শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বদলে গেছে ৭১৮ জন মৎসজীবীর ভাগ্য

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬
  • ৩২২ বার পড়া হয়েছে

সেলিম হায়দার,তালা সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :

বে-সরকারী উন্নয়ন সংগঠন উত্তরণ এর সহযোগিতায় বদলে গেছে ৭১৮ জন

মৎসজীবীর ভাগ্য। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ২২ টি মৎসজীবী

সংগঠনের সদস্যরা ৮৩৯.৬৯ একর জলমহাল পরিচালনা করে তাদের জীবিকা

নির্বাহ করার পাশাপাশি সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। ওদের সকলেরই

বসবাস সাতক্ষীরা জেলার তালা, আশাশুনি, শ্যামনগর এবং খুলনার জেলার

পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

এক সময় মৎস্যজীবীরা জলমহাল থেকে বঞ্চিত ছিল। অমৎস্যজীবী ও

প্রভাবশালীদের দখলে ছিল জলমহাল। তখন মৎস্যজীবীরা অন্যের মৎস্য ঘেরে কিংবা

সরকারি জলমহালে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে তারা

বিস্তীর্ণ জলমহালের মালিক, জল মহালের আহরিত সব মাছ বিক্রির অর্থ এখন

তাদের। এ কথা ভাবতেই ওদের নিজেদের মধ্যে অন্য রকম শিহরণ আন্দোলিত করে।

তারা এখন নতুন করে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।

উত্তরণ এর অপরাজেয় প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ মনিরুজ্জামান জমাদ্দার

জানান, ২২ টি মৎসজীবী সংগঠনের অধিকাংশ রেজিষ্ট্রেশনে উত্তরণ-

অপরাজেয় প্রকল্প আর্থিকভাবে সহায়তা করে। মৎসজীবী সংগঠনগুলি সরকারী

জলমহাল টেন্ডার ডাকে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। সেই থেকে শুরু থেকে

অদ্যাবধি সংগঠনের হাতে ৩২ টি জলমহাল রয়েছে। আর ২২ টি মৎসজীবী

সংগঠনের ৭১৮ জন সদস্য ৮৩৯.৬৯ একর জলমহাল পরিচালনা করছে। প্রথমদিকে

জলমহাল পাওয়ার পর উত্তরণ প্রত্যেক সদস্যকে বিনা সুদে ৩ হাজার টাকা

প্রদান করে। এই টাকা সমিতির সদস্যরা মাছ চাষে বিনিয়োগ করতো

এবং বছরের মধ্যে উক্ত টাকা তাদের পরিশোধ করতে হতো। বর্তমানে উত্তরণ

প্রত্যেক সদস্যকে অফেরতযোগ্য ১ হাজার টাকা করে প্রদান করছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাকা প্রদানের সময় সরকারী কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন।

গত ১৬ জুন তালা উত্তরণ আইডিআরটিতে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক আবুল

কাশেম মোঃ মহিউদ্দীন প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে সরকারী

জলমহাল ইজারাপ্রাপ্ত ৭৫ জন সদস্যর মাঝে নগদ ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক

সহায়তা প্রদান করেছেন। এ সময় তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ

কুমার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফরিদ হোসেন, উত্তরণ পরিচালক

শহিদুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন্নেছা খানম, শহীদ

মুক্তিযোদ্ধা কলেজের অধ্যক্ষ এনামুল ইসলাম,সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান

অধ্যাপক সন্তোষ বিশ্বাস,প্রণব ঘোষ বাবলু,তালা সদর ইউপি চেয়ারম্যান

সরদার জাকির হোসেন, ইসলামকাটি ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুবাস

সেন,নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপু,তালা উপজেলা পানি

কমিটির সভাপতি এম ময়নুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর

রহমানসহ জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উপকারভোগি মৎস্যজীবী তালা উপজেলার চাঁদকাটি গ্রামের মোস্তফা

নিকারী, আব্দুল মহলদার, লুৎফর রহমান, গলাভাঙ্গা গ্রামের কৃষ্ণপদ সরকার, তপন

সরকার, পংকজ সরকার, ভিলেজ পাইকগাছা গ্রামের হানেফ মোড়ল,আকছেদ

সানাসহ অনেকেই জানান, তারা সকলেই ছিল দরিদ্র মৎস্যজীবী। বিস্তীর্ণ

জনপদের গ্রামের পর গ্রাম চিংড়ী চাষের আওতায় চলে যাওয়ায় এক সময় ভাটা

পড়ে উন্মুক্ত মৎস্য আহরণে। প্রাকৃতিক মাছের আঁধারগুলো ক্রমান্বয়ে চলে

যায় ব্যক্তি মালিকানায়। মৎস্যজীবী হয়েও নদীতে মাছ ধরতে না পেরে তাদের

সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরার মত অবস্থা চলছিল। প্রায় প্রতিটি

পরিবারেই বছরের সারাটা সময় লেগে থাকতো অভাব-অনটনের ঘনঘটা। ঠিক

এমন সময় আলোকবর্তিকা হয়ে পাশে এসে দাঁড়ায় বে-সরকারি

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উত্তরণ’। সরকারী জলমহাল নীতিমালা’২০০৯

বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে প্রকৃত মৎসজীবীদের সাথে আলোচনা শুরু করে

উত্তরণ-এর একদল উদ্যোমী কর্মী বাহিনী। নিয়ম-নীতি জানার পর মৎসজীবীরা

বুঝতে পারে এককভাবে জলমহাল পাওয়া সম্ভব না। তাদের সমিতি থাকতে হবে

এবং তা উপজেলা সমবায় সমিতির দপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশন করাতে হবে। শুরু

হয় সমবায় সমিতি গঠণের প্রক্রিয়া। নিয়মিত মিটিং করা, রেজুলেশন

লেখা, সঞ্চয় করা, ব্যাংক হিসাব খোলা ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করতে তাদের

বেশ কিছু সময় লেগে যায়। এভাবে উত্তরণ-এর সহযোগিতায় তৈরি করা হয়

মৎসজীবী সংগঠন। সংগঠনগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি রেজিষ্ট্রেশনে উত্তরণ-

অপরাজেয় প্রকল্প আর্থিকভাবে সহায়তা করে। এক পর্যায়ে মৎসজীবী

সংগঠনগুলি সরকারী জলমহাল টেন্ডার ডাকে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। সেই

থেকে শুরু হয় তাদের নতুন করে পথ চলা। তাদের আর পেছনে ফিরতে হয়নি।

বর্তমানে তারা জলমহাল থেকে নিয়মিত ফেশা, ভেটকি,পারশে, বাগদা,

মটকা, গলদা চিংড়ি, দাতনে, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ

করে নগদ বিক্রি করছেন বিভিন্ন মৎস্য আড়তে। এছাড়া বিভিন্ন

প্রজাতির মাছ উৎপাদন করে তারা জাতীয় অর্থনীতিতেও ব্যাপক ভূমিকা

রাখছেন। উত্তরণ এর সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে তারা জলমহাল ইজারা

নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত, সন্তানদের পড়ালেখা শেখানোর পাশাপাশি

ছোটখাট ঋণ-দেনা শোধ করতে পারছেন। তাদের সংসারে ফিরে এসেছে

স্বচ্ছলতা। তারা এখন নতুন করে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। সেই

স্বপ্নে বিভোর মৎস্যজীবী পরিবারগুলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451