যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র বহুল আলোচিত নির্বাচনে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করেছে। সোসাইটির ইতিহাসে সর্বাধিক ১৮ হাজার ৫৫১ জন ভোটারের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত শ্বাসরুদ্ধকর ও ঐতিহাসিক এই নির্বাচনে কামাল আহমেদ সভাপতি ও রুহুল আমিন সিদ্দিকী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। ২৩ অক্টোবর রোববার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে নির্বাচন কমিশন মধ্যরাতে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করে।এক সময় কেবল ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বা শীর্ষ পেশাজীবীদের নেতৃত্বের দখলে থাকা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি এখন ১৮ হাজারের বেশি ভোটারের সংগঠন। ২০১৬’র নির্বাচনে এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ভোট প্রদান করেছেন। ৫টি কেন্দ্রেই আইডি নির্ধারক মেশিন ও অদৃশ্য কালির ব্যবস্থায় ভোটগ্রহণ করা হয়। ৫টি কেন্দ্রের জিপকোড অনুযায়ী ভোটারদের কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। ভোট চলাকালে কেন্দ্রগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। নিজেদের পছন্দের প্যানেলকে নির্বাচনে জয়ী করতে সিটির চারটি বরোর পাঁচটি ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকেই ছিল ভোটারদের বিপুল পদচারণা।
মূল কেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডস্থ গুলশান টেরেসে ভোট গণনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সৈয়দ টিপু সুলতান মূল ফল প্রকাশ করার আগেই মুখে মুখে চাউর হয়েছে গণনার আগের ফলাফল। চূড়ান্তভাবে নির্বাচনী ফলাফল কামাল-রুহুল প্যানেলের পক্ষে আসার পর তাদের কর্মী সমর্থকরা মুহুর্মুহু শ্লোগান দেন এবং ‘ভি’ চিহ্ন প্রদর্শন করে উল্লাস প্রকাশ করেন। পরে বিজয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে বিজিত প্রার্থীরা আলিঙ্গন করেন। নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিয়ে বিজয়ী প্রার্থী কামাল-রুহুল প্যানেলকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন আজমল হোসেন কুনু। এসময় সবাই হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ‘কুনু-আজম’ ও ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল ছাড়াও সভাপতি পদে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৯টি পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদসহ ১৭টি পদে আর প্রতিদ্বন্দ্বী ‘কুনু-আজম’ প্যানেল দুটি পদে জয়লাভ করে। বাংলাদেশ সোসাইটির ইতিহাসে এবারই প্রথম সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৮ হাজার ৫৫১ জন প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারের মধ্যে ১১ হাজার ১৫৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে বিজয়ী কামাল আহমেদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৪৪ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সোসাইটির বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনুর প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৭৫৪টি। স্বতন্ত্র সভাপতি পদপ্রার্থী ওসমান চৌধুরী পেয়েছেন ৩০৭ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী রুহুল আমিন সিদ্দিকী পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৮৪ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজমের প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ৯৭৩টি। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদপ্রার্থী রিজু মোহাম্মদ তার ভোট গণনা চ্যালেঞ্জ করেন। নির্বাচন কমিশন তার চ্যালেঞ্জ আমলে নিয়ে পুনরায় ভোট গণনা করে রিজুকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এদিকে কার্যকরী পরিষদের অন্যতম সদস্য পদপ্রার্থী মইনুল ইসলাম চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়ে তার ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছেন।
সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা অবধি চলা এই ভোটগ্রহণ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি এবং ভোটারদের আগমন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ‘কামাল-রুহুল’ ও ‘কুনু-আজম’ প্যানেল’র সভাপতি প্রার্থীরা। অবশ্য সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও কিছুটা বিলম্বে দু-একটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অনেকেই আবার নিজেদের নাম খুঁজে পাননি তালিকায়। এসব নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্টি থাকলেও মোটাদাগে নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে চেষ্টার ক্রুটি ছিল না বলেই পর্যবেক্ষণ সাধারণ ভোটার আর বিশ্লেষকদের। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নবনির্বাচিত সভাপতি কামাল আহমদ তার বিজয়ের জন্য কমিউনিটির সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। আর ফলাফল মেনে নিয়ে আজমল হোসেন কুনু নবনির্বাচিত সভাপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে শত মানুষের করতালিতে মুখর মধ্যরাতে এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। এটাকে অনেকেই অনুকরণীয় বলে মন্তব্য করেন। এসবের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন প্রক্রিয়া। এখন সোসাইটি বাংলাদেশি কমিউনিটিকে এগিয়ে নিতে এই সংগঠন কতটা ভূমিকা পালন করবে সেটা নিয়ে সবার মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন আগ্রহ আর প্রত্যাশা।