একজন ডাক্তার হিসেবে বলতে পারি আমাদের দেশে ক্যান্সার সম্পর্কে সাধারন মানুষের মধ্যে খুব ভালো একটা ধারণা নেই । বেশিরভাগই জানেন না ক্যান্সার কি, কেন হয়, লক্ষণ কি কি এবং প্রতিকার বা চিকিৎসা কি । সে জন্যই এই লেখা । বাংলাদেশে লিঙ্গ এবং বয়স ভেদে মুখ ও গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশী, তাই আজ মুখ ও গলার ক্যান্সার নিয়েই আলোচনা করবো । এই আলোচনা বিস্তারিত নয়, শুধুমাত্র পয়েন্ট আকারে নাগরিকদের সচেতেনতা বৃ্দ্ধির জন্য।
মুখ গহ্বর (ওরাল ক্যাভিটি)
গলবিল (ফ্যারিংস)
কন্ঠনালী (ল্যারিংস)
নাক (ন্যাসাল ক্যাভিটি)
নাকের হাড়ের ভিতর বায়ু গহ্বর (প্যারা নাসাল সাইনাস)
অন্যান্য – লালা গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদি।
ধূমপান
এ্যলকোহল সেবন
পান পাতা চিবন
অতি-বেগুনী রশ্মি (UV light) এবং পেশাগত ঝুঁকি
কিছু কিছু ভাইরাস, যেমনঃ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ইপ্সটেইনবার ভাইরাস
অপুষ্টি এবং ভিটামিনের অভাব
গ্যাস্ট্রিক ইসোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্স ডিজিজ (GERD)
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
মুখের ভিতরে সাদা দাগ বা লিউকোপ্লাকিয়া (Leukoplakia)
সাধারণ লক্ষণসমূহ
যে কোনো গুটি বা ঘা, যা সাধারণ চিকিৎসায় সারছে না
গলার ভিতরের কোনো ঘা, যা সাধারণ চিকিৎসায় সারছে না
ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া
গলার স্বর ভেঙ্গে যাওয়া বা পরিবর্তন হওয়া
মুখ-গহবর
মাড়ি, জিহ্বা বা মুখের ভিতরে সাদা বা লাল ক্ষত
চোয়ালের কোনো ফোলা যা দাঁতকে ঠিক রাখেনা বা অস্বস্তিকর
মুখ-গহ্বরে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা ব্যাথা
গলবিল ও কন্ঠনালী
গলবিলের উপরের অংশ: কানে ব্যাথা
গলবিলের সাথে নাকের অংশ : শ্বাসকষ্ট অথবা কথা বলতে অসুবিধা হওয়া, ঘন ঘন মাথা ব্যাথা, কানে ব্যাথা বা বাশিঁর মতো শব্দ শোনা অথবা কম শোনা
কন্ঠনালী : ঢোক গিলতে ব্যাথা পাওয়া অথবা কানে ব্যাথা
নাক ও নাকের হাড়ের ভিতর বায়ু গহ্বর
নাকের হাড়ের ভিতর যে সব বায়ু গহ্বর অবরুদ্ধ হয়ে আছে কিন্তু সাধারন চিকিৎসায় সারছে না
ক্রনিক সাইনাস ইনফেকশন যা এন্টিবায়োটিক দেওয়া সত্তেও সারছে না
নাক হতে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ
ঘন ঘন মাথা ব্যাথা
চোখ ফুলে যাওয়া অথবা চোখের অন্য কোনো সমস্যা
উপরের মাড়ির দাঁতে ব্যাথা
লালা গ্রন্থি
থুতনির নিচে বা চোয়ালের হাড়ের আশে পাশে ফুলে যাওয়া
মুখমন্ডলের মাংশপেশী অবশ বা অসাড় হয়ে যাওয়া
মুখমন্ডল, থুতনি বা ঘাড়ের ব্যাথা যা সারছে না
উপরের যে কোনো লক্ষণ দেখা যাওয়ার পর ২-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হলে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে যাতে প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ নির্ণয় করা যায়
ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ নির্ণয় করা গেলে
সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে (Medical history, physical exam, imaging techniques, including X-rays, CT scans, and MRI) ক্যান্সার নিশ্চিত করতে ক্ষতস্থানের টুকরো বা রস সংগ্রহ করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে (Biopsy) ক্যান্সার নিশ্চিত করা হয়
মুখ ও গলার ক্যান্সারের চিকিৎসায় রয়েছে নানা পদ্ধতি –
অপারেশন
রেডিয়েশন
কেমোথেরাপী
ক্যান্সারের কোন অবস্থায় কোন ধরনের চিকি্ৎসা প্রয়োজন, সেই সিদ্ধান্ত নেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
ফিসিক্যাল থেরাপী
খাদ্যভাসে পরিবর্তন
স্পীচ থেরাপী
ল্যারিংগেকটমির পরে কিভাবে stoma পরিচর্যা করতে হয় তা শেখা
ক্যান্সার হবার ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় গুলো পরিহার করাই ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ
নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষার মাধ্যমে মুখ গহ্বরের ক্যান্সার-পূর্ব ক্ষত (pre-cancerous lesions) সনাক্ত করা সম্ভব
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করা গেলে এর চিকিৎসা করা তুলনামূলক ভাবে সহজ হয় এবং বেচেঁ থাকার সম্ভাবনাও অনেকাংশে বেড়ে যায়
HPV vaccines HPV হতে সৃষ্ট মুখ ও গহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ রাখছে
ধূমপান অথবা অন্য কোনো তামাক পাতা সেবন করবেন না
এ্যলকোহল বা মদ্যপান করবেন না
কখনই একসাথে এ্যলকোহল এবং ধূমপান করবেন না
চিকিৎসার পর পুনরায় মদ্যপান বা ধূমপান শুরু করবেন না
দীর্ঘ সময় সূর্যতাপ পরিহার করূন
মুখ গহ্বর পরিষ্কার রাখুন এবং নিয়মিত ভাবে দাঁতের ডাক্তারকে দেখান
অনিরাপদ যৌন মিলন পরিহার করুন
আপনি কি ধূমপান করেন?
আপনি কি অতিরিক্ত পরিমানে এ্যলকোহল সেবন করেন?
আপনার কি ঢোক গিলতে বা কোনো কিছু চিবাতে কোনো অসুবিধা হয়?
আপনার কি এমন বদভ্যাস আছে যাতে আপনার ঠোট কেটে যায়?
আপনি কি নকল দাঁত ব্যবহার করেন যা পুরোনো বা ঠিকমতো বসেনি?
আপনি কি আপনার মুখের যে কোনো জায়গায় কখনো কোনো ফোলা বা পিন্ড লক্ষ্য করেছেন?
আপনি কি আপনার মুখের ভিতরে কোনো সাদা, লাল বা গাঢ় ক্ষত লক্ষ্য করেছেন?
আপনি কি কখনো আপনার মুখে বা ঘাড়ে বা মুখমন্ডলের যে কোনো জায়গায় ঝিন ঝিন বা অসাড়তা অনুভব করেছেন?
আপনি কি আপনার মুখের ভিতরের কোনো জায়গা হতে বার বার রক্তক্ষরণ লক্ষ্য করেছেন?