সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

লড়ে হারার প্রাপ্তিতেই সিরিজ শেষ

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৪১ বার পড়া হয়েছে

টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও ১৯তম ওভার পর্যন্ত টিকে থেকে কোনো ওপেনারের ফিফটি করতে না পারা বিরল ব্যাপারই। বলক্ষয়ী ইনিংস খেলে নাঈম শেখ রাখলেন সে দৃষ্টান্তই। তবে দিনের শেষে দেখা গেল, নাঈম শুধু বাংলাদেশেরই নেই, পাকিস্তানেরও আছে একজন। সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে খেলার সুযোগ না পেতে পেতে সরফরাজ আহমেদের সামর্থ্যেও মরিচা পড়ে গিয়ে থাকবে হয়তো বা। অবশেষে এবার একাদশে ফিরে তাই ব্যাটে-বলেও ঠিকঠাক করতে পারছিলেন না। ১৯তম ওভারে যখন যথেষ্ট উইকেট হাতে থাকা পাকিস্তানের জয়ের নাগাল পাওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা, তখন কিছু বল ডট দিলেন সরফরাজ।

তাতে শেষ ওভারে ১২৫ রানের লক্ষ্যে পাকিস্তানের যখন দরকার ৮ রান, তখনো বাংলাদেশের ৫ উইকেটে হারা ম্যাচটি শ্বাসরুদ্ধকর সমাপ্তির দিকে মোড় নেবে বলে ভাবা যায়নি। তার ওপর নিয়মিত বোলারদের সবারই কোটা শেষ হয়ে যাওয়ায় অনিয়মিত কারো হাতে বল তুলে দিতেই হতো। আর কাউকে না দিয়ে অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ নিজেই তুলে নিলেন বল। ভোজবাজির মতো সব পাল্টে যেতে থাকল এর পরই।

সরফরাজ প্রথম বলটি ডট দিলেন। পরের বলে দিলেন উইকেটও। তৃতীয় বলে লং অন সীমানায় লাফিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে ফিফটির পথে এগোতে থাকা হায়দার আলীকে (৩৮ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫) সাজঘরের পথ দেখান নাজমুল হোসেন শান্তও। মাহমুদের অফস্পিনে দুই বলে দুইয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচে জয়ের সুবর্ণরেখাও দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। ৩ বলে যে তখন দরকার ওই ৮ রানই।

শেষ ৩ বলও উত্থান-পতনেরই। উইকেটে যাওয়া ইফতিখার আহমেদ এসেই মাহমুদের হ্যাটট্রিক ঠেকান তো বটেই, মেরে বসেন বিশাল এক ছক্কাও। পরের বলেই কাজ শেষ করতে চেয়ে আবারও ছক্কা মারতে যান। কিন্তু এবার ব্যাটে-বলের গোলমালে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ইফতিখার ক্যাচ হওয়ায় ম্যাচ জমে ওঠে আরো। ১ বলে ২ রানের সমীকরণ তখন বাংলাদেশের পক্ষেও হেলে আছে অনেকটা। হয় জয়, নয়তো নিদেনপক্ষে ম্যাচ সুপার ওভারে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

ঘটনাবহুল ওভারের শেষ বল নিয়েও কত নাটকীয়তা। স্ট্যান্স নেন মোহাম্মদ নওয়াজ, তাঁকে মাহমুদ সোজা বল করেন আম্পায়ারের অনেক পেছন এবং পপিং ক্রিজের বেশ বাইরে থেকেই। বল পিচ করার মুহূর্তে নওয়াজ সরে দাঁড়ান এবং বল স্টাম্পেও আঘাত হানে। আম্পায়ার ‘ডেড বল’ ঘোষণা করায় বেশ ক্ষুব্ধ দেখায় মাহমুদকেও। স্পিনাররা এত দূর থেকে হরহামেশাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করে থাকেন। করেন পেসাররাও। অবশ্য আম্পায়ারের ঘোষণার পর মাহমুদ চাইলে রিভিউ নিতেই পারতেন, কিন্তু তা নেননি তিনি। শেষ বলটি আবার করার জন্য দৌড় শুরু করে থেমেও যান। তৃতীয়বারে অবশ্য বল করেন, তাতে এক্সট্রা কাভার দিয়ে মারা বাউন্ডারিতে ম্যাচই শেষ করে দেন নওয়াজ।

জয়ের তীর দেখতে পেয়েও তাই শেষ পর্যন্ত হারের হতাশাই বরাদ্দ থাকে বাংলাদেশের জন্য। তাই তিন ম্যাচের এই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পাশাপাশি অব্যাহত থাকে এই সংস্করণে স্বাগতিকদের হারযাত্রাও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকে শুরু করে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন দলের কাছে টানা আট ম্যাচের হার দিয়ে এবার টেস্টের ভুবনে ঢুকে পড়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ অবশ্য এই ম্যাচে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে নেমেছিল। টানা তিন ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নিলেও ব্যর্থতার গল্পটা বদলায়নি। যদিও ম্যাচের সেরা হায়দার আলী পরে বলছিলেন, ‘ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল।’

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় অবশ্য উইকেটের বাউন্স অসমান ছিল না কিছুতেই। বরং ব্যাটিংয়ের জন্য তখন তুলনামূলক সহজ উইকেটেও সংগ্রাম করতে হয়েছে স্বাগতিক দলের ব্যাটারদের। যে উইকেটে দেড় শর কাছাকাছি যাওয়া যেত অবলীলায়, সেখানে ইনিংসে ৫৮টি ডট বল দেয় বাংলাদেশ। এর ২২টি ওপেনার নাঈম শেখের ব্যাটে। দুটো করে ছক্কা ও চারে ৪৭ রান করতে তিনি খেলে ফেলেন ৫০ বল। ৪টি চারে ২৩ বলে ২২ রান করা শামীম হোসেন কিংবা দুই ছক্কায় ২১ বলে ২০ রান করা আফিফ হোসেনদের স্ট্রাইক রেটও পারেনি এক শ ছুঁতে। অফস্পিনার ইফতিখার আহমেদ (৪ ওভারে ১৩ রান) বা পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়ররাও (৪ ওভারে ১৫ রানে ২ উইকেট) এমন কোনো অবিশ্বাস্য বোলিং করেননি যে স্বাগতিক দলের ব্যাটাররা বন্দি হয়ে থেকেছেন। নিজেরাই বরং ডট বল খেলে খেলে এই সংস্করণে দলের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় জাগিয়ে গেছেন ইনিংসজুড়েই।

তবু বোলাররা চেষ্টা করেন সাধ্যমতো। নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ডান হাতের আঙুলে চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়া তাসকিন আহমেদ ফিরে করেন আরো দুই ওভার। অন্যরাও চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি। তা-ও আবার ১২৪ রানের পুঁজি নিয়ে। আগের দুই ম্যাচেও রান ১২৭ ও ১০৮। এমন ব্যাটিংয়ের পর শেষ ম্যাচে লড়াই জমিয়ে তুলতে পারাকেই তাই ধরতে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাপ্তি!

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451