মাদারীপুরে দুই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের ১৫ মাস পর বাদীকে না জানিয়ে গোপনে আদালতে আত্মহত্যার অভিযোগপত্র দাখিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলার প্রধান তিন আসামিকে বাদ দিয়ে শুধু আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দাখিল করায় শনিবার দুপুরে মাদারীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন নিহতের স্বজনরা।
আর বাদীপক্ষের আইনজীবীর দাবি, কৌশলে প্রকৃত আসামিদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে, ধর্ষণ ও হত্যা নয় বিষপানে দুই স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নিহত স্কুলছাত্রী সুমাইয়ার বাবা বিল্লাল শিকদার ও নিহত হ্যাপির মা মুক্তা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা দাবি করেন, ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় মস্তফাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপি। বেলা সাড়ে ৩টার সময় স্কুলসংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের ডেকে নেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর ধর্ষণ শেষে বিষ খাইয়ে তাদের হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় সদর থানায় ও আদালতে ১১ জনকে আসামি করে আলাদা দুটি মামলা হলে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পায় মাদারীপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দীর্ঘ ১৫ মাস তদন্ত শেষে গত ৭ নভেম্বর বাদীপক্ষকে না জানিয়ে মামলার প্রধান তিন আসামি শিপন, রফিকুল ও সালমা বেগমের নাম বাদ দিয়ে রানা নাগাসী, মেহেদী, সজীব, আলামিন, নাজমুল, সাজন বেপারী, উজ্জ্বল শিকদার, রাকিব শিকদারকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় বলে অভিযোগ স্বজনদের।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত স্কুলছাত্রী সুমাইয়ার বাবা বিল্লাল শিকদার বলেন, ‘আমি একাধিকবার সিআইডি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি আদালতে কোনো অভিযোগপত্র দাখিল করেননি বলে আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু আমি আদালতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই সিআইডি কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম গোপনে আমাদের কাউকে না জানিয়ে প্রধান আসামিদের নাম বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছেন। আমরা অসহায় বলে আমাদের পাশে কেউ নেই। সিআইডিকে ভরসা করেছিলাম, তারাও আসামিদের পক্ষ নিল। এর আগে আসামিদের পক্ষ নিয়ে ১০ লাখ টাকায় মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছিল স্থানীয় মাওলানা আবদুল মান্নান। আমি আমার মেয়ের রক্ত বিক্রি করব না। আমি সিআইডির চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করে আদালতে নারাজি দেব।’
নিহত অপর স্কুলছাত্রী হ্যাপির মা মুক্তা বেগম বলেন, ‘এভাবে দুটি মেয়েকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করল পাষণ্ডরা। কিন্তু সিআইডি কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে প্রধান আসামিদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দিয়েছে। এভাবে যদি আসামিদের আইনের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটলেও কেউ ন্যায়বিচার পাবে না। বর্তমানে প্রভাবশালী আসামিরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। সবাই যদি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়, তাহলে আমাদের মতো গরিব মানুষ কোথায় যাবে? আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
মাদারীপুর সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দুবার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। সুমাইয়া ও হ্যাপি বিষপানেই আত্মহত্যা করেছে। প্রথমে সুমাইয়া বিষপানে আত্মহত্যা করেছে, তা দেখে অপর বান্ধবী হ্যাপিও সেই শোকে আত্মহত্যা করেছে।
কী কারণে আত্মহত্যা করেছে তা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা হেসে হেসে বলেন, রানার সঙ্গে সুমাইয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সুমাইয়া রানাকে না পাওয়ার জেরে আত্মহত্যা করেছে বলে বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণে তা পাওয়া গেছে।
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইয়াদ মোর্শেদ সজলের দাবি, ধর্ষণ শেষে হত্যার মামলায় আসামিদের কৌশলে আইনের হাত থেকে বাঁচাতে অভিযোগপত্র থেকে তাদের নাম বাদ দিয়ে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করা হয়েছে। এ ছাড়া কী কারণে এই দুই স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে তারও বিস্তারিত কোনো তথ্য এ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেনি সিআইডি।