মুন্সিগঞ্জ সংবাদ দাতা : আলু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত মুন্সীগঞ্জ জেলায় এবার রেকর্ড পরিমান ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। গত-বছরের তুলনায় এবার আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলাটিতে পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু হতে আরো ৭-৮ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা। ইতিমধ্যে রংপুর, কুডিগ্রাম,জামালপুর, চাপাই নবাবগঞ্জ,কুষ্টিয়া, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা আসতে শুরু করেছে। তবে এবার পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারী শ্রমিকদের চাহিদা বেশী। উচু বা আগে রোপনকৃত জমিগুলোতে আলু উত্তোলন শুরু করে দিয়েছেন কৃষকরা। যারা আলু মজুদ কিংবা কোল্ড স্টোরে সংরক্ষন করবে তারা আরো ৪-৫ দিন পর থেকে শুরু করবে বলে জানা যায়। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত আলু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত শ্রমকিরা প্রতি বছরের ন্যায় এবার আলু উত্তোলন কাজে যোগ দিয়েছে। তবে থেমে নেই নারী শ্রমিকরাও । নারী শ্রমিকরা এবার পুরুষ শ্রমিকদের আগেই মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের বাড়ীতে এসে শ্রম বিক্রি শুরু করেছে। সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একজন পুরুষ শ্রমিককে ৩ বেলা খাবারসহ ৩০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। কিন্তু কৃষকদের দাবি নারী শ্রমিকরাই পুরুষদের সমান আলু উত্তোলন করতে পারে। মহিলা শ্রমিকদের ২০০ টা মজুরি দিয়ে পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করানো যায়। এতে কৃষকদের আলু উত্তোলন ১০০ টাকা খরচ কমে আসে বলে জানান একাধিক কৃষক। সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই আলু উত্তোলন কাজে নারী শ্রমিকদের কর্ম ব্যস্ততা। বিস্তৃর্ণ জমিতে এখন শুধু শুধু আলুু উত্তোলন আর জমিতে মজুদ করার চিত্র। জেলার প্রধান এই অর্থকারি ফসল আলু নিয়ে কৃষকের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই । আলু ভিত্তিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। থেমে নেই নারী শ্রমিকরাও তারাও পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে আলু উত্তেলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জে এবছর প্রায় ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৩৫ টন করে আলু হবে বলে আশাবাদ তারা।সব মিলিয়ে ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩৭৫ লক্ষ ৫০০ মে.টন আলুর উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারন করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।
কৃষক জলিল জানান,৪-৫ দিন পর পুরো ব্যস্ততা বাড়বে আলু উত্তোলনে। নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা বিভিন্ন জেলা থেকে এসে কৃষকদের বাড়ীতে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। পুরুষ শ্রমিক না নিয়ে নারী শ্রমিক বেশী নিলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারী আর পুরুষ শ্রমিক এক সমানই আলু কুঁড়াতে পারে। নাঙ্গল চালাতে ২-৩ জন পুরুষ শ্রমিক হলেই চলে বাকী কাজগুলো নারীরাই করতে পারে । এতে আলু ঘরে তুলতে খরচটা একটু কম লাগে ।
একাধিক শ্রমিকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, এখন পুরোদমে চলছে আলু উত্তোলনের কাজ তবে কয়েকদিন পর কাজের চাপ আরো বাড়বে। জামালপুর থেকে আসা নারী শ্রমিক নাছিমা বেগম জানান, আমরা পুরুষের সমান কাজ করি কিন্তু মজুরি ভাল পাচ্ছিনা ৩ বেলা খাবার পাই আর নগদ ২০০ টাকা। বিনিময়ে সকাল ৭ টা থেকে বিকাল পর্যন্ত জমিতে কাজ করতে হয়। জামালপুরে যাওয়া আসার খরচ করে বেশী টাকা টিকেনা। মজুরি বাড়ালে আমাদের জন্য ভাল হতো। ১৫দিন কাজ করলে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পাইতাম। কিন্তু এখন ১৫ দিন কাজ করলে পাইব ৩ হাজার টাকা।
উপ-পরিচালক কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তর, মুন্সীগঞ্জ মোঃ হুমায়ন কবির জানান, এবারও জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হবে। আমরা কৃষকদের আলু তাদের বাড়ীতে মজুদ রাখার নানা পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছি। কোল্ড স্টোরে রাখলে কৃষকদের খরচ বেড়ে যাবে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে আলু কয়েক মাস বাড়ীতে মজুদ রাখলে কুষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে।
আলু উত্তোলনের পর ন্যায্য মূল্যসহ বিদেশে রপ্তানি, পরিবহন ব্যবস্থা ও হিমাগারে সংরক্ষনের সুযোগ পাবে আলু উৎপাদনের সর্ববৃহত মুন্সীগঞ্জ জেলার কৃষকরা। এমনটাই প্রত্যাশ্যা এ অঞ্চলের সকল কৃষক ও সর্ব সাধারনের।