সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

অপারেশন ক্লিনহার্ট’ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৭
  • ২৪২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালে সন্ত্রাস দমনে যৌথ বাহিনীর নামে পরিচালিত ‘অপারশেন ক্লিনহার্ট’ কার্যক্রমকে দায়মুক্তি দিয়ে জাতীয় সংসদে পাস করা আইনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংবিধানের কয়েকটি বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এই দায়মুক্তি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রকাশ করা হয়েছে। ৫২ পৃষ্ঠার এ রায় লেখেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এক রিট আবেদনের রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোহম্মদ আশরাফুল কামালের ডিভিশন বেঞ্চ  সংক্ষিপ্ত রায় দেন।

২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ পরিচালিত হয়। এর পর ২০০৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত দায়মুক্তি আইন পাস করা হয়। এর ফলে ‘অপারেশন ক্লিনহার্টের’ মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
২০১২ সালের জুন মাসে  দায়মুক্তি আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না। ওই বছরের ২৯ জুলাই হাইকোর্ট দায়মুক্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

যার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ‘অপারেশন ক্লিনহার্টের’ দায়মুক্তিকে অবৈধ ঘোষণা করেন।

আজ প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে ‘সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন’ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সংসদ সার্বভৌম কিন্তু সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্য কোনো আইন করতে পারে না।’

‘যৌথ বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু আইনকে লঙ্ঘন করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে পরিচালিত অভিযানের নামে যৌথবাহিনী আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। কারণ কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে’, রায়ে আরো বলা হয়।

‘সংসদ অপরিসীম ক্ষমতাবান নয়’
‘অপারেশন ক্নিনহার্টের’ দায়মুক্তিকে অবৈধ করে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট উল্লেখ করেছেন, ‘জাতীয় সংসদ কোনোভাবেই সংবিধানের বিধানবলীর পরিপন্থী কোনো আইন প্রণয়ন করবে না। জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অপরিসীম ক্ষমতাবান নন। সংসদকে ভুলে গেলে চলবে না যে, তাদের ক্ষমতা সংবিধানের বিধি-বিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ।’

সংবিধানের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী আইন প্রণয়ন না করতে জাতীয় সংসদকে বারণও করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

‘আইনগত প্রতিকার পাওয়ার অধিকার সংবিধান সব নাগরিককে দিয়েছে’ উল্লেখ করে আদালত বলেছেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কোনো আদালতে প্রতিকার চাইতে এবং কারো বিরুদ্ধে মামলা বা বিচার প্রার্থনা করতে পারবে না- এটা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এই অভিযানের সময় যৌথ বাহিনীর কোনো সদস্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা প্রতিকার চেয়ে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা করতে পারবে।’

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ যথা- নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা ও বিচার বিভাগ। এই তিনটি অঙ্গই সংবিধান দ্বারা সৃষ্ট। অর্থাৎ তিনটি অঙ্গের কেউ সার্বভৌম নয়। প্রত্যেকটি অঙ্গ সংবিধানের বিধি-বিধান সাপেক্ষে স্বাধীন। শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র এই সংবিধানের। সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব মানে জনগণের শ্রেষ্ঠত্ব। জনগণের অভিপ্রায় বা ইচ্ছার প্রতিফলন এই সংবিধান। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গই সংবিধানের বিধি-বিধান মেনে চলতে বাধ্য।

হাইকোর্ট এ ব্যাপারে সংবিধানের ৬৫(১) অনুচ্ছেদেরও শরণ নিয়েছেন। এ অনুচ্ছেদ পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের সকল আইন প্রণয়নের ক্ষমতা শুধু সংসদের এবং এই আইন প্রণয়নের ব্যাপারে সংসদ স্বাধীন। এতদ্বসত্ত্বেও এই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংসদের কিছু সুনিদ্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা আছে। অর্থাৎ সংসদকে আইন প্রণয়ন করতে হবে সংবিধানের ‘বিধানবলী সাপেক্ষে’।

রায়ে বলা হয়, জাতীয় সংসদকে সতর্ক থাকতে হবে যেন এ ধরনের সংবিধানের চেতনা-পরিপন্থী আইন যেন আর প্রণীত না হয়ে যায়। ইচ্ছাধীন হত্যাকে দায়মুক্তি দিতে সংসদ কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না। আইনটি জন্মগতভাবে মৃত এবং এর কোনো আইনগত অস্তিত্ব নেই। তবে মানুষের মৌলিক অধিকারের দিকে খেয়াল রেখে সংসদকে আইন পাশ করতে হবে।

হেফজতে মৃত্যু মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্যরূপ
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘যৌথ বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এরই মধ্যে হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ দিয়েছে যে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, বরং সবাই আইনের অধীন। যৌথ বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে যদি কেউ নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন তাহলে তা বেআইনি, অসাংবিধানিক ও নিন্দাযোগ্য।’

এ ধরনের কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখে বলেও হাইকোট মন্তব্য করেছেন। রায়ে আরো বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফজতে মৃত্যুর ঘটনা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে জঘন্যরূপ।

‘সংবিধান অনুসারে, একজন ভয়ঙ্কর অপরাধীরও আদালতের কাছে বিচার চাওয়ার অধিকার আছে। আমরা মনে করে, যৌথ বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে না’, যোগ করা হয় হাইকোর্টের রায়ে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451