মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

মানুষের দুর্ভোগ হোক বাজেটে এটা আমরা চাই না : প্রধানমন্ত্রী

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭
  • ২৮১ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাজেট মানুষের জন্য, মানুষের কোনো দুর্ভোগ হোক, মানুষের কোনো কষ্ট হোক এটা আমরাও চাই না, অর্থমন্ত্রীও চান না। আজ বুধবার সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। বিগত ৮ বছরে সরকার বাজেটের আকার বাড়ানোর পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও জোরদার করতে বরাদ্দ দিয়েছে। জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশের উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। একবিংশ শতাব্দির দ্বারপ্রান্তে আমরা পরনির্ভরশীল হয়ে থাকব না। কারণ জাতির পিতা বলেছেন, ‘ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না’।

তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানোর মাধ্যমে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। দেশে কর বান্ধব, রাজস্ব বান্ধব ও বিনিয়োগ বান্ধব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার জন্য তিনি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীসহ দেশের জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ১৯৭৩-৭৪ সালে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬৭ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ১৯৭৪-৭৫ সালে ছিল ৪৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পরবর্তী বছরগুলোতে আর কখনো এই মাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়াস চালিয়ে দেশে একটি রাজস্ব বান্ধব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন জনগণও কর প্রদানে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই কর দেশের উন্নয়নের কাজে লাগে। কর জিডিপির অনুপাত ২০২১ সালের মধ্যে ১৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

রাজস্ব আহরণে তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে অর্থমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম বিষয়ে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নতুন বাজেটের অপেক্ষা না করে চাল আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাস করে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। যে পর্যন্ত আমদানির নির্ভরশীলতা থাকবে সে পর্যন্ত এ শুল্ক অব্যাহত থাকবে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো সঞ্চয়ী হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি। আগে ছিল কেউ যদি ২০ হাজার টাকার বেশি ব্যাংকে সঞ্চয় রাখেন তাকে আবগারি শুল্ক দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী এটাকে ১ লাখ পর্যন্ত সঞ্চয়ী হিসাবকে শুল্কমুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু এটাকে অপপ্রচার করে বলা হয়েছে ১ লাখ পর্যন্ত ব্যাংকে থাকলে শুল্ক কেটে নেওয়া হবে। অথচ তিনি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শুল্ক মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এ জনহিতৈষী প্রস্তাবের জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ১ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত তিনটি স্তর করে শুল্ক হার যাতে না বাড়ানো হয় সে ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে আর কারো কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আগে যেখানে ৫০০ টাকা শুল্ক দিতো সেখানে এখন দিতে হবে মাত্র ১৫০ টাকা, ৫ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত যেটা ৮০০ টাকা করা হয়েছিল সেটা ৫০০ টাকা করা হবে।

মূল্য সংযোজন কর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর আইনটি ১৯৯১ সালে করা হয়। ২০০৮ সালে এটি সংশোধনের জন্য খসড়া প্রণয়ন করা হয়। এ খসড়া নিয়ে বর্তমান সরকার প্রায় সাড়ে ৩ বছর কাজ করে। ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে মতবিনিময়ের পর ২০১২ সালে এ আইনটি সংসদে পাস করা হয়। এ আইনটি নিয়ে নানা কথা উঠেছে। ব্যবসায়ীরাও এ আইনটির ব্যাপারে তেমন সাড়া দিচ্ছেন না। এটি আগের পর্যায়ে যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকবে। ’ আগামী ২ বছর এ ভ্যাট আইন পুরোপুরি কার্যকর না করে যেভাবে আছে সেভাবেই যাতে বজায় রাখা হয় এজন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’- এ চমৎকার প্রতিপাদ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বর্তমান সরকারের সময়ে ৯ বার এবং এর আগে আরো ২ বার মোট ১১ বার সংসদে বাজেট পেশ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। স্বাধীন দেশ হিসেবে কারো কাছ থেকে ভিক্ষা বা অনুদান নিয়ে আমরা চলতে চাই না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। বিদেশি অর্থায়নের ওপর নির্ভর করে অতীতে বাজেট পেশ করা হতো। সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছি। বিদেশি অনুদান কমিয়ে আনা হয়েছে। উন্নয়ন বাজেটের ৯০ ভাগই বাস্তবায়নের সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কর্মসংস্থান সঞ্চারী প্রবৃদ্ধির কারণে বেকারত্বের হার হ্রাস পেয়েছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ফলে দেশের মানুষের আয়ুষ্কাল ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালে ছিল ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ, এখন তা ২৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রকৃত হিসাব অনুযায়ী ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। অতি দরিদ্রের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। সাক্ষরতার হার এখন ৭২ দশমিক ৩ ভাগ। মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার হচ্ছে। ৬ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে এবং ৮ হাজার ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে। ডিজিটাল সেবা কৃষকদের হাতে পৌঁছে গেছে। কৃষিতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। ২৪৫টি কৃষক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষকরা প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যবহার করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451