রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

বসুন্ধরার যন্ত্রপাতি দিয়ে চলবে মহাখালী আইসোলেশন সেন্টারকে করোনা হাসপাতাল

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৭০ বার পড়া হয়েছে

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় এক বছরের বেশি সময় ফেলে রাখা রাজধানীর মহাখালী করোনা হাসপাতালের দুয়ার খুলছে। বসুন্ধরায় নির্মিত দুই হাজার শয্যার অস্থায়ী করোনা হাসপাতালকে ভেঙে মহাখালীতে জোড়া দেওয়া হচ্ছে। বসুন্ধরা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি দিয়ে মহাখালী আইসোলেশন সেন্টারকে সাজানো হচ্ছে নতুন আদলে।

আইসোলেশন সেন্টারটিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দিয়ে নতুন নামকরণ করা হবে। আগামী ২০ এপ্রিল করোনারোগীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভবে এই হাসপাতালের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মহাখালী করোনা হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির বলেন, এটা দেশের সবচেয়ে বড় কভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে পরিপূর্ণ ১০০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) ও প্রায় সমমানের হাই ডিপেনডেনসি ইউনিট (এইচডিইউ) শয্যা থাকছে ১২২টি। এ ছাড়া সাধারণ শয্যা থাকছে প্রায় ১ হাজার।

তিনি বলেন, ১৫ এপ্রিল নাগাদ অন্তত ৫০টি আইসিইউ ও ২৫০টি সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি শুরু করা যাবে। বাকিগুলোর কাজ চলতে থাকবে। আশা করছি চলতি মাসের শেষ দিকে পুরো হাসপাতালটি প্রস্তুত হয়ে যাবে পূর্ণাঙ্গ কভিড বিশেষায়িত সেবার জন্য। এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ।

পরিচালক বলেন, এই হাসপাতাল ভবনটি সিটি করপোরেশনের। হাসপাতালটির যন্ত্রপাতি, জনবলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অবকাঠামোগত প্রস্তুতির কাজ বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। আর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় থাকছে আর্মস ফোর্সেস মেডিক্যাল ডিভিশন। ৭ শ চিকিৎসকের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং ৫০ জন এর মধ্যেই নিয়োগ হয়েছে। বসুন্ধরায় নির্মিত অস্থায়ী হাসপাতাল ভেঙে সেখান থেকে উন্নত যন্ত্রপাতি এনে এখানে বসানো হচ্ছে।

সরেজমিন গিয়ে যা দেখা যায়, হাসপাতালটির গেটে একটি ব্যানার ঝুলানো রয়েছে তাতে লেখা অস্থায়ী কভিড-১৯ স্বাস্থ্য পরিচর্যা (আইসোলেশন) কেন্দ্র। গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল নিচতলায় সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে গত বছরের ২০ জুলাই থেকে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার চিত্র।

মোট ২০টি বুথ স্থাপনের মাধ্যমে ওই কার্যক্রম পরিচালনার কথা রয়েছে। বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী ও বিদেশি নাগরিকদের জন্য পৃথক নমুনা সংগ্রহ বুথ নির্ধারণ করা রয়েছে।

এখানে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদেশ যাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে নমুনা সংগ্রহ এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা।

ভবনের ছয়তলায় করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ প্রস্তুত করা হচ্ছে। একটা সারির কাজ শেষ। ভেতরে থরে থরে সাজানো আইসিইউ বেড। যেগুলো বসুন্ধরা করোনা আইসোলেশন সেন্টার থেকে এনে এখানে লাগানো হয়েছে। বেডের সঙ্গে পিসিআর যন্ত্রপাতি সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। অন্য সারিতে চলছে ইলেকট্রনিক কাজ। বেড সাজানো হয়নি, ডেকোরেশনের কাজও অনেক বাকি। শ্রমিকরা কাজ করছেন, ক্লিনাররা ঘষামাজা করছেন। কক্ষগুলোতে শয্যা বসানো হলেও যন্ত্রপাতি নেই। যন্ত্রপাতি ও খাবার রাখার ট্রলি নেই। করোনা নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রতিটি তলায় ৩টি করে বুথ বসানো হয়েছে। চিকিৎসকদের জন্য প্রতিটি ব্লকে ২টি করে আলাদা কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। চেয়ার, টেবিল বা মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মোটামুটি সব প্রস্তুত। বাথরুমে পানির লাইনে সংযোগ থাকলেও দরজাগুলো ফিটিং হয়নি এখনো।

শ্রমিকরা বলেন, এখনো টেকনিক্যাল অনেক কাজ বাকি। ভবনের দোতলায় ১৩৯০ বেডের হাসপাতালের জায়গায় ৫০ বেডের ইমার্জেন্সি বেড প্রস্তুত করা হচ্ছে। যার ৩০টি নারী এবং ২০টি পুরুষ রোগীর জন্য। জরুরিভিত্তিতে রোগী ভর্তি ও পরে আইসিইউতে নেওয়ার আগে এখানে রাখা হবে।

হাসপাতালটির বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ উদ্দিন মিয়া বলেন, কেবল মহাখালীর হাসপাতালই নয়, এর সঙ্গে আরো ১০টি হাসপাতালকে করোনা রোগীদের সেবায় বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কভিড রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হলেও সংক্রমণ কমে যাওয়ায় তা বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে, গত সপ্তাহ থেকে ওই হাসপাতালে আবার আগের মতোই ২০০ শয্যার কোভিড ইউনিট চালু হয়েছে।

বসুন্ধরা হাসপাতালটিকে কেন ভেঙে ফেলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুঝতে হবে- ওটা হাসপাতাল নয়; আইসোলেশন সেন্টার ছিল। মাঝে করোনা পরিস্থিতি কমে যাওয়ায় ওখানে কোনো রোগী যেত না। খালি পড়ে থাকার কারণেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওখানকার যন্ত্রপাতিগুলো বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানোর।

জানা গেছে, এই হাসপাতালটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ১ হাজার শয্যার হাসপাতালের জন্য কেনাকাটায় ৭১ কোটি ২৭ লাখ ৭১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যেখানে লিস্ট দেওয়া হয় ৮৯ ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামের। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২৫০ শয্যার জন্য ৬৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬ হাজার ৬১৭ টাকা প্রস্তাব দেওয়া হয়। ৪৪ ধরনের চিকিৎসা ও সহচিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার কথা বলা হয় সেখানে।

সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যা সংকটের কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশন যৌথ বৈঠকে সিদ্ধান্তে ডা. নাসিরকে দায়িত্ব দিয়ে পুনরায় হাসপাতালটি প্রস্তুতির কাজ শুরু করা হয়।

গত ৬ এপ্রিল হাসপাতালের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে ঢাকার সব হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করছি। আড়াই হাজার শয্যাকে ৫ হাজার করা হয়েছে, এরচেয়ে বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451