শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

জন্ডিস হলে কি করবেন? জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতীকার সম্পর্কে জেনে নিন

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
  • ২৭৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলার প্রতিদিন ডটকম ঃ

 

জন্ডিস সবার কাছে পরিচিত একটি শব্দ। কমবেশি সবাই এই রোগ সম্বন্ধে জানেন। সময়মতো এর চিকিৎসা না করা হলে রোগ জটিল হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।  জন্ডিস (Jaundice) কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। এতে চামড়া ও চোখ হলুদ দেখায় কারণ শরীরে বিলিরুবিন নামে হলুদ রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।

বিলিরুবিনের স্বভাবিক পরিমাণ < ১.০-১.৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। এর দ্বিগুণ হলে বাইরে থেকে বোঝা যায়। কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যায়। চামড়া পাণ্ডুর বা ফ্যাকাশে দেখায় বলে একে আগে পাণ্ডুরোগ বলা হত। ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ডিসের একটি প্রধান কারণ হল ভাইরাস ঘটিত হেপাটাইটিস।

জন্ডিস কি? -জন্ডিস বলতে বুঝায় ত্বক-চোখ-মিউকাস মেমব্রেনে হলুদাভ রঙ দেখা যাওয়াকে। জন্ডিস কি কোন রোগ? -মনে রাখবেন, জন্ডিস কোন রোগ নয়, বরং এটি হলো রোগের লক্ষন।

জন্ডিস আসলে কি?

ত্বক, মিউকাস মেমেব্রেণ এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াকে জন্ডিস বলে। সাধারণত: আমাদের শরীরে প্রতিদিন ১% পুরনো লোহিত কণিকার স্থলে নতুন লোহিত রক্ত কণিকা স্থানান্তরিত হয়। পুরনো লোহিত রক্ত কণিকা গুলো বিলিরুবিন উৎপন্ন করে, যা পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

কোন কারণে শরীর থেকে বিলিরুবিন না বের হতে পারলে এই অধিক বিলিরুবিনের জন্য জন্ডিস হয়। বিলিরুবিনের কারণে ত্বক, চোখ ইত্যাদি হলুদ হয়ে যায়। জন্ডিসের কারণে অন্যান্য সমস্যাও দেখা দেয়।

লক্ষণ ও কারণ

প্রধান লক্ষণ হল চোখ ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া। সমস্যা বেশি হলে পুরো শরীর গাঢ় হলুদবর্ণ ধারণ করতে পারে। অনেকসময় পায়খান সাদা হয়ে যাওয়া, চুলকানি, যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও দেখা যায়। এছাড়া শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, বমি, পেটব্যথা ইত্যাদি তো আছেই।

“জন্ডিসের কারণকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ‘হেপাটোসেলুলার’, ‘অবস্ট্রাকশন’ এবং ‘হেমোলাইটিক এনিমিয়া’। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানোর মাধ্যমে এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, জীবাণুমুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ করাই জন্ডিসের আক্রমণ থেকে বাঁচার মূলমন্ত্র। রাস্তাঘাটে পানি, ফলের জুস, সরবত ইত্যাদি খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। সময়মত হেপাটাইটিস এ এবং বি’র টিকা নিতে হবে। হেপাটাইটিস বি’র ক্ষেত্রে প্রথম মাসে একটি, দ্বিতীয় মাসে একটি বা ছয়মাসের মধ্যে একটি ডোজ দেওয়া হয়।

হেপাটাইটিস এ’র ক্ষেত্রে একটি ডোজই যথেষ্ট। আর দুই ক্ষেত্রেই পাঁচ বছর পরপর বুস্টার টিকা দেওয়া হয়। প্রতিটি টিকার দাম বেসরকারীভাবে সাধারণত ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা হয়ে থাকে। তবে জন্ডিস হলে টিকা নিয়ে কোনো লাভ হয় না। তাই সুস্থ থাকতে আগেই টিকা নিতে হবে।

জন্ডিসের চিকিৎসা সম্পর্কে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, যেহেতু জন্ডিস কোনো রোগ নয়, তাই এর কোনো ওষুধ নেই। সাত থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস এমনিতেই সেরে যায়।

  

তিনি আরও বলেন, “জন্ডিস হলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে। যকৃতের প্রতি অতিরিক্ত যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। প্রচুর শর্করাজাতীয় ও ভিটামিন-সিযুক্ত খাবার খেতে হবে। গ্লুকোজ, আখের রস, আনারস ইত্যাদি জন্ডিস রোগীর জন্য উপকারী।”

জন্ডিস হলে প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন বা ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। পরিপাকতন্ত্রে জমে থাকা জীবাণুগুলো যাতে প্রদাহ তৈরি করতে না পারে সেজন্য রোগীকে প্রতিদিন কমপক্ষে একবার হলেও পায়খানা করা নিশ্চিত করতে হবে।

ডা. কামরুল হাসান পরামর্শ দিতে গিয়ে আরও জানান, জন্ডিস কোনো রোগ নয় বলে একে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। জন্ডিসের চিকিৎসা নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কেউ ঝাড়ফুঁক করে জন্ডিস নামায়, রোগীকে অতিরিক্ত হলুদ দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়ান, কেউ আবার বিভিন্ন গাছের শেকড় খান। এগুলো সম্পুর্ণ ভুল ধারণা। জন্ডিস হলে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

শিশু এবং বড়দের ত্বক, চোখ ইত্যাদি হলুদ হয়ে গেলো জন্ডিস হয়েছে বলে মনে করতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

কোথায় চিকিৎসা করাবেন

  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  • জেলা সদর হাসপাতাল
  • মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
  • বেসরকারী হাসপাতাল

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

  • রক্ত পরীক্ষা
  • যকৃতের কার্যকারিতা এবং কোলেস্টরল পরীক্ষা
  • প্রোথোম্বিন টাইম (Prothrombin time)
  • পেটের আল্ট্রাসাউন্ড
  • রক্তের পরীক্ষা
  • প্রস্রাব পরীক্ষা
  • যকৃতের বায়োপসি

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

রোগের ধরণ, মাত্রা, রুগীর বয়সের উপর জন্ডিসের চিকিৎসা নির্ভর করে।  চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে ঔষধ সেবন এবং অন্যান্য বিষয় মেনে চলতে হবে
  • শিশুদের ফিজিওলজিকাল জন্ডিসের (Physiological Jaundice) ক্ষেত্রে কিছু দিনের লাইট থেরাপী দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে
  • নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে বিলিরুবিনের মাত্রা মারাত্মক আকার ধারণ করলে রক্ত পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে

জন্ডিস রোগীর বাড়ীতে যত্ন নিন

  • চিকিৎসার আগে জন্ডিস হবার কারণ খুঁজে বের করতে হবে
  • কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং তাজা ফল খেতে হবে
  • রান্না সহ বিভিন্ন কাজে টিউবয়েলের পানি ব্যবহার করতে হবে
  • হাতের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে
  • রুগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
  • খাবার-দাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে
  • স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে

 

 

তথ্য সূত্রঃ wikipedia/bdnews24/ntv

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451