জাহিদ হাসান জামালপুর থেকে: জামালপুরে গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা ও ব্রক্ষ্মপুত্র অববাহিকায় নতুন করে আরো ৩২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত যমুনা নদীতে বন্যার পানি বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার যমুনা তীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় অর্ধশত ইউনিয়ন ও কয়েকটি পৌরসভায় বন্যা কবলিত হয়ে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার কারণে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলার আভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে মেলান্দহ রেলস্টেশন থেকে ইসলামপুর হয়ে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবার উপক্রম হয়েছে। এছাড়াও গত দুইদিন ধরে জামালপুর সদর, সরিষাবাড়ী ও বকশীগঞ্জ উপজেলা সমুহের ২০টি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়ে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সরিষাবাড়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক লোক কম-বেশি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ উপজেলার অন্তত ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। সরিষাবাড়ী পৌরসভার আরামনগর বাজার ও শিমলা বাজারে পানি প্রবেশ করায় দোকানদার ও হাটে আগতরা দুর্ভোগে পড়েছে। বাজার বসতে না পারায় ক্রমেই বুদ্ধি পাচ্ছে সবজিসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ভুরারবাড়ি এলাকায় সুবর্ণখালী নদীর ভাঙনে কয়েকদিনে বিলীন হয়ে ৩০-৪০টি ঘরবাড়ি। উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় জানান, বন্যার পানিতে ডুবে গেছে পিংনা ইউনিয়ন পরিষদ। আর নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে এ ইউনিয়নের প্রায় ১২০টি ঘরবাড়ি। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ইসলামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল জানান, যমুনা তীরবর্তী এলাকার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। এসব এলাকার পানিবন্দিদের ঘরে ঘরে ত্রানের জন্য হাহাকার এবং বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট চলছে। এছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকার বাড়িঘর এবং ফসলি জমির মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় গো-খাদ্যেরও তীব্র সংকট চলছে। দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষগুলো বাড়িঘরসহ বন্যার তীব্র স্রোতে ভেসে যাবার উপক্রম হয়েছে। চরাঞ্চলের পানিবন্দিদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। দেওয়াগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ জানান, এ পৌরসভার ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পানিবন্দিদের মধ্য থেকে পৌরসভার দু’টি আশ্রয় কেন্দ্রে তিন হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যেই পৌরসভার দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন গ্রামের বন্যা দুর্গতদের মাঝে সরকারি সাহায্যের রিলিফের চাল ও শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও পৌরসভার বন্যার্তদের সাহায্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র খুলে সব ধরণের সহযোগিতার জন্য সকল কাউন্সিলর ও বিত্তবানদের সতর্ক রাখা হয়েছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইসতিয়াক হোসেন দিদার জানান, দেওয়ানগঞ্জের সবগুলো ইউনিয়ন ও পৌরসভার লক্ষাধিক মানুষ বন্যার কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দুর্গতদের সহযোগিতার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাদারগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মির্জা গোলাম কবির জানান, মাদারগঞ্জ পৌরসভাসহ সারা উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহালেও তাদের জন্য এখনও সরকারি ত্রাণ তৎপরতা নেই। এদিকে জেলা প্রশাসনের জরিপে জানা গেছে, জামালপুওে ৪ লাখ ১২ হাজার ৭২০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। পানিবন্দিদের সাহায্যে ৭৭ মেট্রিক টন চাল, ১৭শ পেকেট শুকনা খাবার ও নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে