সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১১:৩৮ অপরাহ্ন

দেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৬
  • ২৯৫ বার পড়া হয়েছে

 

 

 

 

সোহেল রানা সোহাগ,তাড়াশ(সিরাজগঞ্জ) থেকেঃ

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল। গ্রামটি

হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যূষিত। পাখির কোলাহল আর ছায়া সুনিবিড় সবুজে

ঘেরা এ হাটিকুমরুল এলাকায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় নবরতœ মন্দির ।

১৭০৪ থেকে ১৭১৮ খ্রীষ্টাব্দের মধ্য মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নবরতœ

মন্দিরের গঠন আকৃতি ও নির্মাণশৈলী এতটাই অভূতপূর্ব যে দেশীয়

পর্যটক ছাড়াও জার্মান, জাপান, ফ্রান্স, আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন

দেশের পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসেন। তাই সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং

মন্দিরের আশেপাশের জায়গাগুলো দখলমুক্ত করে পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ

সৃষ্টি করতে পারলে নবরতœ মন্দির হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

নবরতœ মন্দির এলাকা ঘুড়ে জানা যায়, মথুরার রাজা প্রাণনাথের বন্ধুভাজন

ব্যক্তি ছিলেন জমিদার রামনাথ ভাদুড়ী। রাজা প্রাণনাথ দিনাজপুর জেলার

ঐতিহাসিক কান্তজির মন্দির নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সংকটে পড়ে

যান। এদিকে রামনাথ ভাদুড়ী রাজা প্রাণনাথ কে রাজস্ব পরিশোধ করার জন্য

চাপ দেন। কিন্তু রাজা প্রাণনাথ বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে রামনাথ ভাদুড়ী

বন্ধুত্বের খাতিরে নিজ কোষাগার থেকে প্রাণনাথের বকেয়া পরিশোধ করে

দেন। বিনিময়ে তিনি রাজা প্রাণনাথ কে দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরের

আদলে হাটিকুমরুলে একটি মন্দির র্নিমাণের শর্ত জুড়ে দেন। বন্ধুর দেওয়া

শর্ত মোতাবেক রাজা প্রাণনাথ কান্তজির মন্দিরের অবিকল নকশায়

হাটিকুমরুলে এই নবরতœ মন্দির নির্মাণ করেন। আবার অন্য সূত্রে জানা

যায়, রাখাল জমিদার নামে পরিচিত রামনাথ ভাদুড়ী তার জমিদারী আয়ের

সঞ্চিত কোষাগারের অর্থ দিয়েই এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

মন্দিরের বিশাল চত্ত্বরে বিক্ষিপ্তভাবে আরও তিনটি মন্দির রয়েছে। নবরতœ

মন্দিরের উত্তরে রয়েছে শিব পার্বতী মন্দির তার পাশেই রয়েছে দোচালা চন্ডি

মন্দির, দক্ষিণ পাশে পুকুরের পাড় ঘেঁষে রয়েছে পোড়া মাটির টেরো কোটা

কারুকার্য খচিত শিব মন্দির। এই চারটি মন্দিরেই পূজা অর্চনা করা

হতো। তারপর কালের বিবর্তনে ভারত উপমহাদেশে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত, দেশ

বিভাগ ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে হারিয়ে যায় জমিদারের

পূর্বপুরুষেরা। যুগযুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে ঝোঁপঝাড় বুকে নিয়ে

লুকিয়ে ছিল এই নবরতœ। অরক্ষিত এই নবরতেœর অনেক মূল্যবান প্রাচীন

সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে দেশী-বিদেশী র্দূবৃত্তরা বলে জানা গেছে।

পরে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ ঐতিহ্যের এই

নিদর্শণ খুঁজে বের করে। বিশেষজ্ঞদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় নবরতœ মিশরের

পিরামিডের মতো ধীরে ধীরে ফিরে পেতে থাকে প্রাচীন ঐতিহ্য ও তার

হারানো অপরুপ সৌন্দর্য। এরপর ১৯৮৭ সালে সংরক্ষিত ইমারত হিসেবে

সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ গ্রহণ করে নবরতœ মন্দির ও এর আশে পাশের

মন্দিরের কিছু সংস্কার সাধন করে।

নবরতœ মন্দির দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শতশত দর্শনার্থী

আসেন। এছাড়া মন্দিরটির অভূতপূর্ব নির্মাণশৈলী দর্শনের জন্য

জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা

এখানে আসেন মন্দিরটি দেখতে । দুঃখের বিষ নবরতœ মন্দিরটির যথা যথা

প্রাহারার ব্যবস্থা এবং কোন প্রাচীর না থাকায় দর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশ

নিষেধ দিয়েছে করতৃপক্ষ্য। এ নিয়ে দর্শনার্থীদের মাঝে খোভ। ঢাকা-বগুড়া

মহাসড়ক থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার পায়ে হাঁটা রাস্তা, খানা-খন্দনে ভরা

একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পর্যটকদের জন্য রাস্তাটা

পাকা করা অনেক আগেই জরুরী ছিল। নবরতœ মন্দিরটির চারপাশে প্রায়

দু‘শ ঘর হিন্দু পরিবার বসবাস করে। মুল মন্দিরের পাশেই হিন্দুদের পূজা

অর্চনার একটি জড়াজীর্ণ মন্দির রয়েছে। এটাও মূল মন্দিরের সাথে

সামঞ্জস্য রেখে মেরামত করা দরকার। নবরতœ মন্দিরের চারপাশে জায়গাগুলো

দখলমুক্ত করে পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে নবরতœ মন্দির

হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। ফলে সলঙ্গা থানার পরিচিতি ও মর্যাদা

আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সরকারের কাছে এটাই এলাকাবাসির প্রত্যাশা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451