ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে আলোচিত এ হত্যা মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এ অভিযোগ গঠন করেন।
আদালত আগামী ২৪ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
এ মামলায় আজ বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তাঁরা দোষী কি না জিজ্ঞেস করেন আদালত। জবাবে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন তাঁরা।
গত ২৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর পরই মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।
অভিযোগপত্রে থাকা অন্য আসামিরা হলেন কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ও সোহেল।
আসামিদের মধ্যে তামজিদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
এ ছাড়া আসামি মতিনসহ স্বীকারোক্তি দেওয়া অন্য আসামিরা কারাগারে আটক রয়েছেন। অন্যদিকে কাইয়ুম ও সোহেল পলাতক।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এই পরিকল্পনা করা হয়।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, ভাঙারি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাভেলা সিজারকে হত্যা করেন। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে তাভেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। এতে তাঁকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।
মোটরসাইকেলটি চালিয়েছিলেন মিনহাজুল। মামলায় ওই মোটরসাইকেল আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, বিএনপির নেতা এম এ কাইয়ুমের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে তাভেলা সিজারকে হত্যা করা হয়। কাইয়ুম পরিকল্পনা করলেও সেটা বাস্তবায়ন করেন তাঁর ছোট ভাই আবদুল মতিন।
পিস্তল সরবরাহকারী সোহেল গ্রেপ্তার না হওয়ায় পিস্তলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে পিস্তলটি না পেলেও ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তাভেলা সিজার। ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজে তাভেলাকে গুলি করে তিন হত্যাকারীকে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি হেলেন সাফ ভ্যান ডাক বিক। পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
৫০ বছর বয়সী সিজার তাভেলা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের ‘প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।