশাপাশি এ কাজ করছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও। কাজ চলছে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে। তবে আধুনিকতার অগ্রসনে এখন এ
কাজে তেমন লাভ নেই। পেটের দায়ে বাপ-ঠাকুরদার দীর্ঘ দিনের পেশাকেটিকিয়ে রাখতে এখনও এ পেশাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন তারা।এ গ্রামে মৃৎ শিল্পের ইতিহাস হাজাব বছরের।জানা যায় এক সময় এখানকার কুমারদের হাতে
তৈরি মাটির জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলার হাটবাজারে বিক্রি হত এখানকার তৈরি জিনিসপত্র। কিন্তু কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের চাহিদা কমতে থাকে। তার জায়গা দখল করে নেয় অ্যালুমিনিয়াম ও পিলাাস্টিক-মেলামাইন সামগ্রী। এক সময়ের রান্নাঘরের হাড়ি, কড়াই, বদনা, ঢাকুন, ফুলের টব, কলস, পিঠার ছাচ,মুড়ি ভাজার সামগ্রী তৈরি করে গৃহস্থলির চাহিদ মেটানো সেই সব কুমারদের অধিকাংশেরই চাকা (মাটির সামগ্রী তৈরি করা যন্ত্র) বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রামে তা সচল রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামে মোট ২০০টি পরিবারের মধ্যে কুমার পরিবারের সংখ্যা ১০০। এসব পরিবারের সদস্যরা এখনও মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিজ হাতে বানিয়ে বাজারে বিক্রয়
করে সংসার চালায়। তবে পিলাস্টিকের তৈরি আধুনিক জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কদর কমেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। তাই বেকার হয়ে পড়েছে মাটির কারিগররা। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কুমারদের অনেকেই পেশা
পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখন তাদের কেউ স্বর্নের কাজ, বিদেশে, কেউবা কামারের কাজ করছে। এ গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে দিনরাত ঘুরছে কুমারের চাকা। কেউ মাটিতে পানি মিশিয়ে কাঁদা নরম করছে, কেউ মাটির তৈরি জিনিস রোদে শোকানোর কাজ করছে, কেউ মাটির হাড়িগুলো পোড়ানোর কাজ করছে। আবার আনেকের মনোযোগ পোড়ানো জিনিসপত্রে রং-তুলির
কাজে। রতডাংগা গ্রামের কুমার সুমন পাল জানান, চৈত্র-বৈশাখ এ দু’মাসে রোদেও তেজ বেশি থাকায় তাদের কাজও বেশি হয়। একই গ্রামের মিন্টু পাল বলেন, এখন কাজের চাপ খুব কম। তাই বেকার না থেকে পাশাপাশি অন্য কাজ করার চিন্তা করছি। মন্টু পাল অভিযোগ করে বলেন, এ পেশায় এখন আর লাভ নেই। অন্য কোন কাজ জানিনা। তাই বাপ দাদার পেশাকে কোন রকমের আঁকড়ে ধরে আছি মাত্র। তবে সরকার যদি আমাদের মাটির কাজকে একটু প্রাধান্য দিয়ে মাটির তৈরি জিনিসের দামটা একটু বারতো তাহলে এই মাটির শিল্পটি বাংলাদেশে টিকিয়ে রাখা যেতো।