মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা, জেলেপাড়ায় হতাশা

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০
  • ২৩৩ বার পড়া হয়েছে

দেশে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধি করতে বুধবার (১৪ অক্টোবর) থেকে টানা ২২ দিন সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। তবে জেলেদের আভিযোগ সময়মতো সরকারের দেয়া সহায়তা পাননা তারা।

অবরোধ শেষ হওয়ার পরে জেলেদের সহায়তা দেয়া হয়, তাই আবরোধ চলাকালীন অবসর সময় তাদের অর্ধাহার-অনাহারে থাকতে হয়।

আবার বেশিরভাগ জেলেরা বলছেন- বিগত সময়ে জেলেদের জন্য দেয়া বরাদ্দের চাল পেয়েছে অন্য শ্রেণি পেশার মানুষ। তাই পেটের তাগীদে অনেকেই মানেনা নিষেধাজ্ঞা। তবে সঠিক বন্টনে মৎস্য অফিস নজড় রাখবেন জেলে তালিকায়।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

এই সময় সারাদেশে ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয় বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুদও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে উপকূলের লক্ষাধীক জেলে। তবে জেলায় সরকারি নিবন্ধিত জেলে সংখ্যা ৩৭ হাজার। অবরোধ চলাকালীন প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলে ২০ কেজি করে  চাল পাবেন।

অবরোধ চলাকালীন জেলেদের বিগত বছরের প্রত্যেকবারই নিষেধাজ্ঞা শেষে সহায়তার চাল দেয়া হয়। যা তাদের কর্মহীন সময় কোনো উপকারে আসেনা। তাই এসময় জেলে পরিবারগুলোকে খেয়ে নাখেয়ে দিন কাটাতে হয়। তাই এসব জেলেদের দাবি সরকার থেকে যে সহায়তা দেয়া হয়, সেটি অবরোধের আগে দিলে তাদের অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হবে না।

পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের জেলে মো. মুছা বলেন, অবরোধের সময় আমরা বেকার থাকি। অবরোধের কর্মহীন সময় সরকারি প্রণোদনা পেলে আমার পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে থাকতে পারি। কিন্তু প্রনোদোনার চাল পেতে অবরোধ শেষ হয়ে যায়। তখন আর এই সহায়তা কাজে আসেনা। তাই সহায়তার চাল অবরোধের শুরুতে দিলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়।

এদিকে একাধিক জেলেরা অভিযোগ করেন- সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম করে জনপ্রতিনিধিরা। জেলেদের জন্য সরকারের দেয়া বরাদ্দের চাল পায় জনপ্রতিনিধিদের স্বজন, ব্যবসায়ী, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। অথচ আমাদের জেলে পেশায় থাকা অনেক জেলেরা সরকারি এ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পাথরঘাটার পদ্মা এলাকার খলিল গাজী বলেন, আমি ২২ বছর ধরে জেলে পেশার সাথে আছি কিন্তু আমি চাল পাইনা। যারা জেলে পেশায় নেই তারা চাল পাচ্ছে। সরকার যদি প্রকৃত জেলেদের সহায়তা করে তাহলে অবরোধের সময় আমরা সংসার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারি।

নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই প্রকৃত জেলেদের সহায়তা নিশ্চিত করতে মৎস অধিদপ্তর কাজ করছে বলে জানালেন বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম সফল করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে লিফলেট বিতরণ ও মতবিনিময় সভা করেছে।

এদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া সংবাদদাতা জানান- উপজেলা মৎস্য প্রশাসন ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ রক্ষায়’ সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে। ১৪ থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুম থাকবে। এ সময় উপক‚লের নদ-নদী এবং বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল করতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মৎস্যজীবি, মৎস্য ব্যবসায়ী, ট্রলার ও নৌকা মালিক, জেলে, আড়ৎদার এবং বরফকল মালিকদের নিয়ে ‘মা ইলিশের প্রজনন রক্ষায়’ মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহিপুর, কুয়াকাটা, গঙ্গামতি, চাড়িপাড়া, ঢোস, দেবপুর, পাটুয়াসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে জনসচেতনতামূলক সভা করেছে। সরকার ঘোষিত ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার সরকারের অভিযান সফল করতে সভায় অংশগ্রহনকারীরা মাছ আহরণ, বিপনন থেকে বিরত থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন।

উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, প্রজনন মৌসুমে মোহনা অঞ্চলে ইলিশ বেশি ডিম ছাড়ে। এ জন্য নিষেধাজ্ঞা চলার সময় উপক‚লে সরকার ঘোষিত ছয়টি ইলিশের অভয়াশ্রমে ব্যাপক নজরদারী করবে মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এসব স্থান হলো- ভোলার চর ইলিশার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তুম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদের ৪০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০ কিলোমিটার, বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং হিজলার মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার।

কলাপাড়া উপজেলার জেষ্ঠ্য মৎস্য কর্মকর্তা জহির উন নবী জাগরণকে জানান, ‘আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগের ৪ দিন, পূর্ণিমার দিন এবং পরের ১৭ দিনসহ ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে।

এ সময় ইলিশ মাছ সাগর থেকে এসে নদীর মোহনায় ডিম ছাড়ে। একটি বড় ইলিশ ২৩ লক্ষ পর্যন্ত ডিম ছাড়তে পারে। গবেষনালব্দ ফলাফলে এটাই প্রমানিত। তা-ই প্রতিবছর সরকার এ সময়টাতে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, ইলিশের প্রজনন সময়ে সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাত করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এ সময় যদি কেউ আইন অমান্য করে তাঁকে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাইবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451