ভোলা প্রতিনিধি:-
ভোলার চরফ্যাশনে পুরুষাঙ্গ নিস্তেজ করে সাইফুল(১৪) নামের এক
যুবককে হিজড়া বানানো হয়েছে। সাইফুল চরফ্যাশন পৌরসভা ১নং
ওয়ার্ডের কুলসুমবাগ এলাকার মৃত ফজলে করিম তালুকদারের ছেলে।
সাইফুল দেখতে সুন্দর, তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সাইফুল তৃতীয়।
হঠাৎ সাইফুলকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের সবাই তার খোঁজে
দিশেহারা, কিন্তু কোন খোঁজ মিলছে না সাইফুলের। এভাবে ৩ মাস
অতিবাহিত হওয়ার পর হতভাগ্য পরিবার খোঁজ পায় অন্যত্র এক হিজড়া
পল্লীতে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। নিখোঁজ সাইফুলের ভ্রাতা
শাজাহান চরফ্যাসনে হিজড়াদের সঙ্গবদ্ধ আস্তানায় ফাঁদ পেতে নারী
পঁচারকারী জনৈক আলম ও হিজড়া মাধবীর মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে যায়
তার ভাই বাগেরহাট হিজড়াদের আস্তানায় বন্ধী দশায় রয়েছে।
শাহাজান হিজড়া মাধুবীর কাছ থেকে সাইফুলের ওরফে মাহির মোবাইল
নাম্বারের মাধ্যমে সন্ধান পায়। জানতে পারে সে এখন লোক লজ্জায় বাড়ীতে
আসতে চায় না। তার মা জিন্নাতুন নেছা মারা গেছেন, শেষ বারের মত
মাকে দেখতে আয় বলে কৌশলে তাকে বাড়ীতে আনার চেষ্টা করে। আবেগ
আপ্লুত হয়ে মাকে দেখার জন্য বাড়ী আসতে চাইলে বৃষ্টি নামের এক
হিজড়া সহকর্মী তাকে শারিরিক ভাবে নির্যাতন করায় গত বুধবার
নিজ বাড়ীতে পালিয়ে চলে আসে।
হঠাৎ বাড়ীতে আসার পর দেখা গেল সাইফুল এখন আর ছেলে নয় সে মেয়ে
হিজড়া সাজে। গায়ে সেলোয়ার কামিজ, হাতে চুরি, গায়ে ওড়না, নাক
কান ফোরানো এবং গয়না পড়া উৎসুক হাজার হাজার মানুষ দেখতে ভীড়
করে আছে। গত কয়েকদিন যাবৎ একনজর তাকে দেখার জন্য প্রতিবেশিরা
ভিড় করছেন। সাইফুল এখন বাড়ীতে থাকতে চায় না, সে সঙ্গীদের সাথে
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে স্বচ্ছন্দবোধ করছে। পরিবারবর্গ এখন আর
তাকে হাতছাড়া করতে চায়না। তাকে শারিরিক ভাবে যারা অঙ্গচ্ছেদ করে
হিজড়া বানিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এবং সাইফুলের জীবনের
ক্ষতিপূরনের দাবী করেছেন তার পরিবাব।
এ ব্যাপারে কথা হয় সাইফুল ওরফে মাহির সাথে। মাহির কাছে জানতে
চাইলে সে জানায় আমি ছোট বেলা থেকেই নাচ-গান পছন্দ করতাম
এবং স্থানীয় শ্রাবনী খেলাঘর আসরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নৃত্য
পরিবেশন করতাম। আমার এই প্রতিভায় প্রতিবেশী দুলাল মিয়ার স্ত্রী
তারা ওরফে সেতারা বেগম আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে প্রায়ই গান
বাজনা এবং মেয়েদের পোশাক পড়িয়ে নৃত্য করাত এবং টাকা পয়সা
দিত। সে আমাকে ঢাকায় নামিদামী ক্লাবে নাচ-গান করিয়ে অনেক
টাকা আয় রোজগারের প্রলোভন দেখাতো। তার ঘরে প্রায়ই মাদকাশক্ত
লোকজনের পদচারনা ছিল এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়েদের
কালেকশন করে তাদের ঘরে দেহ ব্যবসা চালাতো। আমাকে এদের সাথে
প্রায়ই যৌন প্রবৃত্তিতে বলৎকার করা হতো। হঠাৎ একদিন আমাকে
নেশা খাইয়ে ঘুমের মধ্যে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ও গোপন
অঙ্গে ইনজেশন দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে আমার শারিরিক পরিবর্তন দেখা
দেয়। পরবর্তীতে আমার পুরুষাঙ্গ সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়ে যায়।
চরফ্যাসন পৌর কাউন্সিলর আকতারুল আলম সামু জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ
তার পুরুষাঙ্গে চেতনা নাশক ইনজেকশন পুশ করে তাকে (সাইফুল)
হিজড়া বানানো হয়েছে। বাগেরহাট হিজড়া পল্লীতে দীর্ঘদিন যাবৎ
সাইফুলের শরীরে হরমোনাল নামক ইনজেকশন পুশ করে তাকে পুরুষ হতে
নারীতে রুপান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সাইফুল অনেকটা নারী সুলভ
আচরন করছে। হরমোন ঔষধের প্রতিক্রিয়ায় সাইফুল নারীদের মত উচু বক্ষ
ধারনসহ শারিরিক কিছু পরিবর্তন ঘটেছে।
কৃত্তিমভাবে সাইফুলকে হিজড়া বানানোর ঘটনায় চরফাসন পৌরসভা
কুলসুমবাগ এলাকায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা এই
ঘটনার খল নায়িকা সেতারা বেগমসহ সঙ্গবদ্ধ চক্রকে আইনের আওতায়
এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
গত শনিবার ঘটনাস্থল এলাকায় বিচার শালিশের আয়োজন করা হলেও চক্রের
অন্যতম মূল হোতা সেতারা বেগম ওরফে তারা অজ্ঞাত কারন দেখিয়ে
বৈঠকে উপস্থিত হননি।
চরফ্যাশন পৌর মেয়র বাদল কৃষ্ণ দেবনাথ জানান, নির্মম নিষ্ঠুর চাঞ্চল্যকর
এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। আপনারা কেউ আইন নিজের হাতে
তুলে নিবেন না। অপরাধীকে দ্রæত আইনের আওতায় আনা হবে। আগামী
মঙ্গলবার পৌর ভবনে দ্বিতীয় দফায় শালিশের তারিখ পূন: নির্ধারন করা
হয়েছে।