বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

মানবাধিকার-সাংবাদিক কর্মীর সঙ্গে পুলিশের আচরণ ও বিভিন্ন কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা!

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
  • ১৪০ বার পড়া হয়েছে

হেলাল শেখ , ঢাকা ঃ

সারা দেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা বা সংবাদ কর্মী অথবা সাংবাদিক মাত্র

কয়েক হাজার। আর সেই মানবাধিকার-সাংবাদিক কর্মীর সঙ্গে পুলিশের আচরণ ও বিভিন্ন

কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা নিয়ে নানারকম অভিযোগ উঠেছে জনমনে।

বিশেষ করে মানবাধিকার সংস্থা বা সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা সামন্য তিল পরিমান ভুল করলে তাদের উপর

অমানুসিক নির্যাতন, হামলা, মামলা হয়, এমনকি সাংবাদিক সাগর রুনি, রঞ্জ ও শিমুল হত্যার মতো

ঘটনা ঘটাচ্ছে। এই সব ঘটনার মূল নায়করা অনেকেই পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। মানবাধিকার বা

সংবাদ কর্মী অপরাধ করলে তদন্ত করেন পুলিশ অফিসার। আর সাংবাদিকের সঙ্গে কোনো পুলিশ খারাপ

আচরণ বা হামলা, মামলা করলেও তার বিচার হয় না বলে অনেক সাংবাদিকের অভিযোগ রয়েছে। অনেক

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় অনেকেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। কিন্তু

বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা এবং সাজা হলেও আবার চাকুরি ফিরে পাচ্ছেন,

অনেকেই চাকুরি করছেন। এখানেই প্রশ্নঃ সকল অবিচার, নির্যাতন, হামলা, মামলা কি

সাংবাদিকদের উপর করবে, কিন্তু কেন কিছু পুলিশ সাংবাদিকদের দেখতে পারেন না? কারণ হলো,

কথিপয় পুলিশ সদস্য অপরাধ করেন আর সেই অপরাধের সংবাদ প্রকাশ ও প্রতিবাদ করলে তখন থেকে

সাংবাদিক হন পুলিশের শক্র। সাংবাদিকরা কখনো চুরি, ডাকাতি বা ছিনতাই করেন না। তাদেরকে

কিছু পুলিশ সদস্য ফাঁসিয়ে দেন। তথ্যে জানা গেছে, গত ছয় বছরে প্রায় ৭৬ হাজার পুলিশ বিভিন্ন

অপরাধে সাজা পেয়েছেন। এবার আসি পুলিশের আচরণ ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের

ধারাবাহিকতার বিবরণ।

বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর কথিপয় সদস্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থামানো যাচ্ছে না, আর

পুলিশ সদস্যরা ফৌজদারি অপরাধে জড়ালেও তাদের তদন্ত চলছে পুলিশের বিভাগীয় পর্র্যায়ে। এতে তারা

সাময়িক বরখাস্ত বা সাসপেন্ড, প্রত্যাহার, বদলির মতো দন্ডে দন্ডিত হয়ে অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, শ্লীলতাহানি, যৌনকর্মীদের দিয়ে

বিভিন্ন যুুবকদের ফাঁসানো, জমি বা ফ্ল্যাট দখল, গ্রেফতার বাণিজ্য, ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন

অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য। রাজধানী ঢাকায় সম্প্রতি এ ধরনের কয়েকটি

ঘটনা তদন্ত করছে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের একাধিক তদন্ত কমিটি।

জানা গেছে, বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর সদস্য প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজারের মতো। কর্র্তব্যে অবহেলা,

মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অপরাধে সম্পৃক্ততা বা পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে গত ৬ থেকে ৭

বছরে সাজা পেয়েছে ৭৬ হাজার ১৬২ পুলিশ সদস্য। পুলিশ সদর দফতর ও একাদিক সংবাদপত্র সুত্রে জানা

গেছে, গত ৬-৭ বছরে সাজা পাওয়া পুলিশের মধ্যে লঘুদন্ড পেয়েছেন ৭১ হাজার ৭৭০ জন। গুর”দন্ড পেয়েছেন

৪ হাজার ৩৩ জন। ৭৬ জন পুলিশ সদস্য সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের আসামি, আদালতে তাদের বিচার

চলছে। যারা গুরদন্ড পেয়েছেন তাদের মধ্যে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ৫৫১ জনকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ পুলিশই

সাসপেন্ড, প্রত্যাহার, বদলির মতো দন্ডে দ-িত হয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।

বিশেষ করে পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আট মাসে পুলিশের কনস্টেবল থেকে উপ-

পরিদর্শক পদমর্র্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে সাজা পেয়েছেন ৯ হাজার ২২৩ জন। আর ২০১৫ সালে মোট

শাস্তি পেয়েছেন ১১ হাজার ১০০ জন। এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার ১০ হাজার ৪৩২

জনকে লঘুদ- দেওয়া হয়েছে। গুরদ- ৫৯২ জন, চাকরিচ্যুত করা হয় ৭২ জনকে। ৪ জনকে বাধ্যতামূূলক অবসর

দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে শাস্তি দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার ২৪২ জনকে। এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে উপ-

পরিদর্র্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের লঘুদন্ড দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৪০০ জনকে। গুর”দ- পেয়েছে ৭৬২

জন। চাকরিচ্যুত করা হয় ৭৩ জনকে, আর বাধ্যতামূূলক অবসরে পাঠানো হয় ৭ জনকে। ২০১৩ সালে মোট

শাস্তি পেয়েছেন ১৪ হাজার ৭ জন, এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে

লঘুদ- পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৭৪ জন, আর গুরদ- দেওয়া হয়েছে ৭৫৭ জনকে। এ সময় চাকরিচ্যুত করা

হয়েছে ৭৫ জনকে এবং বাধ্যতামুলক অবসরে গেছেন ১ জন। ২০১২ সালে শাস্তি পেয়েছেন মোট ১২

হাজার ৮৭৯ জন। এদের মধ্যে কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক পর্যন্ত লঘুদ- পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭০ জন, গুরদ-

পেয়েছে ৯২১ জন। ্ধসঢ়;আর চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ১৭৪ জনকে। বাধ্যতামুলক অবসরে গেছেন আরও ১৪ জন।

২০১১ সালে শাস্তি পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭১১ জন। এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্র্শক পদমর্যাদা

পর্যন্ত কর্মকর্র্তাদের মধ্যে লঘুদ- দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার ৯৭২ জনকে, গুর”দ- দেওয়া হয়েছে ৬১২ জনকে।

এর বাইরে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ৯০ জনকে, আর বাধ্যতামূলক ভাবে অবসর দেওয়া হয়েছে ৩৭ জনকে।

উক্ত ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পুলিশ এখন দক্ধসঢ়;খ্য,জনবান্ধব ও সেবক। ১০

বছর আগে যে পুলিশ ছিলো, আর এখন তা নেই। অনেক বদলে গেছে পুলিশ। এই পুলিশ বাহিনী

কোনো অপরাধ করলে বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধ করলে

নিজ জেলার পুলিশ সুপার ও ডিআইজিকে জানালে অবশ্যই অপরাধী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর

ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কতিপয় পুলিশ সদস্য অপরাধে জড়ালেও এর দায়

নিতে হচ্ছে গোটা পুলিশ বাহিনীকে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার সতর্ক করেছেন

অপরাধে জড়িত সকল পুলিশ সদস্যদেরকে। তিনি অপরাধ রোধে বেশ কয়েকটি নির্দেশনাও জারি করেছেন।

এসব নির্দেশনা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের সতর্ক

করেছেন। উক্ত ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থেকে আসছেন, মারুফ (৩৫), মিঠু (৪০), মিজান ও

বাদশা (২৬) সাইফুল (৩২), তারা জানান, কিছু পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, যারা রাস্তা থেকে সাধারণ

মানুষকে আটক করে গাড়িতে তুলে নিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন এবং একাধিক মামলা দিয়ে

হয়রানি করেছেন অনেকেরই। তারা বলেন, “পুলিশের সবাই খারাপ নয়” সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, রাজধানী

ছাড়াও দেশের অনেক এলাকায় পুলিশ সদস্যরা অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছেন। পুলিশের

শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বার বার হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেও কাজ হচ্ছে না।

জানা গেছে, গত বছরের ৩০ নভেম্বর মাসে নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক

(এএসআই) ইমরুল কায়েস চাঁদা চাইতে গিয়ে উপজেলার ডাইয়ারকান্দা বাজারে গণধোলাইয়ের

শিকার হয়েছেন। পরে উত্তেজিত এলাকাবাসী তার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং গায়ের জামা-কাপড় ছিঁড়ে

ফেলে ও হ্যান্ডকাফ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। গত বছর ২৪ নভেম্বর রাতে পল্লবী থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য

মাদকাসক্ত এক তরুণীকে দিয়ে যুবকদের ফাঁসিয়ে পুলিশ ভ্যানে উঠিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়

করার অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়রা জানায়, ওই তরুণী ও তার স্বামী মাদকাসক্ত। গভীর রাতে যুবকদের নানা

প্রলোভনে তারা ফ্ল্যাটে নিয়ে যেত, পরবর্তীতে সেখানে আগে থেকে অবস্থানরত পুলিশের কয়েকজন

সদস্যওই ফ্ল্যাটে গিয়ে যুবকদের ধরে নিয়ে তুলতেন পুলিশ ভ্যানে। ওই ভ্যানেই রাতভর আটকে রেখে মামলা

দিবে ও পরিবারকে বলেন, ভয় দেখিয়ে আদায় করত লাখ লাখ টাকা। পরে ওই তরুণীকে গ্রেফতারের পর পুলিশের

অপরাধের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়।

বিশেষ করে পুলিশ সদর দফতর ও পল্লবী থানা সুত্র জানায়, ওই তরুণীকে গ্রেফতারের পর তার তথ্য মতে জানা

যায়,তার সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ রয়েছে। গত বছর ১৮ নভেম্বর ভোরে রাজধানীর সোনাগাঁও ট্রাফিক

সিগন্যালের সামনে আবদুল বাছির মনা নামে এক ডিম ব্যবসায়ীর পথরোধ করে মোটরসাইকেলে

আসা পুলিশের দুই সদস্য মাদক আছে বলে মনার দেহ তল্লাশি করে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে ৪৪ হাজার

টাকা নিয়ে পালাতে চেষ্টা করেন। এ সময় লতিফজ্জান নামে এক কনস্টেবলকে মনা ধরে ফেললেও অপর কনস্টেবল

পালিয়ে যায়। পুলিশ বলছে, মনা বাদী হয়ে শাহাবাগ থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেছে।

ওই মামলায় লতিফুজ্জামানকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই দিনই পালিয়ে থাকা কনস্টেবল রাজিকুলকে

গেফতার করা হয়।

গত বছর ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহা আলী এলাকায় বাবুল মাতুব্বরকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়

শাহআলী থানার তৎকালীন এসআই মমিনুর রহমান খান, নিয়াজ উদ্দিন মোল্লা, এ এসআই দেবেন্দ্র

নাথ,ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং ওসি শাহীন মন্ডলকে প্রত্যাহার করা হয়।

বিভাগীয় তদন্তে ওসি একেএম শাহীন মন্ডল ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে অব্যাহতি দিলেও অন্য ৩ জনকে

গুরুদ- দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশের এই ৫ সদস্যই বর্তমানে কর্মরত। গত ৯ জানুয়ারি মোহাম্মদপুরে

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীেেক নির্যাতনের ঘটনায় এসআই মাসুদ শিকদারকে

প্রত্যাহার করা হয়। সুত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার উত্তরা, উত্তরা পশ্চিম, সাভার, মিরপুরসহ প্রায়

সবখানেই এরকম কিছু পুলিশের অপরাধ প্রবণতা রয়েছে। উক্ত বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক

(আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের যেমন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা

হয়েছে, এ ভাবে পুলিশের অপরাধের শাস্তির বিধানও রয়েছে। কোনো অপরাধের দায়ভার একান্ত সংশ্লিষ্ট

ব্যক্তির। তিনি ্ধসঢ়;আরও বলেন, পুলিশ বিভাগ কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয় না। আমরা সব সময়ই

‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করি। কয়েকজন সাংবাদিক ও উকিল বলছেন পুলিশ সাংবাদিক ও

মানবাধিকার সংস্থার কর্মী এবং সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করলে দেশ ও জাতির মঙ্গল হবে। আর দেশের সকল

সাংবাদিকের নিরাপত্তা দিতে হবে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সাধারণ জনগণের হয়রানি করা

যাবে না। প্রকৃত অপরাধীর সাজা হোক এটাই পুলিশ বাহিনীর কাছে জাতির পত্যাশা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451