শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

‘আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না অভাবের কারণেই বোধ হয়’

অনলাইন ডেক্স
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৫৯ বার পড়া হয়েছে

‘আমার বাবা স্থানীয় বাজারে চায়ের দোকানে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার হাটের দিনে বাবুর্চির কাজ করেন। মা প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। নিয়মিত তারাও না ডাকলে মায়ের সাথে মানুষের ক্ষেতে কাজে যেতে হয়। কখনও পেট ভরে খেতে পারি। কখনো বা অর্ধাহার অনাহারে দিন পার করি। তারপরেও বিরত থাকি নাই পড়ালেখা হতে। পরীক্ষার সময় প্রতিবেশীরা চাঁদা তুলে আমাকে একটি নতুন সালোয়ার-কামিজ সেট, কলম,হাডবোডসহ একটি জ্যামিতি বক্স কিনে দিয়েছিল। ভালো ফলাফল বয়ে আনব সে বিশ্বাস আমার ছিল। ছোটবেলা হতে আমার খুব আশা বড় হয়ে আমি ডাক্তার হব। বৃহস্পতিবার রেজাল্ট বের হয়। আমি আমার কাঙ্খিত ফল নিয়ে আসি। কিন্তু দরিদ্রতার কারণেই কি আমার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে। আমি সবার সহযোগিতা চাই। আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই’।

নীল ওড়নার আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিল জান্নাতি আক্তার। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জহাট কলেজপাড়ায় তার বাড়ি। বাবা বিপ্লব আলী গনি ও মা পেয়ারী বেগম। তারা দুই বোন এক ভাই। জান্নাতি সবার বড়। সে মীরগঞ্জহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগ হতে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

জান্নাতির বাবা বিপ্লব আলী গনি জানান, প্রতি হাটবার সেই কাকডাকা ভোরে রান্নার কাজের জন্য হোটেলে আসি। এবং রাত ১০টা পর্যন্ত শ্রম দিয়ে পাই তিন শ টাকা। সেই টাকা দিয়া যা হয় তাই খেয়ে বাঁচি। পড়ালেখা চালাবার মতো হামার কোনো পথ নাই।

মীরগঞ্জহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আইয়ুব আলী ও নন্দকুমার জানান, আমাদের সামনে যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী স্কুল হতে ইতিপূর্বে পাস করে গেছে তাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় জান্নাতি। মেয়েটির যথেষ্ট মেধা আছে। তার প্রতিভা বিকাশে দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা খুব প্রয়োজন।

মীরগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, আমার ওয়ার্ডে জান্নাতিদের বাড়ি। তার বাবা চায়ের দোকানে কাজ করে যা পায় তাই দিয়ে চলে। অতিদরিদ্র বলতে যা বুঝায় তারা সে পর্যায়ে। তবে জান্নাতির পড়ালেখায় সহযোগিতা করলে সে একদিন এলাকার মুখ উজ্জ্বল করবে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঠিক যেন গোবরে পদ্মফুল। এমন ফুলের যত্ন নেওয়া সবার দায়িত্ব। মেয়েটির স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন, তার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান আমাকে জানিয়েছেন। এমন অদম্য-মেধাবীদের পাশে সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451