সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে বানিয়ারচর বাজারের নাম বউ বাজার

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৭
  • ৩২৫ বার পড়া হয়েছে

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : বউ বাজারে চা বিক্রি করছেন
একজন নারী। এ বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অধিকাংশই
নারী। তাঁরা এলাকার গৃহিণী। এ জন্য এ বাজারের নাম করন
হয়েছে বউবাজার নামে। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর
উপজেলায় বানিয়ারচরে এই বাজারটি অবস্থান। প্রায় ৩০
বছর আগে এই বউ বাজারের যাত্রা শুরু হয়।
এ বিষয়ে বাজারের দোকানদার শান্তনু বৈরাগি
সাংবাদিকদের বলেন, আগে লোকজন বানিয়ারচর থেকে
প্রায় দেড়/দুই কিলোমিটার দূরে জলিলপাড় বাজারে
কেনাকাটা জন্য যেত। বিগত ১৯৮৮ সালের ঘটনা। একদিন
জলিলপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে বানিয়ারচরের লোকজনের
ঝগড়া বিবাদ বাধে। এরই জের ধরে জলিলপাড়ের লোকজন
হুমকি ও ঘোষনা দেয় যে বানিয়ারচরের কেউ জলিলপাড়
বাজারে ব্যবসা বা কেনাকাটা করতে এলে তাঁকে বেঁধে
রাখা হবে। এরপর বানিয়ারচরের বাসিন্দারা জলিলপাড় বাজারে
যাওয়া বন্ধ করে দেন। এর কিছুদিন পর থেকেই বানিয়ারচরে
বসে এই বউবাজার।
নাম কেন বউ বাজার? এই বাজারের পানের দোকানি
দয়মন্তী বৈরাগী বলেন, ঘরের পুরুষেরা সকালে কাজে চলে
যান। কেউ যান ক্ষেত খামারে আবার কেউ বা অফিসে।
সকালের রান্নাবান্নার পর গৃহিণীদের হাতে তেমন কাজ
থাকে না। তাই তাঁরা এই বাজারে সবজিসহ নানা পণ্য

বিক্রি করতে আসেন। কিনতেও আসেন অন্যান্য
গৃহিনীরা। নারীরাই ক্রেতা আবার নারীরাই বিক্রেতা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখানে স্থায়ী দোকান
রয়েছে অন্তত ১৫০টি। বেশির ভাগ দোকানের বিক্রেতাই
নারী। তবে নিজেদের কাজ শেষ করে তাঁদের স্বামীরাও
সহযোগিতার হাত বাড়ায়। দুধ, মাছ, শাক-সবজি নিয়ে
প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে তিন শতাধিক বিক্রেতা এই
বাজারে আসেন। তবে এখানে মাছ বা মাংস বিক্রির কাজ
নারীরা করেন না। এটি পুরুষদের জন্যই বরাদ্দ।
বউ বাজারের চা বিক্রেতা শিলা মন্ডল বলেন, ১৫ বছর ধরে
বাজারে চা বিক্রি করছি। প্রায় সবাই নারী। সবই তো
চেনা মুখ, এ কারণে আমাদের কখনো কোনো সমস্যা হয়
না। আমরা ভালোই আছি।
বাজারের আরেক বিক্রেতা ডলি রায় প্রতিদিন সকাল ও
বিকেলে এখানে রুটি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, রুটির
সঙ্গে ডিম ভেজে দিই। অনেকেই তৃপ্তি সহকারে খায়।
দেখেও ভালো লাগে। এই বাজারে ব্যবসায়ীদের একটি
সমিতিও রয়েছে। নাম ‘বউবাজার বণিক সমিতি’। তবে
সমিতির কর্মকর্তারা বেশির ভাগই পুরুষ।
বণিক সমিতির সভাপতি দীপংকর মহন্ত বলেন, আমরা সবাই
সবাইকে চিনি ও জানি। তাই বেচা-কেনায় কোনো
সমস্যা হয় না। পুরুষেরা সকালে মাঠের কাজে চলে যান।
এক বেলা মজুর খেটে একজন পুরুষ আয় করেন ২০০ টাকা।
তাঁর বাড়ির উৎপাদিত সবজি ও গরুর দুধ নিয়ে তাঁর স্ত্রী
এই বাজারে আসেন। এতে প্রতিটি পরিবারই আর্থিক
ভাবে স্বচ্ছল ও লাভবান হচ্ছে। বাজারটি ক্রমেই জমজমাট হয়ে
উঠছে।
জলিলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান অখিল
বৈরাগী বলেন, বাজারে টিউবওয়েল, শৌচাগারসহ যে সব
সমস্যা রয়েছে সে গুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তাঁর প্রত্যাশা এই এলাকায় নারীদের উদ্যোগ অব্যাহত

থাকবে। সব কটি পরিবার আরও স্বচ্ছল হবে। সুখে-শান্তিতে
তাঁদের দিন কাটবে। বাজারের নাম বউবাজার। তবে বউদের
পাশাপাশি বরদেরও অংশ গ্রহণ আছে। বর-বউ মিলেই
জমজমাট বউ বাজার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451