ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঝিনাইদহের দুই পাট ব্যাবসায়ীর চার লাখ দশ হাজার
টাকা ছিনতাই হলেও এখনো সেই টাকা উদ্ধার করতে পারিনি পুলিশ। এই
টাকা কার পকেটে উঠেছে এ নিয়ে ব্যাপক শোরগোল ও ধু¤্রজালের সৃষ্টি
হয়েছে।
ছিনতাইকারী দলের দুই সদস্য মাদারীপুর পৌর এলাকার আওয়াজিদ গ্রামের
হাফিজ গাজীর ছেলে ফরহাদ ও ভোলা সদর উপজেলার পঞ্চপট্টি গ্রামের আব্দুল
গনির ছেলে আজিবুল্লাহ খোকাকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তাদের কাছ
থেকে কোন টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
বুধবার দুপুরে দুই ছিনতাইকারীকে কড়া পুলিশ প্রহরায় মাগুরা পুলিশের
কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে ঘটনা তদন্তে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে ঝিনাইদহ
সদর থানা পরিদর্শনে আসেন খুলনার অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর
রহমান। অভিযোগ ওঠায় তিনি ঘটনার সময় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা ও
কনস্টেবলদের টাকার বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। অতিরিক্ত রেঞ্জ
ডিআইজি হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনার সময় পুলিশ কোন টাকা
পায়নি। বিষয়টি জানতে পেরেই তিনি সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি আসার খবরে সকাল থেকেই ঝিনাইদহ সদর থানার
গেটে সাধারণের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এরপর জেলার পুলিশ
কর্মকর্তাদের সাথে রুদ্ধদার বৈঠক শেষে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন অতিরিক্ত
রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর রহমান। যাওয়ার সময় তিনি থানার মধ্যেই
সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
এ সময় পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার
আলী শেখ, সদর সার্কেল গোপিনাথ কানজিলালসহ পুলিশ কর্মকর্তারা
উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার বিকালে মাগুরা ইসলামী ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা
উত্তেলন করে ঝিনাইদহের ফিরছিলেন দুই ব্যবসায়ী ছয়াইল গ্রামের লুৎফর
রহমানের ছেলে সাইদুর রহমান সোহান ও বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আকবর
আলী বিশ্বাসের ছেলে খলিলুর রহমান।
তার মটারসাইকেলযোগে মাগুরার ইটখোলা নামক স্থানে পৌছালে গাড়ির
কাগড়জপত্র দেখার নাম করে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাদের থামানো হয়।
এরপর জেএমবির সদস্য বলে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে ব্যাপক মারপিট করে
কাছে থাকা ১০ হাজার ও ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত চার লাখ টাকা
ছিনিয়ে তাদের ঝিনাইদহ সদরের লাউদিয়া মাঠের মধ্যে ফেলে দেয়।
ছিনতাইকারীরা আরাপপুর বাস ষ্ট্যান্ডের দিকে গেলে পুলিশ ও জনগন
মাইক্রোবাসটি আটক করে। এ সময় ভাড়া বাড়িতে বিশ্রামে থাকা
এসআই হাবিবুর রহমান গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে অভিযানে অংশ নেন। তিনিই
টাকাগুলো পেয়েছেন এমন গুজব ছড়ালেও কোন সত্যতা মেলেনি।
এসআই হাবিব জানান, ঘটনাস্থলে ডিউটিরহ এসআই আলাউদ্দীনকে
তিনি সহায়তা করতেই ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি কোন টাকা পান নি বলে
দাবী করেন। তিনি জানিয়েছেন মাইক্রোবাসে আরো ছিনতাইকারী ছিল।
হয়তো তারাই টাকা নিয়ে আগেভাগে পালিয়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শরা জানিয়েছেন, হুড়োহুড়ির মধ্যে টাকা
মিসিং হতে পারে। সেখানে তো পুলিশ ছাড়া আর কোন লোককে ঢুকতে
দেওয়া হয়নি। এদিকে ব্যাবসায়ী খলিলুর রহমান জানান, তাদের লাউদিয়া নামক
স্থানে ফেলে আসার পর পোশাক পরিহিত এক পুলিশ তাদের জানায় আপনাদের
টাকা উদ্ধার হয়েছে। উপযুক্ত প্রমান দিয়ে টাকা নিতে হবে। এরপর আর টাকা
পায়নি। পুলিশও অস্বীকার করে আসছে।
ব্যাবসায়ী খলিল আরো জানান, পদ্মাকর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল
গনি লিটু তাদের জানিয়েছিলো পুলিশের কাছে তাদের টাকা আছে।
তিনি জানান, বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর রহমানের
সামনে আমি কাুএক চিনতে পারিনি। এদিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে
টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মাগুরা থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি
মামলা হয়েছে। মামলা নং ৪৩। মামলায় ৬ জনকে আসামী করা হয়েছে।
এদিকে ঝিনাইদহে সদা পোশাকে অতিমাত্রায় পুলিশ অভিযানের কারণে
সমাজে এর কুফল পড়তে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের
ভাষ্যমতে অহরহ সাদা পোশাকে মটরসাইকেলে পুলিশ অভিযানের ফলে প্রতারক
চক্ররাও একই পথ অনুসরণ করছে।
এতে মানুষের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। প্রতারক চক্ররা নিজেদের ডিবি
পুলিশ পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা
পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা প্রমানিত হয়েছে।