ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা সেই শিক্ষিকা কে
আর কত হয়রানী হতে হবে ?
সমস্ত রিপোর্ট পক্ষে থাকা স্বত্ত্বেও ৩ বছর যাবৎ কেন ঘুরছেন ঘুরছেন দ্বারে
দ্বারে ?
বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাতৃত্বকালী ছুটিতে থাকার কারণে গত
৩ বছর ধরে হয়রাণীর শিকার হচ্ছে সামছুন্নাহার নামের এক প্রধান
শিক্ষিকা। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চর মৌকুড়ি বেসরকারী
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
সেই সময়কার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, শিক্ষা অফিসের রিপোর্ট, ইউএনও
অফিসের রিপোর্ট, উপজেলা পরিষদের রিপোর্ট, ম্যানেজিং কমিটির
রিপোর্ট সহ সমস্ত রিপোর্ট শিক্ষিকার পক্ষে থাকা স্বত্ত্বেও তাকে ঘুরতে
হচ্ছে দ্বারে দ্বারে ।
তার স্থলে নতুন একজন কে নিয়োগের পায়তারা করে যাচ্ছে একটি মহল। এর
সাথে বর্তমানের শিক্ষা অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত বলে
অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ১৮০ দিনের
মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যান চর-মৌকুড়ি বে-সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সামছুন্নাহার।
এই সুযোগে প্রত্যন্ত পল্লীর এই বিদ্যালয়টিতে তৎকালীন ম্যানেজিং
কমিটি ও প্রভাবশালী মহল মিজানুর রহমান নামের একজন কে নিয়োগ
প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চেষ্টা করে। বিষয়টি জানাজানি হলে চাপে পড়ে
কর্তৃপক্ষ ।
তখন দৈনিক সমকালে ৭ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে ‘ মাতৃত্বকালীন ছুটিই
কাল হলো, শৈলকুপায় চাকরি হারালেন প্রধান শিক্ষিকা’ শিরোনামে,
দৈনিক ইনকিলাবে ২৯ সেপ্টম্বর ২০১৩ তারিখে ‘ শৈলকুপায়
মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাওয়ার অপরাধে চাকরি গেল শিক্ষিকার’
শিরোনামে, দৈনিক খবরপত্রে ২৯ সেপ্টম্বর ২০১৩ তারিখে ‘স্কুল সভাপতির
অভিনব জালিয়াতি, শৈলকুপায় মাতৃত্বকালীন ছুটি অবস্থায় চাকুরী গেল
শিক্ষিকার’ শিরোনামে ও দৈনিক প্রথম আলোতে ৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে
মাতৃত্বকালীন ছুটি চেয়ে আবেদন করার পর প্রধান শিক্ষক চাকরী
হারিয়েছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ৮ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে
‘মাতৃত্বকালীন ছুটি, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা
নিন’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয় প্রথমআলোতে। চ্যানেল ২৪
সহ বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলেও এ সংবাদের ফলাও প্রকাশ হয়।
এরপর উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন অফিস একযোগে তদন্ত চালায়। সমস্ত
তদন্ত রিপোর্ট ও বৈধ প্রধান শিক্ষক হিসাবে সামছুন্নাহার কে ঘোষনা
করে রিপোর্ট দেয়।
এমনকি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকেও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদন্ত
চাই। কিন্তু গত ৩ বছরেও সমাধান করা হয়নি প্রধান শিক্ষিকা
সামছুন্নাহারের চাকুরী প্রসঙ্গটি। কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
নেয়া হয়নি। উল্টো বর্তমানের তদন্ত কমিটি পূর্বের রিপোর্টগুলোকে
অগ্রাহ্য করে শিক্ষিকাকে হয়রানী করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে মিজানুর রহমান নামে যে শিক্ষককে সেখানে নিয়োগের চেষ্টা
চলছে তার ডিগ্রী সনদ জাল হতে পারে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঐ বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির
সভাপতি খয়বার হোসেন। তিনি জানান, বিদ্যালয়টির বৈধ প্রধান
শিক্ষিকা সামছুন্নাহারই ।
আরো জানা গেছে, বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে বেশ কয়েকটি বে-
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কে সরকারীকরণের জন্য যাচায় বাছায় তালিকা
চাওয়া হয়েছে, এই তালিকায় চর মৌকুড়ি বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
রয়েছে। সেখানে শিক্ষকদের তথ্য ছকে প্রধান শিক্ষিকা সামছুন্নাহারের
নাম অন্তর্ভূক্তিকরণের ব্যাপারে গড়িমসি করা হচ্ছে।
মাতৃত্বকালীন ছুিটতে থাকার পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ গত ৩ বছর ধরে
হয়রানীর শিকার হওয়া চর মৌকুড়ি বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান
শিক্ষিকা সামছুন্নাহার জানান, ছুটি ভোগ শেষে যথা সময়ে তিনি
বিদ্যালয়ে যোগ দেন, কিšু‘ কাগজ-কলমে বারবার হয়রাণীর শিকার হচ্ছেন।
তিনি জানান আজো অব্দি ক্লাস করে চলেছেন, তবে অসহায় হয়ে পড়ছেন
ঘুরতে ঘুরতে।
শৈলকুপা উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: জাহিদুল ইসলাম জানান,
নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট পেলে বোঝা
যাবে বিষয়গুলো।