সোনারগাঁও(নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধি ঃ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনায় শুক্রবার
দুপুরে ডুবুরিরা আরও ৬টি নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছেন। তারা হলেন মোসাম্মৎ
রানু আক্তার, ভানু বেগম, মোসা: সাফিয়া আক্তার, জয়বুননেছা, মোসা:
রুবিনা আক্তার ও মোসা: শান্তা আক্তার। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে
দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। এখনও আরো ১৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনরা
দাবি করছেন।
শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ও বাংলাদেশ
অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর ডুবুরী দল
মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ওইসব মরদেহ উদ্ধার করে।
মেঘনা নদী থেকে শুক্রবার আরো ৬ মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন
সোনারগাঁও থানার ওসি শাহ মো. মঞ্জুর কাদের পিপিএম। নিখোঁজ যাত্রীদের
সন্ধানে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মেঘনা নদীর তীরে
ভিড় করছেন স্বজনেরা। তাদের আহাজারীতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইঞ্জিনচালিত ট্রলারটি বৃহস্পতিবার ডুবে যাওয়ার পর
নদীতে থাকা একটি বালুবোঝাই বাল্কহেড অর্ধশতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার
করেছে। এছাড়া প্রায় ১৫ জন সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মামুন অর রশিদ
জানান, সোনারগাঁওয়ে চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় মেঘনা নদী থেকে শুক্রবার
দুপুর ১টার দিকে ওই ৬ নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে শুক্রবার বিকেলে আরো
এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলো ঢাকার রামপুরা এলাকা শফিক
মিয়ার মেয়ে রুবিনা আক্তার (৩০), রুবিনার মা মোসা: সাফিয়া আক্তার (৪৬),
সাইদুর রহমানের স্ত্রী রানু আক্তার (৩২), শান্তা আক্তার (৩২), ভানু বেগম(৪৪)
জয়বুন নেছা (৬৫)। এ ঘটনায় এ নিয়ে মোট ১০ জনের মরদেহ পাওয়া গেল।
এদিকে শুক্রবার আরো ৬ জনের মরদেহ উদ্ধারের পর আরো ১৩ জন নিখোঁজের
নামের তালিকা এখন তাদের হাতে রয়েছে বলে সোনারগাঁও থানার ওসি শাহ
মো: মঞ্জুর কাদের জানান। তিনি বলেন, নদীতে ডুবে যাওয়া ট্রলারটিও শনাক্ত
করা হয়েছে। ভেতরে আরও মরদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবার সকাল
থেকে নিখোঁজদের সন্ধানে নৌবাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার
সার্ভিসের ডুবুরি দল মেঘনা নদীতে তল্লাশি শুরু করে। নিখোঁজদের স্বজনরা
নদীর তীরে ভিড় করছেন।
ডুবে যাওয়া ট্রলারের যাত্রী আবু বক্কর জানান, এখনও তাদের দলের ৯ জনের
কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এছাড়া বৃহস্পতিবারে নিহত আব্দুস সাত্তারের স্বজনরা জানান, নিহত
সাত্তারের স্ত্রী শিল্পী বেগম, শ্যালিকার স্বামী শাহজাহান, শাহজাহানের বোন
শম্পা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের দলের ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকার রামপুরা এলাকা থেকে ৯০ জন যাত্রী নিয়ে
ইঞ্জিনচালিত ট্রলারটি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বেলতলীর সোলেমান শাহ
লেংটার মেলায় যাচ্ছিল। পথে বৃহস্পতিবার বিকালে সোনারগাঁওয়ে
সম্ভুপুরা ইউনিয়নের চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় মেঘনা নদীতে প্রবল ¯্রােত ও
অতিরিক্তি যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে ট্রলারটি নদীতে ডুবে যায়। এসময়
ট্রলারটির পাশ দিয়ে যাওয়া বালুবোঝাই একটি বাল্কহেড অর্ধশতাধিক
যাত্রীকে উদ্ধার করে। এছাড়া প্রায় ১৫ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছে।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার
করে। বাকিরা নিখোঁজ রয়েছেন। পরে বিকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফায়ার
সার্ভিস ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ
(বিআইডব্লিউটিএ) এর ডুবুরী দল নদীতে তল্লাশী চালিয়ে এক শিশু, দুই
নারী সহ ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। ওই সময়ে উদ্ধারকৃত ৪ জন হলো ঢাকার
রামপুরা এলাকার আব্দুস সাত্তার, তার মেয়ে লামিয়া আক্তার নদী, জোহরা
বেগম, কাঞ্চন বেগম।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহীনুর ইসলাম জানান,
নিহতদের প্রত্যক পরিবারকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষে ২০ হাজার টাকা
করে আর্থিক অনুদান ঘোষনা করা হয়েছে । তিনি জানান, নদীতে প্রচন্ড
¯্রােতের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যহত হচ্ছে। নতুন করে শুক্রবার দুপুরে উদ্ধার
কর্মীরা আরও ৬টি মরদেহ উদ্ধার করেছে। বাকী নিখোঁজদের সন্ধানে ফায়ার
সাভির্স ও বিআইডব্লিইটিএ এর ডুবুরীদল নদীতে উদ্ধার তল্লাসী চালাচ্ছে।
উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে কোস্টগার্ডও। ডুবে যাওয়া ট্রলারটির সন্ধান
পাওয়া গেছে। এটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এতে আরও মরদেহ পাওয়া যেতে পারে