মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

আমি এখানে এসে অভিভূত”কীয়ান রাশেদ”

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৩৯ বার পড়া হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি থেকে বাংলাদেশের বাগেরহাটে ছুটে এলেন এক তরুণ। আর তাঁর জন্য বাগেরহাটের প্রান্তিকগ্রাম চিতলী-বৈটপুরে আগে থেকে অপেক্ষায় এক ঝাঁক শিশু-কিশোর। যাদের মধ্যে ১৪ জন তাঁরই শিক্ষার্থী। সামনাসামনি কখনো দেখা না হলেও গত ৯ মাস ধরে অনলাইনের মাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পড়ান ১২ গ্রেডের শিক্ষার্থী কীয়ান রাশেদ সাদী।

গতকাল সোমবার সেই শিশুশিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে বাগেরহাট সদরের উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতনে আসেন তিনি। কম্পিউটার লিটারেসি প্রোগ্রামের (সিএলপি) আওতায় দূরশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের এই বিদ্যালয়টিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ক্লাস নেন নিউজার্সির হিলসবোরোজ হাইস্কুলের শিক্ষার্থী কীয়ান। বিদ্যালয়টির নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষিকার পাশাপাশি সিএলপি কর্মসূচির আওতায় অনলাইনে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণিতে বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস নেন কীয়ানের মতো আরও ১১ জন।

রোববার রাতে বাংলাদেশে পৌঁছে গতকাল ভোরেই কীয়ান তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রওনা হন বাগেরহাটের পথে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তিনি চিতলী–বৈটপুর এলাকার বিদ্যালয়টিতে এসে পৌঁছান। এ সময় মা–বাবা, ছোট ভাই ছাড়াও সঙ্গে ছিলেন কীয়ানের নানা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। সেখানে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় তাঁদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

পরে বিদ্যালয়টির সভাকক্ষে সিএলপির অধীনে ২০২০ সালের দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রাশেদ খান মেমন। উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা বাগেরহাট কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম রফিকুল ইসলাম, সামছুদ্দিন নাহার ট্রাস্টের ট্রাস্টি মো. শফিক, প্রধান সমন্বয়ক সুব্রত কুমার মুখার্জি, উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতন প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর পাল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে কীয়ান সাদী তাঁর শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলে যান ক্লাসে। চতুর্থ শ্রেণির ১৪ জন শিক্ষার্থী সেখানে তাঁর সঙ্গে গল্প আড্ডা আর নানা বিষয়ে কথা বলে। লেখার বিষয়বস্তু ও কীভাবে ইংরেজিতে লেখার মান ভালো করা যায় তা নিয়ে কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাদের টি-শার্ট ও চকলেট উপহার দেন।

কীয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিএলপির মাধ্যমে এটা দূর থেকে পড়ানোর কার্যক্রম। আমিও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রিত্তিকা সামসুদ্দীন নামের এক নারীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি এবং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুক্ত হই। চলতি বছরের মার্চ থেকে আমি এই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছি। সপ্তাহের ছুটির দিনে আমি ক্লাস নিই। এটা আমার খুবই ভালো লাগে। আমি কিছু করতে পারছি। আমি আসলে মানুষকে সাহায্য করতে চাই। সেখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) আমি যা জানছি, তা এখানকার সবার সঙ্গে ভাগ করছি।… আমি অনেক দূরে থাকি। আমার এখানে আসার সবচেয়ে বড় কারণ, আমি তাদের সেভাবে চিনি না। তারাও হয়তো আমাকে জানে না। পড়ানোর ক্ষেত্রে এটা খুব জরুরি। আমি আসলে এই শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি যোগাযোগ স্থাপন করতে চেয়েছি। এবং এখানে এসে আমি সত্যিই অভিভূত।’

কীয়ানের মা সুবর্ণা আফরিন খান ও বাবা শামসুল কবীর সাদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুরা কীয়ানের অনুপ্রেরণা। অভিভাবক হিসেবে এটা আমাদেরও ভালো লাগায়। শুধু আমেরিকা থেকে নয় দেশের ভেতর থেকেও এই চর্চা শুরু হতে পারে। তবেই আমরা দ্রুত আরও এগিয়ে যাব।’

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি নানা হিসেবে, আমার নাতির সঙ্গে। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এখানে এসে আমি দেখছি কীভাবে তার কাজ করছে। সুদূর প্রবাসের একজন আমেরিকানের সঙ্গেও আমাদের গ্রামের শিশুদের ইন্টারঅ্যাকশনটা কত গভীর হতে পারে, এখানে এসে আমি তা দেখলাম। এই শিশুরা অনেক মেধাবী। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে শিক্ষার প্রসারে এই বিষয়টি আরও ঢেলে সাজানো দরকার। আমি প্রবাসী ছাড়াও দেশের মধ্যে যাঁরা আছেন, সবাইকে আহ্বান জানাব যাঁদের হাতে সময় থাকে, কোচিং ক্লাসে না দৌড়ে তাঁরা যেন এভাবে অন্যদের শেখাতে উদ্যোগী হন।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451