এম ইসলাম সুজন, জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী ঃ
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলনঝাড়
গ্রামে গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে সাত মাসের অন্তঃসত্ত¡া গৃহবধূ শেফালী
বেগমকে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেধে নির্যাতনের ঘটনার চাঞ্চল্যকর মামলার আসামীদের
মধ্যে পলাতক ২৪ জন আসামীকে কারাগাড়ে পাঠিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে ২৪ জন
পলাতক আসামী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আমলী আদালত-৩ এ
আতœসর্ম্পনের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল
ম্যাজিষ্ট্রেট মোছাঃ কামরুন নাহার তাদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে জেল
হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী মনির উদ্দিন ঘটনার সত্যতা
নিশ্চিত করে বলেন, ২৪ জন আসামীকে পুলিশ জেল হাজতে প্রেরন করেছে। আসামীদের
মধ্যে ৯ জন নারী ও ১৫ জন পুরুষ রয়েছে।
এদিকে ওই আদালতের জিআরও অনিল কুমার রায় জানান, উক্ত মামলায় মোট ৩১জন আসামী
রয়েছে। এর মধ্যে এই ২৪জনসহ ২৮জন আসামী জেলহাজতে ও একজন আসামী জামিনে ও
দুইজন আসামী পলাতক রয়েছে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, চলতি বছরের ৪ আগষ্ট নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা
চাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলন ঝাড় গ্রামে লালন মিয়ার স্ত্রী শেফালী বেগম
(৩২) নামের ওই গৃহবধুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে দিনভর শারিরিক নির্যাতন করা হয়।
দিনদুপুরে শেফালী বেগম গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মর্মে গরুসহ গাছে বেধে
ডিমলা থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনার দিন বিকালে এসে গরু চুরি
ঘটনা মিথ্যে বুঝতে পেরে শেফালীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহনের
পরামর্শ দেয়।
ঘটনার পরদিন সকালে শেফালীকে তার আতœীয় স্বজনরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগষ্ট সন্তান প্রসবের সময়ের আগে ৯শ
গ্রাম ওজন নিয়ে শেফালী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। কিন্তু নবজাতক শিশুটির
অবস্থা ছিল শংকটাপন্ন। নবজাতক কন্যাটিকে নিবিড় পরিচর্চ্চা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল।
এরপর ৯ আগষ্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবজাতকটি মারা যায়। সেখানে নবজাতকটির
ময়না তদন্ত করা হয়।
কিন্তু এর আগে শেফালীর মামা ভটভটি চালক সহিদুল ইসলাম ৬ আগষ্ট রাতে ডিমলা থানায়
১৯ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে(নম্বর-০৬ ধারা-
১৪৩/১৪১/৩৪২/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৫৪/৫০০/১১৪/৩৪ দঃ বিঃ)। ওই মামলায় পুলিশ তিনজনকে
গ্রেফতার করে আদালতে মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরন করেছি। পরবর্তিতে রংপুর
মেডিকেল হতে ফিরে শেফালী নতুন করে ৩১ জন আসামী করে পূর্বের মামলার সঙ্গে
সংযুক্ত করে ডিমলা থানায় আবেদন করে। সেটি আদালতে প্রেরন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর
করে। ওই মামলায় শেফালীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের হুকুম দাতা হিসাবে
প্রধান আসামী করা হয় গ্রামের নুর আলম শাহ (৫৮)। ২১ আগষ্ট প্রধান আসামী
গ্রেফতার হয় র্যাবের হাতে। পরবর্তিতে জজ আদালতের মাধ্যমে জামিন আবেদনের
শুনানীতে নুর আলম শাহ জামিন পায়। অপর আরেক আসামী ভুল্লু মাহমুদের স্ত্রী মোমেনা
আটক হয়ে জেলহাজতে রয়েছে। আর মঙ্গলবার উক্ত ২৪ আসামী আদালতের মাধ্যমে আটক হয়।
শেফালী বেগম জানান, তাকে নির্যাতনকারীসহ আরো অনেকে জমিজমা সংক্রান্ত এক
বিবাদে তার বাবা মবিয়ার রহমানকে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে
হত্যা করেছিল। মামলায় এলাকার ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ চার্জশীট প্রদান
করেন। মামলাটি বর্তমানে নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
প্রভাবশালীরা ওই মামলা মিমাংসার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। তারা পিতার হত্যা মামলা
আপোষ না করায় প্রতিপক্ষরা স¤প্রতি ডিমলা থানায় শেফালীর ছোটভাই রমজানকে
একটি মিথ্যা মামলায় জরিয়ে দিয়ে এলাকাছাড়া করে।