রামগঞ্জ উপজেলায় কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। চালকদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রামগঞ্জ উপজেলার শত শত মাইল দুরের নীলফামারী, কুষ্টিয়া, যশোর, রামগতি ও কুমিল্লার।
এ সংখ্যার সিকিভাগের অংশের প্রকৃত ঠিকানা কারো জানা নাই।
গ্রাম, বাড়ির ঠিকানা বা তারা কোথায় থাকে, আমরা কেউই জানি না। জানার দরকারও মনে করি না। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। এদের উদ্দেশ্য রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ নাকি ভীন্ন কিছু তা আমাদের কারোরই জানা নাই।
এটা আমার মতে বিপজ্জনক।
মূল কথায় আসি, রবিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৯টায় আমার ছোট ছেলে নাফিজ বিন মাহমুদসহ ভাগিনা ফারহান রামগঞ্জ সাতারপাড়াস্থ সানমুন ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুল এন্ড কলেজে প্রতিদিনকার মতো পড়তে যায়।
দু’জনই ক্লাশ ওয়ানে পড়ে।
ক্লাশের সময় শেষে আমার ছেলে একজন ম্যাডামের কাছে প্রতিদিনকার মতো প্রাইভেট শেষ করে পৌনে ১টায় ঘরে ফিরে দাদা বা অন্য কারো সাথে । আর ভাগিনা ফারহান তার ক্লাশ শেষে বেলা সাড়ে ১১/১২ টায় তার বাবা বা মায়ের সাথে ঘরে ফিরে আসে। একা ঘরে ফিরে খুব কমই। কেউ নিতে আসার দেরি হলে দুজনেই একত্রে ঘরে ফিরে।
আজ রবিবার ভাগিনা ফারহান তার ক্লাশ শেষ করে বাড়ি ফেরার কথা, কিন্তু তার বাবার দেরি দেখে নিজে একা একাই ঘরে ফেরার জন্য স্কুল থেকে বের হয়ে যায়।
পৌনে ১টায় আমার ছেলে নাফিজ প্রাইভেট শেষ করে বাসায় আসার পর সবাই জিজ্ঞেস করে ফারহান কই?
নাফিজের উত্তর, ফারহান তো বহু আগেই স্কুল থেকে বের হয়ে গেছে।
সবার মাথায় বাজ পড়ে। আত্মীয় স্বজন সবাইকে খবর দেয়া হয়। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে চারদিকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছেনা ফারহানকে। রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল বাশার মহোদয়কে ভাগিনা ফারহানের ছবি পাঠিয়ে দিলে তিনি নিজেই বের হয়ে পড়েন অন্য অফিসারদের মতো করে।
ঘরে তার মা জ্ঞান হারান, তার বাবা স্কুলে গিয়ে দেখেন ততক্ষনে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। আমার বাবা মা দুজনেই বৃষ্টিতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে আর নাতিকে খুঁজে ফিরছে। আমার কথা বাদ।
প্রায় ২ঘন্টা পর রামগঞ্জ উপজেলার ভাদুর ইউনিয়নের কাজী মার্কেট (বাবুল মার্কেট) এলাকা থেকে স্থানীয় কয়েকজন মানবিক মানুষ কল করেন ফারহান নামের আনুমানিক ৯ বছরের একটি বাচ্চা তাদের হেফাজতে রয়েছে।
বিষয়টি ওসি মহোদয়কে জানিয়ে কাজী মার্কেট এলাকা থেকে ফারহানকে নিয়ে আসা হয়।
পাবেল, শাহীন, নাঈম ও হাশেম চাচাসহ অনেক পরিশ্রম করেছেন। পাশাপাশি যাদের সহযোগিতায় তাকে এত দ্রুত সময় পাওয়া গেছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
ওসি মহোদয় ভাগিনাকে চিপস জুস দিয়ে তাকে কিছুটা স্থীর হতে দেন। আমাকে বলেন, কোন ধমক না দিয়ে আদর করে মূল ঘটনা জেনে নিন।
রাতে আমি তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে বলি কি হয়েছে মামা?
এতদূর কিভাবে গেলে?
ফারহান জানায়, সে স্কুল থেকে বের হয়ে স্কুলের সাথে লাগোয়া দোকানে ব্যাগটি রাখে। কিছু সময়ের মধ্যে দেখে ব্যাগটি স্কুলের সামনে দাঁড়ানো অটোরিকশার আসনে।
সে ব্যাগটি নেয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠা মাত্র অটো চালক গাড়িটি চালাতে শুরু করে।
কথা কম বলা ফারহান অটোরিকশায় চুপচাপ বসে থাকে।
বেশ খানিক পরে অটোচালক তাকে জিজ্ঞেস করে তোর বাড়ি কই, কোথায় নামবি? ফারহান উত্তর দেয় পিঁছনে।
ততক্ষণে অটোরিকশা নন্দনপুর সীমানা পার হয়ে ভাদুরে চলে গেছে।
ভাদুর বাবুল মার্কেট বাজারের শেষ মাথায় একটি স্পীডব্রেকারের (গতিরোধক) সামনে অটোরিকশার গতি কমালে ফারহান লাফিয়ে অটো থেকে নেমে পাশ্ববর্তী দোকানে ঢুকে যায়। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তার ব্যাগ খুলে স্কুলের ডায়েরীতে আমাদের বাসার মোবাইল নম্বর দেখে কল দিয়ে বিস্তারিত জানান।
শাহীন, পাবেল ও নাঈম দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারহানকে নিজেদের কাছে নেয়।
অজানা ভয় এখনো পুরো পরিবারের মাঝে রয়েছে। আমি নিজেও আতঙ্কিত।
পরিশেষে বলবো…
কমবেশি কিছু মানুষের শত্রুতে পরিনত হয়েছি গত কয়েকমাসে। বিশেষ করে আমার গ্রাম সাতারপাড়া ও নন্দনপুর ওয়ার্ড বিএনপির ভোট নিয়ে একটি গোষ্ঠীর কাছে!!
আমার ভাগিনা ফারহানের স্থানে আমার ছেলে নাফিজ কারো টার্গেট নয়তো?
পরিশেষে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা, আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। অন্যের অনিষ্ট থেকে আমাদের রক্ষা করুন হে মহান রাব্বুল আলামিন।
(বিঃ দ্রঃ উপজেলা প্রশাসন চাইলে পৌরসভা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সকল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং সিএনজি অটোরিকশা চালকদের নাম ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারেন। বিশেষ করে ৫ আগষ্ট ২০২৪ এর পর কিছু স্মার্ট ও ভদ্রবেশী অটোরিকশা চালকের সংখ্যা কিন্তু বেড়েই চলছে) এটা সন্দেহজনক। দেশের বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী নয় তো? রিকশা চালক পরিচয় সবচেয়ে সহজ!!
মাহমুদ ফারুক
সংবাদকর্মী সুত্র: fb