জাকির হোসেন, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাও)থেকে : কেউ তৈরি করছেন চাটাই, কেউ ডালি,
কেউ কুলা আবার কেউ বানাচ্ছেন চালন বা খেলনা- নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। তাদের
ক্লান্তি নেই। বিভিন্ন আকার ও শৈলীতে তৈরি হয় এসব পণ্য। বর্থপালিগাঁও ও তাজপুর
রাস্তার পাশ্বে গ্রামটিতেই বাঁশ শিল্পীদের বসবাস। বাঙালির নিত্যপ্রয়োজনীয় ও
ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত সাংসারিক সামগ্রী তৈরীতে নিপুণ শিল্পী এই গ্রামের অধিকাংশ
বাসিন্দা । যুগ যুগ ধরে এই গ্রামের পরিবারগুলোর নারী-পুরুষ বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরিতে পারদর্শী। বাঁশের সঙ্গে এসব পরিবারের মানুষের নারীর
সম্পর্ক। কিন্তু এই মানুষগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পীরগঞ্জ উপজেলার পল্লী
বর্থপালিগাঁও তাজপুর। বর্থপালিগাঁও তাজপুরে ছোট একটি এলাকা জুড়ে তাদের
বসতি সেখানকার অধিকাংশ লোকজন হাড়ি বা বাশঁমালি জাতি নামে পরিচিত। সে
গ্রামে না আসলে হয়তো কোনোদিন জানা যেত না নতুন বাঁশ কাটলে এক প্রকার
সুগন্ধ পাওয়া যায়। এই কাটা বাঁশের সুগন্ধ ও সোনালী রং পুরো গ্রামের পরিবেশকে
দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। গ্রামের বাড়ির উঠানে কিংবা বাড়ির উপর দিয়ে চলে যাওয়া
মেঠো…. অথবা বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে বাঁশ দিয়ে নানা পণ্য তৈরি করছেন
গ্রামের লোকজন। একাধিক বাসিন্দা জানালেন, সকালে অনেককে বের হতে হয় বাঁশ
সংগ্রহে। এরমধ্যে বাকীদের শুরু হয় বাঁশ কাটা, চাছা, চাটাই বাঁধা, শুকানো ও
বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরির কাজ। সংসারের কাজ শেষ করে নারীরাও বসেন বাঁশের কাজে।
ছেলে-মেয়েরাও সাধ্যমতো সহযোগিতা করে। এভাবেই বয়ে যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা।
বাঁশের কারিগর বলোরাম রায়(৩০) জানালেন, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি এ কাজ করেন।
তবে প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিস পত্র বাজারে পাওয়া যাওয়াতে বাসের জিনিস মানুষ কম
কিনছেন বলে তিনি জানান।
বাড়ির উঠানে বসে কাজ করছিলেন, কারিগর রাধীকা রাণী (সাইকেল রানী) (৩৩) তিনি
জানালেন, আগে সহজে বাঁশ সংগ্রহ করা যেত। এখন বাঁশের সংকটসহ দাম বেড়েছে।
সে কারণে লাভ কমে গেছে। কারিগর ললিয়া দাস (৫৫) জানান, বাশঁ কারিগরদের প্রধান
সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের তৈরি পণ্য বাজারজাতকরণ। বর্তমানে তাদের তৈরি পণ্য
বাজারজাত করতে স্থানীয়ভাবে পাইকার সৃষ্টি হয়েছে। আর তাদের কাছে এই বাঁশের
শিল্পীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এই স্থানীয় পাইকারদের কাছে আগাম টাকা নিয়ে বাঁশ
শিল্পীরা বাঁশ সংগ্রহ করে পণ্য তৈরি করেন। ফলে কম দামে ওই পাইকাররা এসব পণ্য ক্রয় করে
নিয়ে গিয়ে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারসহ নানা স্থানে বিক্রি করেন। যুগের পর যুগ
এই বাঁশ শিল্পীদের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলেও তাদের এই শ্রম ও শৈল্পীক কাজের পুরো
মুনাফাটা লুটে নিচ্ছেন মধ্যসত্ত্বভোগী এই পাইকার গোষ্ঠী।