শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে ‘বঙ্গবন্ধু সেবা দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপন হউক

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ২৩৮ বার পড়া হয়েছে

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিবস ১৭ মার্চ। দিবসটির যথাযথ উদ্‌যাপনের নানা আয়োজন চলছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও দিবসটি উদ্‌যাপিত হবে, এক দিন নয়, বছরজুড়ে।

বাঙালির মুক্তি আন্দোলন তৃতীয় বিশ্বের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের অন্তর্গত, সে আন্দোলনের অবিচ্ছিন্ন স্রোতোধারা। ১৯৭১-এর ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ প্রশ্নে বিতর্কের সময় সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ইয়াকফ মালিক বলেছিলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা তৃতীয়
বিশ্বের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের আরেকটি প্রকাশ, এর আর অন্য কোনো পরিচয় নেই। এ গণমুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ফলে,
মোটেই বিস্ময়ের কথা নয় যে মুক্তিপ্রয়াসী মানুষ—তা তারা যেখানেই থাকুক—তাঁর জন্মদিবস উদ্‌যাপনে আগ্রহী হবে।

অনুমান করি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ উদ্‌যাপনের কেন্দ্রে থাকবে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম অথবা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কাজের সঙ্গে পরিচিত হতে এ–জাতীয় অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা আনুষ্ঠানিকতা ও সরকারি আচার–অনুষ্ঠান-ক্রিয়াকর্মেই সীমাবদ্ধ থাকে। সব সময় সে অনুষ্ঠানের কোনো স্থায়ী প্রভাব থাকে, তা মনে হয় না।

আরও একভাবে দিবসটি উদ্‌যাপন সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও কীর্তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা এই দিন কিছুটা সময় স্বেচ্ছাশ্রমে ব্যয় করতে পারি। দিবসটি উদ্‌যাপন করতে পারি জাতীয় সেবা দিবস হিসেবে। খুব বেশি সময় নয়, এই দিন মাত্র ২৪ মিনিট সময় স্বেচ্ছাশ্রমে ব্যয় করার আবেদন রাখছি। বাঙালি জাতির জনক তাঁর জীবনের ১২ বছর কারান্তরালে ছিলেন। আরও ১২ বছর কাটিয়েছেন পুলিশি নজরদারিতে। এই ২৪ বছর, যা কার্যত তাঁর জীবনের প্রায় অর্ধসময়—তিনি বাঙালি জাতির মুক্তি অন্বেষণে ব্যয় করেন। সে ত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ন্যূনতম যা আমরা করতে পারি তা হলো, তাঁর জন্মদিনে মাত্র ২৪ মিনিট ব্যয় করা, যার লক্ষ্য হবে সাধারণের কল্যাণ হয়, এমন কোনো কাজে আত্মনিয়োগ।

আমি মোটেই কোনো অভিনব প্রস্তাব রাখছি না। বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় নেতার স্মরণে সেবা দিবস পালনের চল রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতে মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে অনেক স্কুল-কলেজ স্বেচ্ছাশ্রমভিত্তিক উদ্যোগ নিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে মার্টিন লুথার কিং দিবসকে পরিণত করা হয়েছে জাতীয় সেবা দিবস হিসেবে। দক্ষিণ আফ্রিকার মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন ১৮ জুলাই শুধু সে দেশে নয়, সারা বিশ্বেই সেবা দিবস হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়ে থাকে। নানাভাবে ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধুর জীবনে মিল রয়েছে। তাঁদের ব্যক্তিগত ত্যাগ ও আপসহীন নেতৃত্ব শুধু এই দুই দেশের মানুষ নয়, সারা বিশ্বের মানুষকেই অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁদের জন্মদিনের উদ্‌যাপন এ কারণে জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক চরিত্র গ্রহণ করেছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে ‘বঙ্গবন্ধু সেবা দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপনের ধারণাটি মুখ্যত ম্যান্ডেলা দিবস উদ্‌যাপনের মডেলটি মাথায় রেখে। ২০০৯ সাল থেকে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে উদ্‌যাপিত হচ্ছে, এর মূল লক্ষ্য, ম্যান্ডেলার স্মৃতির সম্মানে স্বেচ্ছাশ্রমে ব্রতী হওয়া। বিশ্বকে মানবের জন্য অধিক বাসযোগ্য করার ক্ষমতা আমাদের হাতের মুঠোয় রয়েছে, এ কথা ম্যান্ডেলা বলেছিলেন। শুধু বলেননি, আমৃত্যু সে কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। যার যার নিজের দেশে, নিজের গ্রামে অথবা নিজের পাড়াকে অধিক বসবাসযোগ্য করে তুলতে আমরাও হাত লাগাতে পারি। প্রতিদিনই, বছরের যেকোনো দিনই করতে পারি। ম্যান্ডেলার জন্মদিনে করা হলে সে কাজ একটি প্রতীকী অর্থ গ্রহণ করে। সে জন্যই জাতিসংঘ দিবসটিতে সবাইকে স্বেচ্ছাশ্রমে আহ্বান জানিয়েছিল।

এই মোদ্দা আদর্শ সামনে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন সবার কাছে সুনির্দিষ্ট একটি প্রস্তাব রেখেছিল। ম্যান্ডেলা তাঁর জীবনের ২৭ বছর কাটিয়েছেন জেলে। আসুন, তাঁর জন্মদিনে আমরা মাত্র ২৭ মিনিট ব্যয় করি সাধারণের কল্যাণ হয়, এমন কোনো কাজে।

ঠিক কী ধরনের কাজের কথা বলছে জাতিসংঘ ও ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন? কয়েকটি উদাহরণ দিই।

আপনার গ্রাম, উপশহর অথবা পাড়ার দিকে তাকান, দেখবেন তা আবর্জনায় ভরা। ঘরের কাছে যে পার্কটি রয়েছে, তা আগাছায় ভরে রয়েছে। পাড়ার স্কুলঘরটি জীর্ণ, টিনের চালাটি ভেঙে পড়েছে, দেয়ালের রং উঠে গেছে। কয়েকজন বন্ধু মিলে উদ্যোগ নিলে এর পরিবর্তন সম্ভব।

যার যার পেশায় আমরা অনেকে কৃতী, খ্যাতিমান। এই দিন কিছুটা শ্রম দিই না কেন কোনো পারিশ্রমিক ছাড়া নাগরিক সেবায়? খ্যাতিমানদের পথ অনুসরণ করে আরও অনেকেই হয়তো এগিয়ে আসবে। কয়েকজন মিলে রোগীদের জন্য পরিচর্যা প্যাকেট সংগ্রহ করে নিজ শহরের কোনো হাসপাতালে তা দিয়ে আসতে পারি। এই প্যাকেটে থাকতে পারে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী, শুকনো খাবার, সামান্য কোনো উপহার, একটা বই। অসুস্থ যে কেউ সে প্যাকেট পেলে মনে বল পাবে, আশ্বস্ত হবে।

আমি তালিকা বাড়াতে চাই না। যাদের আগ্রহ আছে, ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে বিস্তারিত দেখতে পারেন:

যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছাশ্রমের একটি চমৎকার উদাহরণ মার্টিন লুথার কিং দিবস। এই নাগরিক অধিকারকর্মী আমেরিকার কালো মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁর আপসহীন অবস্থানের কারণে ঘাতকের হাতে নিহত হয়েছিলেন। দেশের মানুষ যাতে মানুষটিকে এবং তাঁর সংগ্রামী আদর্শ ভুলে না যায়, সে জন্য প্রতিবছর জানুয়ারির তৃতীয় সোমবার ‘এমএলকে ডে’ পালন করা হয়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন, কিন্তু ১৯৯৪ সালে কংগ্রেসে যখন এই মর্মে আইন গৃহীত হয়, তখনই বলা হয়েছিল এটি কোনো ছুটির দিন নয়, কাজের দিন। ‘আ ডে অন, নট আ ডে অফ’। সরকারি ঘোষণা অনুসারেই দিনটি পালিত হয় জাতীয় সেবা দিবস হিসেবে। এই দিনের কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে, যার নাম করপোরেশন ফর ন্যাশনাল অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিস।

দিনটিতে আমেরিকার সব জায়গায় সম্মিলিত উদ্যোগে—কখনো কখনো ব্যক্তিগত উদ্যোগে—অসংখ্য স্বেচ্ছাশ্রমভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। আমি কেবল একটি উদাহরণ দেব।

২০১৭ সালে, হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় গ্রহণের আগে, বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষবারের মতো এমএলকে দিবস পালন করেন। ‘অন্যান্য বছরের মতো এদিনও তিনি তা–ই করলেন, যা তিনি প্রতিবছর করে থাকেন অপরের সেবায় নিজের শ্রম দান করে।’ ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাকে নিয়ে তিনি সকাল সকাল চলে আসেন ওয়াশিংটন ডিসির একটি গৃহহীন আশ্রয়কেন্দ্রে। প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন, পরনে শ্রমিকের পোশাক, হাতে ঝাড়ু ও বালতি। আরও অনেকেই সেখানে ছিলেন, সবাইকে নিয়ে কাজে নেমে পড়লেন তাঁরা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযানে অংশ নেওয়া ছাড়াও আরও একটি কাজে অংশ নেন ওবামা দম্পতি। আশ্রয়কেন্দ্রে মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি ম্যুরাল আঁকা ছিল, যত্নের অভাবে রং উঠে তা বিবর্ণ হয়ে পড়েছিল। যত্নে সে ছবির ওপর ব্রাশ বুলিয়ে নতুন করে তোলা হলো। কাজ শেষ হলে সহাস্যে ওবামা বললেন, ‘চমৎকার, তবে সত্যি বলছি, কাজটি আমার একার নয়, সবাই মিলেই করেছি।’

স্বেচ্ছাশ্রমের মূলমন্ত্রই হলো সবাই মিলে কাজ। কাজের ফলটা কারও একার নয়, সবার উপকারে আসবে। ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং অথবা বঙ্গবন্ধু ত্যাগে ব্রতী হয়েছিলেন ব্যক্তিগত অঙ্গীকার থেকে। কিন্তু তাঁদের ত্যাগের ফল দেশের—শুধু দেশের কেন, বিশ্বের মানুষের কল্যাণে আসে। তাঁদের আমৃত্যু ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমরা কি একটা দিন সামান্য কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক মিনিট ব্যয় করতে পারি না?

আসুন, জাতির জনকের জন্মদিনে আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে ব্রতী হই। দিনটি উদ্‌যাপন করি বঙ্গবন্ধু সেবা দিবস হিসেবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451