গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর কানুমোল্লার বটতলা
মোড়ে রসালো লিচু বিকিকিনিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে এবারের লিচুর মোকাম। কমপক্ষে
১৫টি লিচুর আড়ৎ নিয়ে এ লিচুর মোকাম উত্তর জনপদের অন্যতম বলে খ্যাত। মোকামটি ২০০১
সাল থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে।
দেখা গেছে, প্রতি মৌসুমে নাজিরপুর, সোনাপুর, জুমাইনগর, মামুদপুর, মোল্লাবাজার,
বিন্যাবাড়ী, বিয়াঘাট, কাছিকাটা, ধামাইচসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগাম জাতের
মোজাফ্ধসঢ়;ফর লিচু, বোম্বাই ও চায়না জাতের রসালো লাল রংয়ের লিচু আমদানি হয়। এসব
লিচু বিকিকিনির জন্য সেখানকার মায়ের দোয়া বাণিজ্যালয়, ভাই ভাই ফল ভান্ডার, সততা ফল
ভান্ডার, মুন্নী ফল ভান্ডার, মোল্লা ফল ভান্ডার, বিস্ধসঢ়;মিল্লাহ্ধসঢ়; ফল ভান্ডার, ঈষা ফল ভান্ডার, মক্কা-
মদিনা ফল ভান্ডার, সোনালী ফল ভান্ডার ও হিমু ফল ভান্ডারে প্রচুর লিচু ক্রেতা-বিক্রেতাদের এবং
মানুষের ভীড়।
মায়ের দোয়া ফলভান্ডারের সহোদর মান্নান ও মাহ্ধসঢ়;বুব জানান, উপজেলার একমাত্র নাজিরপুর
ইউনিয়নেই প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমিতে আগাম মোজাফ্ধসঢ়;ফর লিচুর চাষ হয়। বৈশাখের শেষ
সপ্তাহ থেকে এসব বাগানের লিচু ওই মোকামে আসতে শুরু করে। সেখান থেকে অতিদ্রুত
মোকামে পৌঁঁছাতেই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠেছে লিচু মোকামটি। তবে এবারের
বৈরী আবহাওয়ায় লিচুর ফলন কম হওয়ায় লিচু চাষিরা হতাশায় ভুগছেন।
লিচু চাষী আব্দুল আলিম রতন জানান, প্রতি বছরের তুলনায় এবারে লিচুর দাম কম হওয়ায়
তেমন লাভবান হচ্ছেন না। এবারে প্রতি হাজার লিচু ৮০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দরে
বিক্রি করছেন এলাকার লিচু চাষীরা। অথচ গত বছরে এর দাম ছিল প্রতি হাজার ১৫০০ টাকা
থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। যেখানে গড়ে ২০ ট্রাক লিচু মোকামে সরবরাহ হতো, এবার
সেখানে লিচু সরবরাহ হচ্ছে গড়ে ১০ থেকে ১২ ট্রাক করে।
বিস্ধসঢ়;মিল্লাহ্ধসঢ়; ফল ভান্ডারের ফিরোজ আহম্মেদ জানান, প্রতি মৌসুমে এই লিচুর মোকাম
থেকে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার,
সিলেট, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, বগুড়া, নওগাঁ, পঞ্চগড় জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লিচু
সরবরাহ হয়ে থাকে। লিচু মোকাম কর্তৃপক্ষ জানান, বিভিন্ন মোকাম থেকে আসা
ট্রাকে লিচুর ঝুড়ি বোঝাইয়ের কাজ চলে প্রতিদিন বেলা ২ টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।
কুমিল্লার লিচু ব্যবসায়ী বরকত আলী ও হাজীগঞ্জের জাকির হোসেন জানান, ৭/৮ বছর ধরে
তারা এই মোকামে লিচু ব্যবসা করছেন। প্রতি মৌসুমে এখান থেকে তারা দুই থেকে
আড়াই লাখ করে লিচু কিনে থাকেন। এলাকার লিচুর স্বাদ, রং, আকার সবই ভালো। একই ধরনের
তথ্য জানালেন নোয়াখালীর লিচু ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন, ঢাকার খোকন ও সিলেটের মইনুদ্দিন।
তারা আরও জানান, লিচুর গুনাগুন অনুযায়ী তাদের মোকামে তারা শতকরা ১৮০ টাকা থেকে ২০০
টাকা করে বিক্রি করে থাকেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, এবার ৪০৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন
জাতের লিচুর চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর চাষ বেশি হলেও প্রাকৃতিক
দূর্যোগের কারণে ফলন কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চাষীরা। তারপরেও এবারে উৎপাদিত লিচুর
পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন।
যোগাযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ মনির হোসেন বলেন, লিচুর ওই
মোকামটি নিয়ে আগামীতে সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।