বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
অবৈধ সম্পদ অর্জন সাবেক এমপির এপিএস অচীন কুমার দাসের দুই কোটি টাকার সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ আদালতের চীনের সাথে জোরালো আলোচনা চলছে শ্রীঘ্রই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। কুড়িগ্রামে উপদেষ্টা  সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান” তালায় দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমবায় সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ তালায় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা অধিকাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক কি আসলেই চালক? নাকি অন্য কোন এলাকার ফেরারি সন্ত্রাসী? বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে ইলিশের সুবাস: এক ট্রলারে ৬৫ মণ মাছ, বিক্রি ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা তালপাতার পাঠশালা ২১ বছর ধরে শিশুশিক্ষায় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন ‘পন্ডিত মহাশয়’ কালিপদ বিশ্বাস খুলনা-পাইকগাছা সড়কের তালা উপ-শহরের বেহাল দশা, জনভোগান্তি চরমে বাগেরহাটে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’ বাস্তবায়নে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত দীপা রানী সরকার তালা উপজেলার নতুন ইউএনও

সাতক্ষীরায় নিম্নমানের রেণু ও ভাইরাসের আক্রমণে চিংড়িতে মড়ক!

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭
  • ১৬৯ বার পড়া হয়েছে

 

সেলিম হায়দার , তালা সংবাদদাতা ঃ

তীব্র তাপদাহ, নিম্নমানের রেণু ও ভাইরাসের কারণে মারা যাচ্ছে সাতক্ষীরার সাদা

সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ি। জেলার অসংখ্য চিংড়ি ঘেরে এ অবস্থার সৃষ্টি

হওয়ায় মাথায় হাত উঠেছে চিংড়ি চাষিদের। দ্রুত এ সংকটের সমাধান না হলে

বাগদা চাষে আগ্রহ হারাবেন বলে জানান চাষিরা।

অভিজ্ঞদের অভিযোগ,একটি ভারতীয় আধা-নিবিড় খামার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান

নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে সরকারি-বেসরকারি কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না

নিয়ে এ জাতীয় মড়কের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যাপারটিকে ধামাচাপা

দেয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে সীমান্ত দিয়ে প্রচুর নি¤œমানের ভারতীয় রেণু চোরাই

পথে এনে দেশিয় মোড়কে বাজারজাত করে কিছু অসাধু পোনা ব্যবসায়ী। এসব

চিংড়ি পোনাও সাতক্ষীরার চিংড়ি চাষের জন্য বড় রকমের হুমকি বলে মন করেন

বিশেষজ্ঞরা।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায়

ছোট বড় মিলিয়ে ৫৪ হাজার ৯ শত ৩৫টি ঘের রয়েছে। সাতক্ষীরায় এ বছর ৬৬ হাজার

৮৯০ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা

হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার

৮০০ মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন হয়েছিল ২৬ হাজার ৮০০ মেট্রিন টন।

সাধারণত আট থেকে ১৪ পিপিটি লবণাক্ত পানি বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য

উপযোগী। এক টানা সূর্যতাপের কারণে পানিতে লবণাক্ততার পরিমান অনেক

বেশি। গতবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও এবার লক্ষ্য্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার

আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখানে এক বিঘা থেকে তিন হাজার বিঘা জমিতে সনাতন

পদ্ধতির মাছের ঘের আছে। অধিকাংশ ঘেরে পানির গভীরতা দেড় থেকে দুই ফুটের

বেশি নয়।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চিংড়ি চাষী ইমদাদুল হক ও ফজলুল হক ফজলু জানান, জেলার

আইলা দুর্গত শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া, রায়মঙ্গল, কপোতাক্ষ ও

কালিন্দি নদীর উপকূলবর্তী এলাকায় সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি সবচেয়ে বেশি

চাষ হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও কালীগঞ্জ, দেবহাটা, সাতক্ষীরা সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার কপোতাক্ষ,

কাঁকশিয়ালী, বেতনা নদীর দুই পাশে চিংড়ি চাষ একেবারে কম নয়। এসব এলাকায়

চিংড়ি চাষের জন্য এক বিঘা জমি লিজ নিতে হয় প্রতি বছরের জন্য ১০ থেকে ১৪

হাজার টাকায়। মৌসুম শুরুতইে চট্টগ্রাম, কলাতলী ও কক্সবাজারের এলাকার বিভিন্ন

হ্যাচারির সরবরাহকৃত রেণু ঘেরে ছাড়া হয়। তবে অনেকেই দ্বিতীয় গ্রেডের

হ্যাচারির রেণু পোনা ব্যবহার করে থাকে। তবে ঘেরে রেণুপোনা ছাড়ার আগে

যথাযথভাবে তার গুণগত মান পরীক্ষা করা হয় না।

লবণাক্ত পানিতে বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি মিষ্টি পানিতে গলদা চিংড়ির চাষও

হয়ে থাকে। এবার এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রচন্ড তাপদাহে নদীর পানির

লবণাক্ততা বাড়তে শুরু করে। একই সাথে পানি গরম হয়ে চিংড়িতে ভাইরাসের

আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তারা আরো জানান, রেণু ছাড়ার পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ

থেকে ঘের থেকে বাগদা চিংড়ি ধরা শুরু করা হয়। এসময় কয়েকটি ঘেরের পানিতে

অজানা ভাইরাসের কারনে বাগদা মরে তা ভাসতে দেখা যায়। ভাইরাসের আক্রমণ ও

তীব্র তাপদাহে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া চিংড়ি মারা যাওয়ার কারণ বলে তারা

মনে করেন। বর্তমানে বিভিন্ন ঘেরের চিংড়ি মরে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়

ভয়ে ছোট অবস্থায় চিংড়ি ধরতে বাধ্য হতে হচ্ছে চাষিরা। ফলে বিদেশে পাঠানোর

জন্য মাছের সেটে ওইসব চিংড়ি বিক্রি না হওয়ায় স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি

৪০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মহাজনদের কাছ থেকে চড়া

সুদে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করতে আসা ব্যবসায়ীদের লোকসানে পড়ে মাথায় হাত

উঠেছে। আধুনিক পদ্ধতিতে সরকারিভাবে চিংড়ি চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আবারো সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন

অভিজ্ঞরা।

আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর গ্রামের চিংড়ি ব্যবসায়ীরা মো.বিপ্লব মোড়ল

জানান, প্রতি বছর এ সময় তার সেটে ২০ থেকে ২৫ মণ চিংড়ি কেনা বেচা

হতো। গত এক মাস যাবৎ প্রতিদিন দুই মণ মাছ বেচা কেনাই কঠিন হয়ে

পড়েছে। ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় তাদের কর্মচারিদের বেতন দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

চিংড়ি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন মশিউর রহমান পলাশ বলেন, গত বছর

বাংলাদেশ প্রথম বারের মত ওই ভাইরাস দেখা দেয়। এটি প্রথম ধরা পড়ে ২০০৯ সালে

চায়নায়, ২০১০ সালে ভেতনাম, ১১ সালে ইন্দোনেশিয়া, মালিয়া, ১২ সালে

থাইলান্ডে ও ২০১৩ সালে ভারতে ধরা পড়ে। এরপর ২০১৬ সালের দিকে আমাদের দেশে ধরা

পড়ে। ওই ভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মূলত ভারত থেকে আসা নিম্নমানের

ডিম ও পোনা (নাপলি) আমদানির কারণে। তবে তিনি মাছে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত

হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তাপমাত্রা ৩৪০ ডিগ্রি হলে, পানির ঢ়ঐ ৮৫

এর উপরে গেলে, পুকুরের তলায় অধিক মাত্রায় কালোমাটি জমা হলে ও খামার

ব্যবস্থাপনা ত্রুটি হলে মাছ ওই রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগের লক্ষণ হিসেবে তিনি

উল্লেখ করেছেন, পোনা ছাড়ার ৩০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ছোট চিংড়ি

মাছের মৃত্যু মাছের খাদ্যনালী আংশিক খালী থাকা।

এদিকে একটি নির্ভর যোগ্য সূত্রে থেকে জানা গেছে, ওই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে

পড়ার কারণ হচ্ছে, একটি ঘেরে যখন রোগ ধরা পড়ে। ওই ঘের মালিকরা তার সমাধানের

জন্য কোন বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা না বলে ঘেরের পানি সেচে নদী ও বা পাশ্ববর্তী

খালে ফেলে দেন। এছাড়াও ভারতের সিপি কোম্পানির এই ব্যবসায়ী নিজেদের

নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি কারো কাছে না জানিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন।

এতে করে দেখাযায় উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়।

শুধুমাত্র ভাইরাসের কারণই ঘেরে চিংড়ি মারা যাচ্ছে এমন অভিযোগ ঠিক নয়।

সনাতন পদ্ধতিতে এখনো ঘের পরিচালনা করায় পরিচর্যা সঠিকভাবে করা সম্ভব হয়

না। সেক্ষেত্রে চিংড়ির খাদ্য হিসেবে ঘেরে প্রয়োজনীয় উপাদান (ফাইটো পাঙ্কটন

ও জুপাটন) তৈরি হয় না। পানির গভীরতা কম থাকায় তীব্র তাপদাহে মাছ মারা

যাচ্ছে। তাছাড়া হ্যাচারিতে ১০ পিপিটি লবণাক্ততার পানিতে রেণু উৎপাদনের পর

তা পরিশোধিত না করে যেকোন পিপিটিযুক্ত পানিতে রেণু ছাড়ার ফলে এক মাস

না যেতেই নতুন পানির সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে চিংড়ি মারা যাচ্ছে।

তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাপর পদ্ধতিতে চিংড়ি রেণুকে বিভিন্ন ধরণের পোকা

মাকড় প্রতিরোধে শক্তিশালী না করতে পারাটাও চিংড়ি মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

অপরদিকে যখন কোন ঘেরে এটি ধরা পড়ে তখন কিছু অসাধু কোম্পানি তাদের

পণ্য বিক্রি করার ঘের মালিকদের অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণ করেন। এবিষয়ে

সচেতন থাকা প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করছেন। সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি

নির্ভর সাতক্ষীরার অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে চাষিদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির

পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি ঘেরে ভাইরাসমুক্ত উন্নতমানের রেণু পোনা

ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, সারা দেশের উৎপাদিত

বাগদা ও গলাদার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হয় সাতক্ষীরা জেলায়। এ জেলায় শুধু

বাগদা ও গলদা নয়, রুই ও তেলাপিয়া ছাড়াও অন্যান্য মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। জলবায়ু

পরিবর্তনজনিত কারণে বাগদা চিংড়ির বিশেষ সমস্যা হয়ে থাকে। বাগদা

চিংড়ি উৎপাদনে ঘেরে পানির গভীরতা তিন ফুট বা এক মিটার রাখার জন্য চাষিদের

পরামর্শ দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তা মানছেন না। তাছাড়া তীব্র তাপদাহে কম

গভীরতা আছে এমন ঘেরের মাটির তলদেশ থেকে এমোনিয়াম সালফেট পানিতে

ছড়িয়ে পড়ে মাছ মরে যেতে পারে। ছত্রাকের কারণে চিংড়ি মারা গেলেও ভাইরাস ও

চিংড়িতে মড়ক লাগার অন্যতম কারণ। এছাড়া ১৯৯৪ সাল থেকে বাগদা মাছে

ভাইরাস লেগে আছে। এটি বন্ধ করার কোন ওষুধ আমাদের কাছে নেই। এটা নিয়েই

চাষ করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451