রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড সর্বস্তরের শ্রদ্ধায় রণেশ মৈত্রের শেষকৃত্য সম্পন্ন

অনলাইন ডেক্স
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৭৫ বার পড়া হয়েছে

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার প্রদানের মধ্য দিয়ে ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশবরেণ্য একুশে পদক প্রাপ্ত ও বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট, পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রণেশ মৈত্রের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

উল্লেখ্য গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভোর ৩টা ৪৭ মিনিটে ঢাকা পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রণেশ মৈত্র। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। মৃত্যুর পর তার মরদেহ রাখা হয় হিমঘরে।

 

আজ শুক্রবার ভোরে পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় তার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি। দুপুর সোয়া একটার দিকে রণেশ মৈত্রের মরদেহ পাবনা শহরের বেলতলাস্থ তার নিজ বাসভবনে এসে পৌঁছায়।

এ সময় আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহীরা তাকে এক নজর শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করেন। সেখানে পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ২টার দিকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে।

সেখানে রণেশ মৈত্রকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার প্রদান করেন পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা ও পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জুয়েল।

এরপর একে একে তার মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, জেলা পরিষদ প্রশাসক রেজাউল রহিম লাল, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।

এ ছাড়াও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান, নব নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, বাংলাদেশ জাসদের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম রাঙা, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি, জেলা আওয়ামী লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ।

এরপর বেলা তিনটার দিকে মরদেহ নেওয়া হয় তার হাতে গড়া প্রাণের প্রতিষ্ঠান পাবনা প্রেসক্লাব চত্বরে। সেখানে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য, সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশাজীবী মানুষ তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখেন এবং ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন ও ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান, সাবেক সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন ও রণেশ মৈত্রের ছেলে প্রবীর মৈত্র।

সাড়ে তিনটায় তার মরদেহ নেয়া হয় পাবনা জয়কালী বাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের পর তাকে নেওয়া হয় পাবনা মহাশ্মশানে। সেখানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

প্রসঙ্গত: ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর রাজশাহী জেলার নহাটা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাসস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। রণেশ মৈত্র আজীবন দেশের অসহায়, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৫০ সালে পাবনা জিসিআই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারে পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া ১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে সারাদেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন।

এছাড়া ১৯৬১ সালে পাবনায় পূর্ব পাকিস্থান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্ব-পাকিস্থান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা তাদের পেশার স্বীকৃতি পায়। সেই বছরেই প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন ।

১৯৪৮ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রণেশ মৈত্রের রাজনৈতিক জীবন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জেল খেটেছেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি পাবনা জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিল চল্লিশের কাছাকাছি। কিন্তু তিনি দেশের টানে, প্রিয় বাংলাদেশকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার সংকল্প থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সশস্ত্র সংগ্রামে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451