অনলাইন ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর মেয়াদের শেষ কর্মদিবস অতিবাহিত করেছেন। বিদায় বেলায় শেখ হাসিনা তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “আমি কিন্তু নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিন্তা করি না। আমি হচ্ছি, বাবার কন্যা ‘ফাদারস ডটার’। সন্তান হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করি। আমি জাতির পিতার কন্যা। আমি আপনাদের কাছে এটুকুই চাইব, আপনারা সব সময় আমাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা হিসেবেই আপনাদের একান্ত আপনজন হিসেবে দেখবেন। সেটাই আমি চাই। সেটাইতেই আমি গর্বিত বোধ করি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়।’
‘প্রধানমন্ত্রিত্ব, এটা একটা দায়িত্ব পেয়েছি। কাজ করার সুযোগ পাই এর মাধ্যমে। দেশের কল্যাণ করার একটা সুযোগ পাই। সেটাই আমার কাছে বড়। এই পদটাকে কীভাবে উপভোগ করব, সেই চিন্তা করি না। মানুষের কল্যাণে নিজেকে কতটুকু নিয়োজিত করতে পারলাম, আমার কাছে সেটাই বিবেচ্য।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি সরকারি কর্মচারীদের তাঁদের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমি থাকি বা না থাকি, আপনাদের কাছে আবেদন এটাই থাকবে—আপনারা আপনাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন, কারণ আপনারা সরকারি কর্মচারী। আপনাদের বেতন-ভাতা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকাতেই হয়। কাজেই তাঁদের সেবা করা, কল্যাণ করা, আপনাদের দায়িত্ব।’
‘১০ বছর একটানা থাকায় অনেক কাজ করে যেতে পেরেছি। এখনো বহু কাজ বাকি। সেটাও নির্ভর করে বাংলাদেশের জনগণের ওপর। আগামী ৩০ তারিখে যদি তারা ভোট দেয়, তাহলে আবার আসতে পারব এবং কাজগুলোকে শেষ করতে পারব। আর তা না হলে মানুষের ভাগ্য মানুষ বেছে নেবে। এখানে আমার কোনো ক্ষোভ বা দুঃখ নেই। কেননা আমার নিজের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই,’ বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্য শেষ করেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে দিয়ে। কবির ভাষায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলে যাব—তবু যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল? এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এই আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী পরে তাঁর কার্যালয়ের মেইন গেটের সামনের দেয়ালে স্মৃতিময় ১৯৫২ থেকে ’৭১-এর মুক্তিসংগ্রাম পর্যন্ত বাঙালির গৌরবের ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি টেরাকেটার ম্যুরাল পরিদর্শন করেন। ছাত্রলীগ নেতা মুহম্মদ আরিফুজ্জামান নুর নবী এই ম্যুরালের ভাস্কর।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক নাসরিন আফরোজ, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মুজিবুর রহমান, প্রটোকল অফিসার খুরশীদ আলম, সহকারী পরিচালক মো. মকবুল হোসেন, একান্ত সচিব (২) অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।