মোঃ আশিকুর রহমান (টুটুল)
জেলা প্রতিনিধি,নাটোরঃ নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া খ্রিস্টান পল্লীতে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত খ্রিস্টান দোকানী সুনীল গোমেজ হত্যাকান্ডের মামলার কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না ডিবি পুলিশ। হত্যাকান্ডের ৩দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই ডিবি পুলিশের কাছে। তবে সুনিল গোমেজ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে তিন থেকে চারটি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে কাজ করছে তারা। তারপরও পুলিশের আশাবাদ খুব শিঘ্রই সুনীল গোমেজ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে । হত্যা রহস্য উদঘাটনে আটক সবুজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামসুল আল্-আমিন এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে সুনিল গোমেজ হত্যাকান্ডের পর এখনও শোক ও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি বনপাড়া খ্রিষ্টান পল্লীর বাসিন্দারা।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাটোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ডিবি) আব্দুল হাই জানান, সুনিল হত্যাকান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার সুনিলের বাড়ির ভাড়াটিয়া সবুজকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫দিনের রিমানন্ডের আবেদন জানানো হয়। আদালত মঙ্গলবার শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। শুনানী শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আব্দুল হাই জানান, সবুজকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার দেয়া তথ্য গুলো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তের কোন অগ্রগতি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল হাই জানান এখনও তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।ওসি আব্দুল হাই আরো বলেন, সুনীল হত্যাকাণ্ড একেবারেই ক্লু বিহিন। যার কারণে হত্যাকাণ্ডের রহস্যজট খুলতে সময় লাগছে। তারপরও আমরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অপরদিকে, হত্যাকান্ডের পর এখনও শোক ও আতংক কাটিয়ে উঠতে পারেনি খ্রিস্টান পল্লীর লোকজন। তারা নিরিহ সুনিল গোমেজ হত্যাকান্ডে হতবিহবল। নিহত সুনিলের ছোটভাই দিনাজপুর চার্চের ফাদার প্রশান্ত গোমেজ বলেন, ভাই হত্যার শোক আমরা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিনা। এরকম একজন নিরিহ মানুষকে কেন খুন করা হলো সে প্রশ্নের জাবাব আমরাও খুজে পাচ্ছিনা। তিনি বলেন, ভাইকে হারিয়ে বৌদি কমলা রিবেরু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ভাতিজি স্বপ্না অনর্গল কেঁদে চলেছেন। এলাকার মানুষজনও নিরাপত্তা হিনতায় ভুগছেন। খ্রিস্টান পল্লীর বাসিন্দা বেনডিক্ট গমেজ বলেন, আমরা আতংকিত। কারণ দেশের নানা স্থানে খ্রিস্টান সম্প্রদায় সহ সংখ্যা লঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা চলছে। এসব হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আটক করতে পারছেনা পুলিশ। এ সব কারণে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন তারা।নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুকার্জী বলেন, সুনিল হত্যাকান্ডকে আমরা সর্ব্বোাচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত তদারকী টিম গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া ডিবি টিমকে সহযোগিতার জন্য ডাকা এসবি থেকে একজন উপ-পরিদর্শক দুই সদস্যের টিম নাটোরে এসেছেন। তারা যৌথভাবে মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।উল্লেখ্য গত ৫ জুন রোববার দুপুরে নাটোরের বনপাড়া খিস্টান পল্লীতে প্রকাশ্য দিনের আলোয় নিজ দোকানে সুনিল গমেজকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।