রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

প্রতিবন্ধী শিশুকে শিক্ষার বাইরে রাখা যাবে না

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭
  • ২১২ বার পড়া হয়েছে

বাংলার প্রতিদিন ডটকম ,ঢাকা:

প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশতে ও একই স্কুলে পড়াশোনা করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ শিশুদের সহযোগিতায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার পাশাপাশি সবাইকে সহানুভূতিশীল হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

রোববার (০২ এপ্রিল) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দশম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

স্বাভাবিক ছেলে মেয়েদের সঙ্গে অটিস্টিক শিশুদের একই স্কুলে পড়াশোনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, এটা জানি বিশেষায়িত স্কুলেও তাদের যেতে হবে। কিন্তু সেটা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। অন্যদের সাথে স্কুলে গেলে সবার সঙ্গে মিলে-মিশে থাকলে অটিস্টিক শিশুরাও অনেকটা ভালো হয়ে উঠতে পারে।

স্বাভাবিক শিশুরা যাতে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে সেজন্য ছোটবেলা থেকে সেভাবে তৈরি করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, ছোটবেলা থেকে সবাইকে এই শিক্ষাটা দিতে হবে।’

স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের জন্য লিফট, র‌্যাম্প ও বিশেষ টয়লেট রাখার কথা বলেন শেখ হাসিনা। দেশে ১৫ লাখ ১০ হাজার ৮০০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে এবং প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রাখার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের কাজে লাগানোর অনুরোধ করেন। প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের কোনো না কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে তীক্ষ্ম মেধা থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সুপ্ত মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে।

তিনি বলেন, অটিস্টিক শিশুরা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় তারা ভালো ফল করছে। তারা বিদেশ থেকে স্বর্ণপদক নিয়ে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সুস্থদের চেয়েও ভালো করছে।

প্রতিবছর এই শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে তৈরি কার্ডেই নববর্ষ, ঈদ ও অন্যান্য দিনের শুভেচ্ছা পাঠান বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সকলকেই সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে, তাহলেই এই মানুষগুলো সমাজের বোঝা হয়ে না থেকে, সম্পদে পরিণত হবে।

প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের জন্য গঠিত ট্রাস্ট ফান্ডে বিত্তশালীদের আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সফটওয়ার তৈরি করতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানান তিনি। বেসরকারি উদ্যোক্তদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

অটিজম বিষয়ে সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অটিজম বিষয়ে জানতাম না। অনেকে মনে করতো জ্বিনে-ভূতে ধরেছে। যে মা প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক শিশুর জন্ম দিতেন তাকেও হেয় করা হতো। আসলে একটা শিশু নানা রকম সমস্যা নিয়ে জন্ম নিতে পারে। এজন্য তার প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে তার কন্যা পুতুলের অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের সঙ্গে কথা বলে বলে শিখেছি, অটিজম সংকটের গভীরতার দিকগুলো। আর তার ভিত্তিতেই সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের এ বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করে সায়মা। আর তা গৃহীতও হয়। দেশেও একসময় অটিজম নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ছিলো না, যা এখন ধীরে-ধীরে তৈরি হচ্ছে।

প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের রয়েছে অনন্য প্রতিভা। আপনাদের প্রতিভাকে বিকশিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, ডারউইন, নিউটন জীবনের একটা সময় অটিজমের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছেন। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী উইলিয়াম বাটলার ইয়টস, ড্যানিস কবি হ্যানস অ্যান্ডারসন, সুরস্রষ্টা বিথোভেন, মোজার্ট প্রতিবন্ধী ছিলেন। বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস আজীবন প্রতিবন্ধী থেকেও তার আবিষ্কার থেমে থাকেনি।

দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যে অটিজম দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা শেষে মঞ্চ থেকে দর্শক সারিতে এসে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী শিশুদের উপস্থাপনা ও পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. মোজাম্মেল হোসেন, সচিব জিল্লার রহমান প্রমুখ।

কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্যের জন্য অনুষ্ঠানে কয়েকজন প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এসব মানুষের কল্যাণে অবদান রাখা ব্যক্তিদেরও পুরস্কৃত করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451