শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
নাতনিকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় ৮০ বছরের দাদীকে নির্মমভাবে হত্যা, দুই যুবক আটক তালা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ইউএনও দীপা রানী সরকারকে ফুলেল শুভেচ্ছা তালায় শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা, গণপিটুনিতে হামলাকারীর মৃত্যু নোয়াখালীতে লাল সবুজ বাস যাত্রীকে মারধরের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দুই জন গ্রেপ্তার অবৈধ সম্পদ অর্জন সাবেক এমপির এপিএস অচীন কুমার দাসের দুই কোটি টাকার সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ আদালতের চীনের সাথে জোরালো আলোচনা চলছে শ্রীঘ্রই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। কুড়িগ্রামে উপদেষ্টা  সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান” তালায় দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমবায় সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ তালায় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা অধিকাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক কি আসলেই চালক? নাকি অন্য কোন এলাকার ফেরারি সন্ত্রাসী? বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলে ইলিশের সুবাস: এক ট্রলারে ৬৫ মণ মাছ, বিক্রি ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা

নৃ-গোষ্ঠির স্বীকৃতি নেই বাঁশ-বেতের কাজেই মাহ্লীদের অস্তিত্ব

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
  • ৫২৩ বার পড়া হয়েছে

গোলাম সারোয়ার নওগাঁ প্রতিনিধি: মাঝে মধ্যেই বাঁশ কেটে তৈরীকরা সরু ধারালো খিলানের আঘাতে আঙ্গুল কেটে

রক্তাক্ত হয়। তবুও কাজ থামানো যায় না। একদিকে দুখীনি সংসারের ঘানী; অন্যদিকে পূর্বপূরুষের পেশা। এই

দুইয়ে মিলেই প্রতিদিন, প্রতিক্ষন আঙ্গুলের নিপুন বুনোনে বুনতে হয় জীবন সংসারের স্বপ্ন। তৈরী হয় গল্প।

জাতিতে মাহ্লী তাই বাঁশ-বেতের কাজেই নিজের খুঁজে পান নিজেদের অস্তিত্ব।

জাতি সত্ত্বার সাথে পেশার এই নীবির ঘনিষ্টতা ফুটেউঠে সমাজে এখনও টিকে থাকা ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠিগুলোর

মধ্যে মাহ্লীদের নিত্য দিনের কর্মে।

নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার জিওল মাহ্লী পাড়া। এই গ্রামের আদি বাসিন্দা লুকাস মারান্ডি। তাঁর

সহধর্মিনীর নাম বিশুপিনা। দু’জনের কপালেই লেখা পড়া করার সৌভাগ্য জোটেনি বেশীদুর। বিশুপিনা ৮ম আর

লুকাস পঞ্চম শ্রেনীর পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। সেই আক্ষেপ নিয়ে দু:খ কষ্টের দীর্ঘ সংসার জীবন পাড়ি

দিয়ে এখন তারা স্বপ্ন দেখেন দু-মুঠো খেয়ে-পরে দুই ছেলে সন্তানকে পড়া-লেখা শেখানোর।

কথা শুরু করতেই সাদাসিধে স্বভাবে বিশুপিনা আর লুকাস একে একে বলতে লাগলেন তাদের বীনিসুতয় গাঁথা জীবনের

গল্প কথা।

পুবাকাশে সূর্যদোয়ের সাথে মিল রেখেই প্রতিদিন কাজ শুরু করেন। দেড়শো থেকে দুইশো টাকার একেকটি বাঁশ

কিনে এনে দিনভর চলে ডালা, কুলা, চালুনী বানানোর কাজ। বেঁতের অভাব তাই বাঁশেই তৈরী করেন হরেক রকমের

ব্যবহার্য তৈজসপত্র। দিনগুনে আশেপাশের হাটে নিয়ে তৈজসপত্রগুলো বিক্রি করেন লুকাস।

লুকাস জানান, প্লাষ্টিকের আধিক্যে তাদের তৈরী জিনিসপত্র বিক্রিতে এখন ভাটা পড়েছে। দিন হিসেবে হিসাব

করলে প্রতিদিন গড়ে স্বামী-স্ত্রীর আয় মাত্র দুই’শ টাকা। তবে বাড়িতে হাঁস মুরগি পালন করে কোনমতে তাদের

সংসার চলে।

রান্না করা, সংসার গোছনো আর স্বামীসহ ছেলে দুটোকে নিয়ে একসাথে খাবার ছাড়া সারাদিনই ডালি কুলা তৈরী

করেন লুকাসের স্ত্রী বিশুপিনা। বিয়ের আগেও বাবার বাড়িতে করেছেন এই কাজ। তাই আগে থেকেই অনেকটা

নিশ্চিত ছিলেন স্বামীর বাড়িতেও অন্যকিছু করার নেই।

জাতিগোষ্ঠির অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য; নাকি সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তির জন্য তাদের এই কাজ

করা, তা নিয়ে খুব একটা ভাবেন না লুকাস আর বিশুপিনা। কিন্তু এরইমধ্যে আঁচ করতে পেরেছেন মাত্র যে, তারা

কতটা বঞ্চিত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে।

বিশুপিনা আক্ষেপ করে বলেন- ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বার মানুষ হয়েও তাদের মিলছে না ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি হিসেবে

স্বীকৃতি। তাই আগামী দিনে ছেলে দুটোকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেও চাকরি মিলাতে পারবেন কিনা সেই

দু:স্বপ্ন দেখেন ক্ষনে-ক্ষনে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় কষ্ট প্রকাশ করেন লুকাসও।

একই অবস্থা সমতলে বসবাসকারী আরো অন্তত ২৩ টি ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠির মানুষের। কৃষি কাজ করে দেশের

অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন মাহাতো নারীরা। কিন্তু মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত তারা।

নওগাঁল পতœীতলা এলাকার এক মাহাতো নারীর নাম সুখী। নামে কি আসে-যায়। বাস্তব জীবনে তিনি নিদারুন

দু:খ কষ্টের সংসারে হাবুডুবু খাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তার সাথে আরো ৪ মাহাতো নারী মাঠে কৃষি কাজ করেন।

সমাজে অবহেলিত, এই অভিযোগ তাদের প্রত্যেকের। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির তালিকায় নাম না থাকায় স্থানীয়

ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও তাদের দেওয়া হয়না সরকারী কোন সহায়তা।

এসব বিষয়ে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা জানান, ২০১০

সালে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি হিসেবে ২৭ টি জাতি গোষ্ঠিকে স্বীকৃতি দেয় সরকার। কিন্তু বাদ পড়াদের বিষয়ে এখনও

কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে অন্যায় অত্যাচারের শিকার হচ্ছে পাশাপাশি ভূমি রক্ষাসহ অন্যান্য

প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারছেন না এইসকল ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বার মানুষ।

বাদ পড়া ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠিগুলোকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন,

সমতল ভূমিতে বসবাসকারী আরো অন্ত ২৩ টি ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠির মানুষের আছে ভিন্ন ভিন্ন পেশা, নিজস্ব

ভাষা ও সংষ্কৃতি। তাদের খাদ্যভ্যাসেও আছে ভিন্নতা।

তাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে সমাজে তুলনা মূলক ভাবে অনেকটা পিছিয়ে থাকা দরিদ্র পীরিত এই

মানুষগুলো একদিকে যেমন হারাবে তাদের জাতিস্বত্ত্বার অস্তিত্ব; অন্যদিকে অসম্ভব হবে রাষ্ট্র থেকে

দারিদ্রতা দূর করা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451