অনলাইন ডেস্কঃ
১৬টি অপারেশনের পর এখন অনেকটাই স্বাভাবিক ‘বৃক্ষমানব’ নামে পরিচিত আবুল বাজানদার।
খুলনার পাইকগাছার ২৫ বছর বয়সী যুবক আবুল বাজানদার প্রায় এক দশক ধরে ‘বৃক্ষমানব’ নামে পরিচিত বিরল রোগে ভুগছিলেন। এর ফলে তাঁর দুই হাত এবং পায়ের কিছু অংশ বিকৃত হয়ে অনেকটা গাছের শেকড়ের মতো রূপ নিয়েছিল। চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় যেটিকে ‘এপিডার্মো ডিসপ্লেশিয়া ভেরুকোফরমিস’ বলা হয়।
দীর্ঘদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ধাপে ধাপে ১৬টি অপারেশনের ফলে আবুল বাজানদার এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তাঁর হাতে গাছের মতো শেকড়গুলো আর নেই। তিনি এখন তাঁর মেয়েশিশুকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে পারছেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ‘দি ইনডিপেনডেন্ট’ এক খবরে জানিয়েছে, অপারেশনের পর বাজানদার এখন নিরাপদ। তাঁর হাতের শেকড়গুলো আর গজাবে না বলে বিশ্বাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবুল বাজানদারই প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই বিরল রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে আবুল বাজানদার বলেন, ‘১৬টি অপারেশনের পর শেষ পর্যন্ত আমি আমার মেয়েশিশুকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে পারছি। আমি কখনো ভাবিনি যে আমার মেয়েকে এই হাত দিয়ে ছুঁতে পারব।’
বাজানদার আরো বলেন, ‘আমি এখন খুব ভালো অনুভব করছি। বাড়ি ফেরার জন্য আমার আর তর সইছে না।’
বাজানদারের অবস্থা চিকিৎসকদের নজরে আসার পর হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাঁকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের কো-অর্ডিনেটর ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বাজানদারের এই ঘটনা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। তাঁর হাত ও পা এখন প্রায় ভালো।
বাজানদারকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে আর দুটি ছোট সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান ডা. সেন।
আবুল বাজানদার ভ্যান চালাতেন। কিন্তু এই রোগের কারণে গত ছয় বছর কোনো কাজই করতে পারছিলেন না।
বাজানদারের দুই হাত ও পায়ে প্রথমে ছোট ছোট আঁচিল হয়েছিল। এরপর সেগুলো ক্রমেই গাছের শেকড়ের মতো রূপ নিতে থাকে। বিরল এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১০ বছর হোমিওপ্যাথিসহ নানা চিকিৎসা করিয়েছেন। ভারতেও গিয়েছিলেন বছরপাঁচেক আগে। সেখানকার চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিলেও অর্থের অভাবে তখন সেটি করা হয়নি।
যারা সাহায্য করেছিলেন, সেই টাকা দিয়ে এখন ছোটখাটো ব্যবসা করার পরিকল্পনা করছেন আবুল বাজানদার