বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৬:৩২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

বাসের চেয়েও বেশি ভাড়া পদ্মার রেলে

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে
পদ্মা সেতুতে ট্রেন। ছবি : সংগৃহীত

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত নতুন রেলপথ আজ মঙ্গলবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও নভেম্বর থেকে এই রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এ অবস্থায় প্রকল্পে ট্রেনের ভাড়া নিয়ে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা। জানা গেছে, পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার এবং উড়াল পথের জন্য বাড়তি দূরত্ব ধরায় অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের। এতে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ঢাকা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ট্রেনের ভাড়া বাসের চেয়েও বেশি।

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাওয়া-ভাঙ্গা অগ্রাধিকার অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৭.৫০ শতাংশ।

ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। ভাঙ্গা-যশোর সেকশনের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। ঢাকা-যশোর সেকশনে নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। ২০টি স্টেশনের মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে তিনটি। প্রকল্প অনুযায়ী, শত কোচ সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে।

আজ দুপুর পৌনে ১২টায় মাওয়া রেলস্টেশনে হুইসেল বাজিয়ে ও পতাকা নেড়ে ট্রেনযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সফরসঙ্গীদের নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে এক ঘণ্টা যাত্রা শেষে ভাঙ্গা রেলস্টেশনে গিয়ে নামবেন। এর আগে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাপ্রধান, স্থানীয় সংসদ

সদস্য ও চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। জানা গেছে, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা যেতে বাসযাত্রীদের খরচ পড়ে ২৫০ টাকা আর এসিতে ৫০০ টাকার মতো। রেল মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন পর্যন্ত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। এ রেলপথের জন্য ভাড়া নির্ধারণে রেলওয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। এ অনুযায়ী পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনে ভাঙ্গা যেতে যাত্রীদের আন্তঃনগর ট্রেনে (নন-এসি) চেয়ার কোচে ভাড়া গুনতে হতে পারে ৩৫৫ টাকা। এসি চেয়ারে ৬৭৯ টাকা। সব মিলিয়ে বাসের চেয়ে ট্রেনে গুনতে হবে ১০৫-১৭৯ টাকা পর্যন্ত বেশি।

ভাড়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রতিটি গন্তব্যের বাস্তব দূরত্বের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও গেন্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের জন্য বাড়তি দূরত্ব যোগ করেছে রেলওয়ের কমিটি। রেলওয়ে সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব ধরা হয়েছে। একে রেলওয়ে পন্টেজ চার্জের জন্য বাড়তি দূরত্ব বলা হচ্ছে। আর গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ধরা হয়েছে ৫ কিলোমিটার। এ জন্যই ঢাকা থেকে ভাঙ্গার প্রকৃত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার হলেও রেলওয়ে আদায় করতে চায় ৩৫৩ কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া।

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চলাচল করবে, সেগুলোর জন্য এমনই ভাড়ার প্রস্তাব করেছে রেলওয়ের কমিটি। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) নাজমুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের এ কমিটি করা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রস্তাবনায় বলছে, ট্রেনের ভাড়া বাড়ার পেছনে প্রধান দুটি বিষয় উঠে এসেছে। একটি পদ্মা সেতু, অন্যটি গেন্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথ। এই পথের জন্য অতিরিক্ত পথ যোগ করে ভাড়া বেশি ধরা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব ধরে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুকে ১৫৪ কিলোমিটার রেলপথ ধরা হয়েছে। অন্যদিকে গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ধরা হয়েছে ৫ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ কিলোমিটার উড়ালপথকে ১১৫ কিলোমিটার রেলপথ ধরা হয়েছে।

ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী দৈনিক কালবেলাকে বলেন, পদ্মা সেতু ও কেরানীগঞ্জের উড়ালপথের জন্য ভাড়া বেশি হবে। তবে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথ চালু হয়ে গেলে ভাড়া কমে যাবে। ভাঙ্গা পর্যন্ত যাত্রীদের জন্য কোনো ছাড় থাকবে কি না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো ছাড় (ডিসকাউন্ট) রাখা হয়নি। তবে কম রাখার নিয়ম রয়েছে। যাত্রী চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে এসব বিষয় বিবেচনার কথা জানান তিনি। তবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বাসের চেয়ে যেন ট্রেনের ভাড়া বেশি না হয় সে চিন্তাও আমাদের রয়েছে।

পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে যে পাঁচ ট্রেন: প্রাথমিকভাবে শুরুতে পদ্মা সেতু দিয়ে পাঁচটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পাঁচটি ট্রেনের মধ্যে খুলনা-ঢাকা রুটের দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চিত্রা, ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস বর্তমান রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় চলাচল করবে। ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে। প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, রাজশাহী থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেন মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনটিকেও রাজশাহী থেকে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এদিকে খুলনা থেকে গোয়ালন্দ রুটে চলাচলকারী মেইল ট্রেন নকশিকাঁথা এক্সপ্রেসকে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ঢাকা-মাওয়া ৪০ কি.মি. ও মাওয়া-ভাঙ্গা ৪২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করা হবে। এদিকে প্রকল্পের তৃতীয় অংশ ভাঙ্গা-যশোর ৮৭ কি.মি. রেললাইনের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে।

রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, এই রেলপথে আগামী নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে তিনটি ট্রেন চলাচল করতে পারে। পর্যায়ক্রমে ট্রেন চলাচল বাড়বে।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, এ পথে বাণিজ্যিক ট্রেন কবে থেকে চলবে, এর তারিখ ঠিক হয়নি। উদ্বোধনের পর সুবিধাজনক সময়ে তা ঠিক করা হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সরকারের সেতু বিভাগ। এই সেতুর ওপর রেললাইন বসিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে ট্রেন চলাচলের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষকে টোল দিতে হবে। তবে এখনো এই টোলহার নিয়ে একমত হতে পারেনি সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি।

ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, এই পথে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। সেগুলোর ভাড়া অনেক কম হবে। আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া কিছুটা বেশিই। তবে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথ চালু হয়ে গেলে ভাড়া কমে যাবে। লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। আন্তঃনগরে তা ৩৫ টাকা। তবে সেতু ও উড়ালপথ থাকলে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, এখন ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে খুলনা রুটের ট্রেনগুলো চলাচল করে। এই রুটের ট্রেনগুলোকে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু হয়ে চললে ঘুরতে হবে কম। ফলে যশোর ও খুলনার যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে সময় কম লাগবে, ভাড়াও বাড়বে না। তবে মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ বা নড়াইল যেতে হলে বেশি ভাড়া গুনতে হবে। একইভাবে মালপত্র পরিবহনের ভাড়াও বাড়বে। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451