রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

করোনাভাইরাস: ‘কী করি কী করি’ জাতীয় অপ্রস্তুত

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ২৫৬ বার পড়া হয়েছে

শচীন কর্তার এক জনপ্রিয় গানের এই চরণটিই কয়েক দিন থেকে তাড়া করে ফিরছে, ‘কী করি আমি কী করি’। নতুন জাতের করোনাভাইরাসকে ‘জাত’ করার কর্মকৌশল নিয়ে নীতিনির্ধারকদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা দেখে সেটাই মনে হয়। চীনে আটকে পড়া কারা? আসতে চান কারা? কীভাবে কত দিনে আনা হবে ইচ্ছুক লোকজনকে? কোথায় কীভাবে রাখা হবে তাঁদের? এসব নিয়েই চলতে থাকে ‘কী করি কী করি’ জাতীয় অপ্রস্তুত পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতির মধ্যেই উহান থেকে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিমান নেমে যায় কুর্মিটোলায়। যাঁদের গায়ে ১০০-এর ওপর জ্বর, তাঁদের কয়েকজনকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠিয়ে অন্যদের আশকোনায় হজ ক্যাম্পে গণবিছানা-গণশৌচাগারের সুবিধায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর আগে চীন থেকে গায়ে জ্বর নিয়ে ফেরত আসা এক যাত্রী সারা রাত বিমানবন্দরে তড়পিয়েছেন, কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। ‘কী করিলে কী হইবে’সেটা একিন করতে করতে রাত পোহায়ে সকাল হয়েছে। সকালে তাঁর শরীর থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই কাজটা কি রাতেই করা যেত না? এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, এটা নিশ্চিত হয়ে ভর্তি করানো হবে, নাকি সন্দেহভাজন যে কাউকে ভর্তি করানো হবে, তা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝিতে এই ঘটনা। সংকটের এই বিহ্বলতায় কার অপমান?

চীনে এখন যেমন কড়াকড়ি চলছে, তাতে তেমন খতরনাক কিছু হলে তাঁকে তারা উড়োজাহাজেই উঠতে দিত না। যদিও যাত্রী উহান নয়, চীনের অন্য একটি প্রদেশ থেকে সাউদার্ন চায়না এয়ারলাইনসের সাওয়ার হয়ে ফিরেছেন। তার পরও চীনা কর্তৃপক্ষ দুবার তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছিল যে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব নেই। চীন থেকে পুরাদস্তুর ছাড়পত্র নিয়ে তিনি উড়োজাহাজে চড়ার আর দেশে ফেরার অনুমতি পান। ছাড়পত্রের একটা কপিও তাঁর কাছে ছিল।

অন্য এক ফ্লাইটে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আপেল মাহমুদ সপরিবারে চীন থেকে শাহজালালে নেমে একেবারে অবাক। তাঁর সঙ্গে এই লেখকের কথা হয়। চীন থেকে আসা যাত্রী হিসেবে তিনি আশা করেছিলেন তাঁদের জন্য বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। চীনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া ছাড়পত্রের অনুলিপিটি নেওয়ার বা দেখার কোনো লোক তিনি বিমানবন্দরে দেখেননি। বন্দরে উপস্থিত অন্য যাত্রীদের সঙ্গে একই কাতারে মিশে তাঁদের এম্বারকেশনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হয়। অধ্যাপক আপেল মাহমুদ উহানে না থাকলেও তার থেকে কিছুটা দূরে (গাড়িতে ৫ ঘণ্টার পথ) আনহুই নামের যে শহরে তিনি থাকতেন, সেখানেও রেড অ্যালার্ট জারি করে চীনা কর্তৃপক্ষ সবাইকে যার যার ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। মাহমুদ সাহেব চীনের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পিএইচডি করছেন, সেই ইউএসটিসিতে (ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়না) তাঁদের রাখা হয়েছিল সম্পূর্ণ একাকী (টোটাল ইসোলেশন) অবস্থায় যাঁর যাঁর আবাসস্থলে। প্রত্যেককে একটা করে থার্মোমিটার দিয়ে বলে দেওয়া হয়েছিল, ঘরে বসে জ্বর মেপে তা লিখে রাখার জন্য। ঘরের সামনে খাবার পৌঁছিয়ে দিয়ে মোবাইলে বার্তা পাঠানো হতো, দরজা খুলে খাবারটা নিয়েই আবার দরজা বন্ধের জন্য। এ রকম দমবন্ধ সতর্কতায় তিনি একা হলে হয়তো থেকেই যেতেন। কিন্তু স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থেকে যাওয়ার সাহস হয়নি। নিজের বিমা থাকলেও পরিবারের বিমা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। তাই তাঁর চলে আসা। তিনি আক্ষরিক অর্থেই চরম হতাশ হয়েছেন আমাদের শাহজালালের অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে।

এদিকে ভাইরাস-আক্রান্ত উহান থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে হজ ক্যাম্পে অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এখানে এক কক্ষে ৫০-৬০ জন মানুষকে রাখা হয়েছে মেঝেতে পাশাপাশি ডজন ডজন বিছানা পেতে। শীতের মধ্যে মানুষকে মেঝেতে রাখা হলে এমনিতেই ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার কথা। বিয়ে বাড়িতে এমন আয়োজন চলতেই পারে। এটা যে বিয়ে বাড়ির হাসি-ঠাট্টা নয়, সেটা কে কাকে বোঝাবে। এঁদের যে কেউ করোনাভাইরাসের শিকার হলে কত দ্রুত সেটা ছড়াবে, সেটা কি নীতিনির্ধারণের ‘সের-বাটখারারা’ আন্দাজ করতে পারছেন? আশকোনায় ৩১১ জন বাংলাদেশি দেশে এসে তাঁদের স্বস্তি হারাচ্ছেন, চড়ছে দুশ্চিন্তার পারদ।

একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় হজ ক্যাম্পে থাকা এক মা বলেছেন, ‘এর চেয়ে তো চীনে থাকাটাই ভালো ছিল।’ এখানে এসে ভালো নেই তারা। তাঁর ভাষায়, ‘আমার শিশুকে যে দুধটা খাওয়াব সেটা খাওয়ানোর মতোও পানি নেই, কাল থেকে যে খাবারগুলো আসছে, সে খাবারগুলোর প্যাকেটও এখনো পড়ে আছে।’ হজ ক্যাম্পের সার্বিক পরিবেশ কোয়ারেন্টাইনের উপযুক্ত কি না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

আপেল মাহমুদের মতো চীনের নানা সম্ভাব্য বা কম আক্রান্ত অঞ্চল থেকে অনেকেই আশকোনা ছাড়াই যাঁর যাঁর ডেরায় ফিরে এসেছেন বা আসছেন। চীনা মালামাল, পুঁজি, যন্ত্রপাতি, চীনা মানুষ আর তাদের পছন্দের মাংসজাত খাবারে সারা দেশ সয়লাব। এসব মনে রেখে আমাদের জন্য প্রযোজ্য জরুরি স্বাস্থ্য বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। উপদ্রুত দেশগুলোর থেকে নিজের সঙ্গে আনা স্যুটকেসে, হাতব্যাগে বা মালামালের সঙ্গে কোনো খাদ্যবস্তু আসতে যাতে না পারে, সেদিকে নজর রাখা উচিত।

নভেল করোনাভাইরাস যেহেতু মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে, তাই আমাদের মানুষের ভিড় আর বারোয়ারি জায়গাগুলোতে একটু বেশি সাবধান থাকতে হবে। যেমন নামাজ পড়তে যাঁরা মসজিদে যাবেন তাঁরা নিজেদের লন্ড্রি করা/ধোয়া জায়নামাজ নিয়ে যেন যান। বাড়ি এসে সেটা আবার লন্ড্রি করে ফেলুন। সেটা না পারলে কমপক্ষে একটা সাবান কাচা বড় রুমাল নিয়ে যাবেন সেজদার জায়গায় সেটা বিছিয়ে সেজদা দিন। সেলুনে গেলে নিজের তোয়ালে নিয়ে যান বা নিজের একটা সুতি চাদর নিয়ে যান। সেলুনের চাদর, তোয়ালে ব্যবহার করবেন না। যাঁদের হাঁচি-কাশি হয়েছে তাঁরা টিস্যু পেপার নয় বরং নিজের রুমাল ব্যবহার করুন। জনস্বার্থে এসব বার্তা প্রচার করা প্রয়োজন।

বন্দরে-অন্দরে শুধু মানুষ পরীক্ষা করলে চলবে না। আমদানি করা সব খাদ্য বিশেষ করে প্রাণিজাত খাদ্য পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451