গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :
গরমের প্রভাব আসার সাথে সাথে গোপালগঞ্জের হাত পাখা তৈরির কারিগরদের যেন
বাতাস খাওয়ার সময় নেই। গরমে মানুষকে একটু শান্তির
পরশ দিতে দিন রাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন
গোপালগঞ্জের তালপাখা কারিগররা।
পূর্ব পুরুষের ব্যবসা করে এখনো সংসার চালাচ্ছে প্রায়
শতাধিক পরিবার। গরম শুরুর সাথে সাথে তাদের কাজ বেড়ে
গেছে। তাল পাখা তৈরি তাদের পেশা ও বানিজ্যিক
ভিত্তিতে করে থাকে। এদের কোন জমি নাই যে মাঠে কৃষি
ফসল চাষ করবে। এদের প্রধান ও একমাত্র পেশা হাত পাখা
তৈরি। গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কাঠি,
গান্দিয়াসুর, জলিরপাড়, বেন্নাবাড়ী এলাকার হাত পাখা
তৈরি কারিগররা বলেন, গরম পড়লেই হাত পাখা পল্লীর
কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। যেন কথা বলার সময় তাদের
নেই। শরীর দিয়ে নোনতা পানি বের হলেও নিজেরা হাত পাখা
দিয়ে বাতাস খাওয়ার সময় নেই তাদের। কেউ বা তাল পাতা
কেটে সাইজ করছে, কেউ সেলাই করছে আবার কেউ বা
হাত পাখা তৈরি করছে কেউ আবার প্রস্তুত হওয়া হাত পাখা
গুলো বিক্রির জন্য বোঝা বাঁধছে।
হাত পাখা তৈরীর কারিগর মমিনুল বলেন, তাদের পূর্ব পুরুষরা
এই তাল পাখা তৈরি করে জীবন জীবিকা চালাতো। ফলে
তারাও পূর্ব পুরুষের কাজটি ধরে রেখেছেন। তিনি আরো
জানান, কাঠি, গান্দিয়াসুর, জলিরপাড়, বেন্নাবাড়ী
এলাকার প্রায় ৫০টি পরিবার পাখা তৈরির কাজ করে থাকেন।
নড়াইল ও যশোর থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ি মো: আলম
ও মো: জামান শেখ জানান, গোপালগঞ্জের তালপাখা এলাকার
ক্রেতাদের কাছে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। প্রতিটি বাড়িতে
পাখা তৈরির কাজে এত ব্যাস্ত যে কারও কথা বলার সময় নেই।
কাজের চাপে অনেকে সকালে ভাত খায় আর রাতে খায়। কাজের
চাপের কারনে তারা ভাত খাবার পর্যন্ত সময় পায় না।
পাখা তৈরীর করিগর আমিনুল ইসলাম জানান, হাত পাখা
তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা সংগ্রহ করা হয় শীতকালে।
নড়াইল, মাগুরা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী এলাকা থেকে তারা পাতা
সংগ্রহ করে। এই তালপাতা এনে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে
হয়। তারপর পাতা ভিজে নরম হয়ে গেলে পানি থেকে উঠিয়ে
তা কেটে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটা পাতায় দুটো
পাখা হয়। এই পাতা পুনরায় বেঁধে রাখা হয়। এ ভাবে রাখার
পর গরমের মৌসুম আসার সাথে সাথে সে গুলো আবার
পানিতে ভিজতে দেয়া হয়। পানিতে দেবার পর পাতা নরম হয়ে
গেলে শুরু হয় মূল পাখা তৈরীর কাজ। সাধারণত পরিবারের
বড়রা পানিতে ভিজে নরম হয়ে যাওয়া পাতা ছাড়িয়ে পাখা
আকৃতির করে চারিদিক কেটে সমান করে থাকে। আর
বাড়ির মেয়েরা সে গুলো বাঁশের সলা দিয়ে বেঁধে ফেলে।
পরিবারের ছোট সদস্যরা এ গুলো সুচ আর সুতা দিয়ে
সেলাই করে থাকে। এ ভাবে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠে
তালপাখা। বাড়ির ছেলে, মেয়ে, শিশুরা ও গৃহবধুরা সবাই
মিলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১/২টা পর্যন্ত পাখা
তৈরির কাজে ব্যাস্ত থাকেন।
কয়েকজন গৃহবধু জানান, তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম
থেকে উঠে দু’বেলার খাবার রান্না করে রাখে। দুপুরে
গৃহবধুরা কেউ রান্না করে না। তারা শুধু মাত্র সকাল ও রাতে
রান্না করে।
আমিনুল ইসলাম আরো জানান, তাদের তৈরিকৃত পাখা
পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করা হয়। এখান থেকে পাইকাররা
প্রতিপিস পাখা ১২/১৫ টাকা দরে ক্রয় করে নিয়ে খুচরা
২০/২২ টাকায় বিক্রি করে। মুলত পাখা ব্যবসা থাকে গরমের
৩/৪ মাস। গোপালগঞ্জের পাখা বিশেষ করে নড়াইল, কুষ্টিয়া,
মাগুরা, রাজশাহী, নাটোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের
বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়িরা এসে পাইকারি দরে পাখা
কিনে নিয়ে যায়।