অধ্যাপক আখতারুজ্জামান,সিংড়া (নাটোর):
কালের বিবর্তনে নাটোর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী
ঢেঁকি। এখন আর নবান্ন উৎসব, পৌষ পার্বণ কিংবা বিশেষ কোনো
অনুষ্ঠানে ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ শোনা যায় না।
বর্তমানে এই অঞ্চলের গুটি কয়েক বাড়িতে ঢেঁকি দেখা যায়। অথচ এক
সময় চলনবিলের প্রতিটি কৃষক পরিবারেই ধান ভানাতে ঢেঁকির প্রচলন
ছিল। সে সময় পরিবারের নারীরা ধান, গম, ভূট্রা সহ বিভিন্ন শস্য ভাঙার
কাজ ঢেঁকিতেই করত। বিশেষ করে শব-ই- বরাত, ঈদ, পূজা, নবান্ন উৎসব,
পৌষ প্রার্বণ সহ বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে পিঠা-পুলি খাওয়ার জন্য
অধিকাংশ বাড়িতে ঢেঁকিতে চালের আটা তৈরির ধুম পড়ে যেত। সে সময়
গ্রামের বধূদের ধান ভানার গান আর ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে চারিদিকে
হৈচৈ পড়ে যেত। বাড়িতে চলতো জামাই মেয়ের আড্ডা। তাছাড়া সূদুর
অতীতে এলাকার বড় কৃষকরা আশে পাশের দরিদ্র নারীদের টাকা দিয়ে
ঢেঁকিতে আটা ভাঙিয়ে নিতেন। আবার অনেক দারিদ্র পরিবার ঢেঁকিতে
চাল ভাঙিয়ে হাটে-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। আর
ঢেঁকিতে ভাঙা পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু চালের বেশ কদর ছিল। কিন্তু কালের
বিবর্তনে ধান-গম ভাঙা যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে গ্রাম বাংলার সেই
ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রাম-গঞ্জের দু-একটি বাড়িতে
এখনও ঢেঁকি দেখা গেলেও অদূর ভবিষ্যতে ঢেঁকির প্রচলন থাকবে না বলে
মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।
চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সাইফুল
ইসলাম বলেন, এক সময় এই অঞ্চলে ঢেঁকিতে ধান ভানার ব্যাপক প্রচলন ছিল।
কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতির আবির্ভাবে কালের গর্ভে ঢেঁকি হারিয়ে
যাচ্ছে। তারপরও সেই ঢেঁকির কদর নাটোরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দু-একটি
বাড়িতে এখনও দেখা যায়। তবে ঢেঁকিছাটা চালে আমিষের যে আধিক্য
ছিল যন্ত্রে ভাঙা চালে তা পাওয়া যায় না।