।।। জাহিদ হাসান সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে: আলোচিত সেই ভারতীয় বুনোহাতিটি উদ্ধারের পর চেতনা ফিরে পেয়েছে ১০ ঘন্টায়। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়রা গ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুরে “ট্যাঙ্কুলাইজারগান” দিয়ে চেতনানাশক ‘মেটাল ডার্ট’ নিক্ষেপের মাধ্যমে অচেতন করে ধরা হয় হাতিটি। ওইদিনই রাত ১২টার দিকে হাতিটি চেতনা ফিরে দাঁড়াতে পেরেছে পরদিন শুক্রবার সকালের দিকে। বর্তমানে কয়ড়া গ্রামে বিলের ধারে গাছের সাথে হাতির পায়ে লোহার শিকল পরানো অবস্থায় বাঁধা রয়েছে। বন বিভাগের লোকজন হাতিটির টানা চিকিৎসাসেবা ও কৃত্রিম খাবার যোগান দিচ্ছেন।
এদিকে হাজার হাজার উৎসুক জনতা হাতি দেখতে ভিড় করায় স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন খান হাতি পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি রেল স্টেশন থেকে কয়রা পর্যন্ত রাস্তায় বহিরাগতদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
জানা গেছে, টানা ৪৩ দিন বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে অবস্থান করে ভারতীয় বুনোহাতিটি। টানা ১২ দিনের অভিযানের পর বৃহস্পতিবার দুপুর ১.৫৮টায় কয়রা এলাকায় কক্সবাজারের ডুলাহাযরা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান হাতিকে লক্ষ্য করে অত্যাধুনিক ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে ‘মেটাল ডার্ট’ (চেতনানাশক ইনজেকশন) নিক্ষেপ করেন। ‘মেটাল ডার্ট’টি ডান পায়ের উরুতে লাগলে হাতিটি দৌড়ে আধা কিলোমিটার দূরে একই গ্রামে একটি পানির ডোবায় পড়ে অচেতন হয়ে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় বন বিভাগের বিশেষজ্ঞ দল প্রায় ৫ মে. টন ওজনের পুরুষ বুনোহাতিটির চার পা ও শুঁড়ে মোটা রশি বেঁধে ডাঙায় তোলেন। পরে পায়ে লোহার শিকল ও মোটা রশি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়। এরআগেও গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে কামরাবাদ ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকায় ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে হাতিকে ‘প্লাস্টিক ডার্ট’র চেতনানাশক ইনজেকশন নিক্ষেপ করেন। কিন্তু হাতির চামড়া ভেদ করে মাংশে প্রবেশ না করে ‘প্লাস্টিক ডার্ট’র সুচটি বেঁকে যায়। পরে উর্দ্ধতন বন বিভাগকে খবর দিয়ে অত্যাধুনিক ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ ও ‘মেটাল ডার্ট’ এনে হাতিটি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারদলের সদস্য ও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সৈয়দ হোসেন জানান, ‘মেটাল ডার্ট’র চেতনানাশক ইনজেকশন প্রয়োগের ফলে অচেতন হওয়ার ২-৩ ঘন্টার মধ্যে সাধারনত বন্যপ্রাণির সংজ্ঞা ফেরে। কিন্তু হাতিটি দীর্ঘদিন পানিতে অবস্থান করে বেশ দুর্বল হয়ে পড়ায় তার চেতনা ফিরতে দেরি হয়েছে। প্রায় ১০ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালের দিকে পুরোপুরি দাঁড়িয়েছে হাতিটি। এ সময় হাতি পায়ের রশিটি ছিড়ে ফেলে।
স্থানীয় ফরেস্টার খলিলুর রহমান জানান, হাতিটিকে কলাগাছ, কলা, আখসহ সবুজ খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্যালাইনসহ টানা চিকিৎসাসেবা চলছে। এতে শারীরিক শক্তি ফিরতে শুরু করেছে তার। তিনি আরো জানান, হাতিটি যেখানে উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে ট্রাক বা ক্রেন আনা যাবে না। তাই হাতিটি প্রায় ১ কিলোমিটার কাঁচারাস্তা হাটিয়ে ডাঙায় নিতে হবে। এ জন্য গাজিপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে দু’টি পোষা মাদীহাতি আনা হবে বুনোহাতিকে বশে আনতে। মাহুত ও পোষা হাতির সাহায্যে বুনোহাতিকে ৫-৭দিন প্রশিক্ষণ দিয়ে বশে আনার পর ক্রেনের সাহায্যে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এদিকে উদ্ধার হওয়া বুনোহাতিটি দেখার জন্য সারাদিন হাজার হাজার উৎসুক জনতা ভিড় করায় উদ্ধারকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় ডাকবাংলোতে জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন খান সাংবাদিকদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় জানান, লোকজনের চাপ থাকায় হাতি স্থানান্তর প্রক্রিয়া ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ জন্য কয়ড়া এলাকায় যাতায়াতের রাস্তায় বহিরাগত লোকজন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। হাতি স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী বলেন, পরিস্থিতি সামলাতে সামলাতে ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ ও দমকল বাহিনী সার্বক্ষনিক কাজ করছে। হাতির নিরাপত্তা ও খাবার সরবরাহে প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করছে।
জানা গেছে, হাতিটি সম্পূর্ণ সুস্থ হলে প্রথমে গাজিপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে রাখা হবে। পরে শেরপুর জেলার গজনী জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হবে বুনোহাতির পালের সঙ্গে মিশে যেতে।
সুত্র জানায়, গত ২৮ জুন উজানের ঢলে ভারতীয় বুনোহাতিটি বাংলাদেশ সীমান্তের কুড়িগ্রামে ঢুকে। এরপর হাতিটি কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ৯ জুলাই পর্যন্ত থেকে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে এসে গাইবান্ধায় ১০-১৩ জুলাই, জামালপুরে ১৪-১৬ জুলাই, বগুড়ায় ১৭-১৮ জুলাই, সিরাজগঞ্জে ১৯-২৭ জুলাই এবং সর্বশেষ ২৮ জুলাই মধ্যরাত থেকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলে এসে বন্যার পানিতে অবস্থান নেয়। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে