বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:০২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

কারাগারগুলো যেন মৃত্যু উপত্যকা : রুহুল কবির রিজভী

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

ক্ষমতাসীন সরকার দখলদারিত্ব ধরে রাখতে পুরো দেশকে নরকপুরিতে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সরকারের প্রতিপক্ষদের জীবন রাষ্ট্রীয় নজরদারি-বন্দুকের নলের নীচে বন্দি। দুর্বিনীত দুঃশাসনের করালগ্রাসে দেশবাসী অজানা আশংকায় আতংকে দিনাতিপাত করছে। বাইরের মতো কারাগারগুলোও পরিণত হয়েছে মৃত্যু উপত্যকায়। কারাগারগুলোকে হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো পরিণত করা হয়েছে। দেশের ৬৮টি কারাগার একেকটি টর্চার সেল। যেখানে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু আতংকে থাকেন রাজনৈতিক বন্দিরা।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, গায়েবি ও মিথ্যা মামলায় সুস্থ সবল নেতাকর্মীদের ধরে নির্যাতন করে কারাগারে নিক্ষেপের পর লাশ বানিয়ে বের করা হচ্ছে। কারাগার থেকে বেরুচ্ছে লাশের সারি। আজ গণমাধ্যমের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীসহ চলতি বছরে জেল হেফাজতে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে জেল হেফাজতে ৯৩ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সর্বোচ্চ। গত বছর জেল হেফাজতে মৃত্যু হয় ৬৫ জনের। যাদের বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান ক্র্যাকডাউনের মধ্যে চলতি ডিসেম্বরে আরও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বিএনপি নেতাকর্মী।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী সাম্প্রতিককালে ধরপাকড় চালিয়ে হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মী, সমর্থক দিয়ে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ভরে ফেলেছে। কারাগারে তারা অসুস্থ হচ্ছেন এবং ধুঁকে ধুঁকে সেখানে মরছেন। গত ৭ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রতিবেদনে কারা কর্তৃপক্ষের বয়ানে জানিয়েছে, সারা দেশের কারাগারে বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। কারা অধিদপ্তরের ৫ নভেম্বরের হিসাবে, দেশে ৬৮টি কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম। তাতে রয়েছেন প্রায় ৮৮ হাজার বন্দি।

রিজভী আরও বলেন, তবে এই হিসাবের পরে আরও হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করে লাখো বন্দিতে বিপর্যয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়াও আয়নাঘরে কত শত সহস্র বন্দি আছে তার হিসাব নেই। জাতিসংঘ আটকে রাখার ‘গোপন স্থানের’ তালিকা চাইলেও দেয়নি! সত্যকে মিথ্যায় এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শেখানো বুলি বলানোর জন্য বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে রিমান্ডে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পাশবিক নিপীড়ন-নির্যাতনে কারাগারে বন্দি অসুস্থ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের জীবন বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করা হয় না। নিষ্ঠুর দমনের বিভীষিকায় বাংলাদেশে বিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান চালানোর অংশ হিসেবে কারাগারে বন্দি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কেউ যাতে টু শব্দ করতে না পারে সেজন্য কারাগারের ভিতরে বাহিরে চলছে বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাদের জীবন হরণে করা হচ্ছে নানাবিধ অমানবিক আচরণ।

রিজভী বলেন, কারাবন্দিদের নির্যাতন করা হচ্ছে অবর্ণনীয় পৈশাচিক কায়দায়। চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। অসুস্থ বন্দিকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে কারা হাসপাতালের ফেলে রাখা হচ্ছে। কারাগারের দম বন্ধ করা সেলে দিনরাত লকআপে রেখে গরু-ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য অতি নিম্নমানের খাবার দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মৃত্যুর পর সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়ানোর জন্য গল্প সাজিয়ে মিথ্যাচার করছে। তবে জেল হেফাজতে মৃত্যু ও হত্যার দায় এড়াতে পারবে না সরকার ও কারা কর্মকর্তারা। প্রতিটি মৃত্যু ও হত্যার জন্য তাদেরকে একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, একতরফা পাতানো নির্বাচনী খরচ জোগাতে মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দেওয়অ হয়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। বাজারে চলছে আওয়ামী অলিগার্কদের ডাকাতি। দুই দিন আগে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ১০০ টাকার পেঁয়াজ দুই দিনে প্রায় ৩০০ টাকায় তুলেছে। পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। সরকার সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনী ক্যারিক্যাচার নিয়ে উন্মাদের মতো আচরণ করছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। দেশে পেঁয়াজ-রসুন ও ডাল-চালের দাম নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছে, সরকারের কোনো বিধিবিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সরকার যদি নির্বাচিত হতো বা জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়তো তাহলে দলীয় ব্যবসায়ীদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতো না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সকল সাধারণ মানুষকে জিম্মি বানিয়ে রাখছে। এ নিয়ে তার কিছু আসে যায় না। আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ডে এক নীরব দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের কোটি কোটি মানুষ। আর তাদের এহেন ডাকাতি কর্মকাণ্ডে নতুন করে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গেছে প্রায় ২ কোটি মানুষ।

সারা দেশে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের মোট গ্রেপ্তার ১১০ জনের অধিক নেতাকর্মী, ৫টি মামলায় আসামি ৪৩৬ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং আহত ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। এ ছাড়াও গত ১৫ নভেম্বর তপশিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার ৮৮৮০ জনের অধিক নেতাকর্মী, ৩২৩টি মামলায় মোট আসামি ৩৫৮১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট আহত ১২৯২ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মোট মৃত্যু ৭ জন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451